তপন বসু, বরিশাল : পৌরাণিক মতে- রাজা ইন্দ্রদ্যুস্ন ছিলেন ভগবান শ্রী কৃষ্ণের অন্যতম ভক্ত। ভগবানের দর্শণ লাভের জন্য অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু ভগবানের দর্শণ না পেয়ে অনশণ করতঃ প্রাণ বিসর্জনের সংকল্প করেন তিনি। তখন জগন্নাথদেব তাকে স্বপ্নাদেশে বলেন, “তুমি চিন্তা করিও না, সমুদ্রে ‘বাঙ্কী মোহনা’ নামক স্থানে দারুব্রহ্মরূপে ভাসতে ভাসতে আমি তোমার দ্বারে উপস্থিত হব।” 

স্বপ্নাদেশ শুনে রাজা তার সৈন্য সামন্ত নিয়ে ‘বাঙ্কী মোহনা’ স্থানে গেলেন এবং যথাসময়ে শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্মাকৃত শ্রী দারুব্রহ্মকে দেখলেন। সেই কাঠখন্ড (দারুব্রহ্ম)কে রাজা অনেক বলবান লোক, হাতি দিয়ে সমুদ্র থেকে উঠালেন।

একটি কক্ষে ২১ দিন এক ভাস্কর বিগ্রহ তৈরির কাজ করার সময় ওই কক্ষের দ্বার খোলা যাবেনা শর্তে এক ভাস্কর জগন্নাথ দেবের মূর্তি নির্মানে সম্মত হলেন। কিন্তু, কক্ষ থেকে জগন্নাথ দেবের বিগ্রহ নির্মানের কোন আওয়াজ শুনতে না পেয়ে ১৬ দিন পর অধৈর্য হয়ে রুদ্ধ দ্বার খুলে দেখেন সেখানে পরিপুর্ণ কোন ভাস্কর্য নির্মিত হয়নি। পরে আছে শুধু শ্রী শ্রী জগন্নাথ, শ্রী বলরাম এবং সুভদ্রাদেবীর অ-সম্পন্ন বিগ্রহ। যে বিগ্রহই রথযাত্রার রথে আজ আমরা দেখে থাকি।

অন্যদিকে বৃন্দাবন ত্যাগ করে শ্রী কৃষ্ণ দ্বারকার রাজা হলেন। ব্রজবাসীরা কৃষ্ণ দর্শনে পাগল প্রায়। সূর্যগ্রহণ উপলক্ষে শ্রী কৃষ্ণ, বলরাম, সুভদ্রাসহ দ্বারকার অনেকেই কুরুক্ষেত্রে গিয়েছিলেন। সেখানে ব্রজবাসীরাও ছিলেন, তারা ভগবান শ্রী কৃষ্ণকে তার বাল্য লীলার স্থান বৃন্দাবনে নিয়ে আসতে চাইলেন। কৃষ্ণ ভক্তরা তাদের প্রাণের সখা শ্রী কৃষ্ণকে রাজবেশে নয়; ব্রজবেশে দেখে তার সহচর্য্য পেতে উন্মুখ হয়ে পরেন।

ব্রজবাসীগণ, কৃষ্ণ, বলরাম ও সুভদ্রাকে রথে চড়িয়ে ঘোড়ার পরিবর্তে নিজেরাই রথ টেনে বৃন্দাবনে নিয়ে এলেন। এই লীলাকে স্মরণ করে ভক্তরা আজও পুরির জগন্নাথ মন্দির থেকে বৃন্দাবনে রথ টেনে নিয়ে আসেন। ৫শ বছর আগে থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে সেই থেকে রথযাত্রার প্রচলন আজ অবদি ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্যর মধ্যে দিয়ে পালন হয়ে আসছে। আজ বৃহস্পতিবার পালিত হবে রথযাত্রা উৎসব।

(টিবি/এসপি/জুলাই ০৩, ২০১৯)