সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ চতুর্থ ধাপের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস কেলেঙ্কারীর ঘটনায় কেন্দুয়া পৌর শহরের টেঙ্গুরী ছয়আনী মহল্লার শিল্পপতি মনিরুজ্জামান ভূঞা শামিমের বাড়ি ঘেরাও করে শুক্রবার দুপুরে ১২ জন নারী সহ প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের ৩৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কয়েকটি ল্যাপটপ, এ্যান্ড্রোয়েড মোবাইল সেট সহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। 

শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের চতুর্থ ধাপের পরীক্ষা নেত্রকোণা জেলা সদরের বিভিন্ন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্র জানায়, প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রটি বিভিন্ন পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকার চুক্তি ও লেনদেন করে কেন্দুয়া পৌর শহরের টেঙ্গুরী ছয়আনি মহল্লার আব্দুল খালেক মাষ্টারের ছেলে হলমার্ক কেলেঙ্কারীর সঙ্গে জড়িত শিল্পপতি শামিমের বাড়ির দু’তলায় বসে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে।

পরে ওই চক্রটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর নির্ণয় করে ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অপর প্রান্তে পাঠানোর কাজ শুরু করে। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে কেন্দুয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান ও অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সকাল পৌনে ১১ টার দিকে শামিমের বাড়ি চতুর্দিক থেকে ঘেরাও করে।

কেন্দুয়া থানা ওসি মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান জানান, কয়েক ঘন্টা অভিযান চালিয়ে অত্যন্ত কৌশল সতকর্তার সঙ্গে শামিমের বাড়ির দু’তলার ঘর থেকে শামিমের ছোটভাই প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত শিক্ষক শহিদুজ্জামান মিন্টু, তার ভগ্নিপতি শিক্ষক আজহারুল ইসলাম ও ভগ্নিপতির ভাই বলাইশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান ছোটন, সৈয়দ আবু সাঈদ, সাইফুল ইসলাম, মোঃ জুয়েল, মোঃ সাকি, মোঃ লুৎফুর, মোঃ শাহরিয়ার ইসলাম, ফারহান জাহিন, মোঃ নিয়াম, মোঃ লোকমান হোসেন, মোঃ নাজমুল ইসলাম সহ ৩৪ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১২ জন নারী সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা রয়েছে। তারা কেন্দুয়া, গৌরিপুর, নেত্রকোণা সদর সহ বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।

ওসি মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে এসেছে ওই বাড়িতে বসেই গত কয়েক বছর ধরে শামিমের ছোটভাই, ভগ্নিপতি ও ভগ্নিপতির ভাই ছোটন সহ একটি শক্তিশালী চক্র বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। শিক্ষক আব্দুল মান্নান ছোটনকে কেন্দুয়া কলেজের পরীক্ষা চলাকালিন সময়ে প্রশ্ন ও উত্তরপত্রের কেলেঙ্কারীর জন্য নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট গত কয়েক মাস আগে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছিলেন।

কেন্দুয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান জানান, এ ঘটনায় প্রচলিত আইনে পুলিশের এস.আই আবুল বাশার বাদী হয়ে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন। মামলাটির অধিকতর তদন্তেই বেড়িয়ে আসবে এই চক্রের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত আছে।

তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে শনিবার সকালে নেত্রকোণা আদালতে পাঠানো হবে।

(এসবি/এসপি/জুন ২৮, ২০১৯)