অমল তালুকদার, বরগুনা : বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত  হত্যা মামলার ২ নং আসামি ফরাজী রিফাতকে  বুধবর সকালে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। 

বুধবার (৩ জুন) সকালে বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ভোরে রিফাত ফরাজীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ব্যাপারে বিস্তারিত পরে জানানো হবে বলে জানান পুলিশ সুপার।

কিন্তু একটি সূত্রথেকে জানাগেছ,বরগুনার তালতলি থেকে রিফাত ফরাজীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যাদের মধ্যে চারজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি ও সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড মঙ্গলবার ভোরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।

ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি, দুটি শটগানের গুলির খোসা এবং তিনটি দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় এএসপি শাজাহানসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হন।

নয়ন বন্ডের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এসব মামলায় নয়ন বন্ডকে অভিযুক্ত করে বিভিন্ন সময় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। এসব মামলার মধ্যে দুটি মাদক মামলা, একটি অস্ত্র মামলা, হত্যাচেষ্টাসহ পাঁচটি মারামারির মামলা রয়েছে।

এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় মামলার এজাহারভুক্ত ১১ নম্বর আসামি অলি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা অভিযুক্ত তানভীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এ ছাড়া নাজমুল হাসান, সাগর ও সাইমুন নামে অপর তিনজন বর্তমানে পুলিশি রিমান্ডে রয়েছেন।

এদিকে মামলার ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয় গ্রেফতার হলেও তিনি বরগুনা জেলা পুলিশের কাছে পৌঁছাননি বল
জানাগেছে।

গতকাল দুপুরে জেলা পুলিশ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন জানান, রিফাত হত্যাকাণ্ডে সর্বশেষ গ্রেফতার হওয়া পাঁচ আসামি সাইমুন, সাগর, অলি, নাজমুল ও তানভীরকে সোমবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়।

প্রসঙ্গত, নিহত রিফাত শরীফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ৬নং বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তার বাবার নাম আ. হালিম দুলাল শরীফ। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন রিফাত।

স্ত্রী মিন্নিকে কলেজে পৌছে দিতে গিয়ে কলেজ থেকে ফেরার পথে মূল ফটকে নয়ন, রিফাত ফরাজীসহ আরও বেশ ক'জন যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালান। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি ভাবে কুপিয়ে মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত করে বীরদর্পে চলে যায় সন্ত্রাসীরা।

স্ত্রী মিন্নি অস্ত্রধারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেও কিছুতেই হামলাকারীদের থামানো যায়নি। তারা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেল রেখে চলে যান।

পরে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে বিকালে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।

নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, রিফাতকে কুপিয়ে হত্যায় অংশ নেয় নয়ন বন্ডসহ ৪-৫ জন সন্ত্রাসী। রিফাতের সঙ্গে মাস দুয়েক আগে পুলিশলাইন সড়কের আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির বিয়ে হয়। বিয়ের পর নয়ন মিন্নিকে তার প্রেমিকা দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিতে থাকেন।

রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, নয়ন প্রতিনিয়ত আমার পুত্রবধূকে নানাভাবে পথেঘাটে উত্ত্যক্ত করত এবং সামাজিক যোগাযো গমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিয়ে আসছিলো। এসকল অপকর্মের প্রতিবাদ করায় আমার ছেলেকে নয়ন তার দলবল নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে।

এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় এপর্যন্ত ৯ আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

(এটি/এসপি/জুলাই ০৩, ২০১৯)