বেরোবি প্রতিনিধি : ইউজিসি থেকে অর্থ বরাদ্দ হলেও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের  (বেরোবি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৪৪ মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা না দেয়ার অভিযোগে টানা ৫ দিন থেকে আন্দোলন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ। ফলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল এই চার মাসের বেতন পেলেও ২০১৩ সালের মে মাস থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মোট ৪৪ মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত ৫৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর। পরে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে পুনরায় তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হচ্ছে। ৪৪ মাসের এই বকেয়া পরিশোধের দাবিতে মাত্র আড়াই মাস আগে প্রায় ২০ দিনের কর্মবিরতি পালন করেছে কর্মচারী ইউনিয়ন।

বকেয়া বেতনের দাবিতে বর্তমান উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ-এর মেয়াদকালেই এটি ২য় মেয়াদে আন্দোলন তাদের। কর্মচারীদের অভিযোগ, ৩৩৮ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর মধ্যে ২৮০ জন তাদের বকেয়া বেতন-ভাতা পেলেও রহস্যজনক কারনে ৫৮ জন তাদের ৪৪ মাসের বকেয়া বেতন পাননি। একই দাবিতে বারবার আন্দোলন করলেও প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবে ৪৪ মাসের বকেয়া পাচ্ছেন না তারা।

যদিও এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৪৪ মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার জন্য ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের সমাপনী স্থিতির ৭ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা থেকে ৩ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টে সঞ্চিতি রেখেছে ইউজিসি। তবে ইউজিসির অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক রেজাউল করিম হাওলদার স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘---- মামলা ইতিবাচক নিষ্পত্তি সাপেক্ষে প্রদানের নিমিত্তে সঞ্চিতি রাখা হলো।’ অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ইউজিসির অর্থ ও হিসাব বিভাগ বরাবর পুনরায় লিখিত এক আবেদনে বলা হয়েছে, ‘উক্ত ৫৮ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী দুদকের মামলায় এজাহার বা চার্জশীট ভূক্ত আসামী না হওয়ায় তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি অর্থ কমিটির ২২ তম সভায় আলোচ্যসূচি -০৫ এ অন্তর্ভূক্ত করা হয়।-------সেই মোতাবেক গত ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল অর্থ বরাদ্দ চেয়ে বিমকে পত্র প্রেরণ করা হয়।’ এই পত্রের প্রেক্ষিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া পরিষদের নিমিত্তে ৩ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা অনুমোদন দেয় ইউজিসি।

এদিকে, প্রশাসনের কাছে বারবার বকেয়া বেতন চেয়ে আবেদন করার পরও কোন সদুত্তর না পেয়ে উচ্চ আদালতে দ্বারস্থ হন কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। আদালত তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে রুল জারি করে এবং পরবর্তিতে বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে নির্দেশ প্রদান করেন। (রিট নং ১৭৫১৮ অফ ২০১৭ এবং ১৭৫৬৬ অফ ২০১৭) কর্মচারীদের অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ নিয়ে বারবার প্রশাসনের কাছে আবেদন করলে প্রশাসন আদালতের রায় বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপ নেয়নি।

সর্বশেষ চলতি মাসের ২০ তারিখে তিনজন কর্মচারী আদালতের রায়ের সার্টিফাইড কপির ফটোকপিসহ বকেয়া বেতনের আবেদন করলে প্রশাসন তা গ্রহণ করেনি। পরবর্তিতে ডাকযোগে এই আবেদন পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার কাজী আসাদুজ্জমান বলেন, ‘কর্মচারীরা হাতে হাতে একটি আবেদনপত্র জমা দিতে এসেছিল। সেটি আমরা গ্রহণ করিনি। পরে তারা ডাকযোগে পাঠিয়েছে আমরা সেটা পেয়েছি এবং ইতোমধ্যেই কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি।’

(এম/এসপি/জুন ২৭, ২০১৯)