ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ‘চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সর্বশেষ বাড়িতে গরুর মাংস রান্না হয়েছিল। এরপর আর মাংস কেনার সৌভাগ্য হয়নি! এই ছয়টা মাস শাক-সবজি খেয়ে পার করেছি।’

আক্ষেপ করে আলাপচারিতায় বলছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের ষাটোর্ধ্ব মকলেসুর রহমান। তিনি বলেন, মাংস কেনার মতো রোজগার নেই। দুই ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার পর তারা আলাদা খাচ্ছে। আমাকে এই বয়সেও বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে হয়। এছাড়া গরুর মাংস ৩০০ টাকা কেজি। এত টাকা দিয়ে মাংস কিনলে চাল আর কিনতে পারবো না, তাই গত ছয় মাস ধরে অভাব-অনটনেই সংসার চলছে।

তবে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান এই অভাবী-দুঃস্থ মানুষদের জন্য এই রোজার ঈদে মাংসের ব্যবস্থা করেছে। এক কেজি মাংস পেয়ে তাই স্বভাবতই আনন্দিত বৃদ্ধ মকলেসুর।

খুশীতে তিনি বলেন, ভাবছিলাম কোরবানী ঈদে ফের মাংসের মুখ দেখবো। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে ঈদের আগের দিন এক কেজি মাংস পেলাম। ঈদের দিন পোলাও-মাংস খাবো।

আনন্দ-অশ্রু নিয়ে মকলেসুর বললেন, ‘অনেক দিন পর আমার বাড়িতে মাংস রান্না হবে।’ সোমবার দুপুরে স্থানীয় সংগঠন ‘উত্তরের অভিযাত্রীক’ ঠাকুরগাঁও পৌরসভা ও আশপাশের ১৬০টি হতদরিদ্র পরিবারের হাতে মাংস, পোলাওয়ের চাল, তেল, মসলা, সেমাই ও চিনি বিতরণ করেছে।

এসব ঈদ সামগ্রী পেয়ে মকলেসুরের মতো পৌরসভার গোয়ালপাড়া মহল্লার জুলেখা বেওয়াও আনন্দিত।

জুলেখা বেওয়াও বলেন, ১৫ দিন আগে কয়েকজন ছেলে-মেয়ে আমার বাড়িতে এসে খোঁজ-খবর নেয়। আমার সংসার কিভাবে চলছে, মাসে কয়দিন মাছ-মাংস খাই। তারা আরও অনেক খবরাখবর নেয়। তারা যে এতো ভালো একটা কাজ করবে ভাবতেই পারিনি।

তিনি আরও বলেন, খুব চিন্তায় ছিলাম ঈদের দিন কী খাব? চিন্তা দূর হয়ে গেল। আল্লাহ তাদের ভাল করুক।

অনুষ্ঠানে এসব মানুষের হাতে ঈদ উপহার তুলে দেন ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আক্তারুজ্জামান সাবু।

‘উত্তরের অভিযাত্রিক’ সংগঠনের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

২০১৩ সালে আকস্মিক বন্যায় বাস্তুচ্যুত হয় ঠাকুরগাঁওয়ের টাঙ্গন নদীর তীরের শতাধিক পরিবার। পরে তাদের ঠাঁই হয় ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার মধ্য দিয়েই যাত্রা শুরু ‘উত্তরের অভিযাত্রিক’ সংগঠনের।

(ওএস/এটিআর/ জুলাই ২৯, ২০১৪)