সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌর এলাকার বাদে আঠারোবাড়ি মহল্লার মা হাওয়া (আঃ) কওমী মহিলা মাদ্রাসার দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ওই মাদ্রাসার মোহতামিত (প্রধান শিক্ষক) মাওঃ আবুল খায়ের বেলালী (৩৫) কে গণধোলাই দিয়ে শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে পুলিশের হাতে তুলে দিল জনতা।

পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। মোহ্তামিত আবুল খায়ের বেলালীর বাড়ী সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা থানার সোনাকানি গ্রামে। তার বাবার নাম ইব্রাহিম। পেশাগত কারনে প্রায় এক বছর আগে থেকে মা হাওয়া (আঃ) কওমী মহিলা মাদ্রসার মোহতামিম (প্রধান শিক্ষক) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে ওই মাদ্রাসার একটি কক্ষেই তিনি বসবাস শুরু করেন।

শুক্রবার দুপুরে কেন্দুয়া থানা পুলিশের এস.আই ছামেদুল হক জানান, গত মঙ্গলবার মোহতামিম আবুল খায়ের বেলালী ওই মাদ্রাসার এক ছাত্রীকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তার স্বয়ন কক্ষে ডেকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে শিশু ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর ওই ছাত্রীর হাতে পবিত্র কোরআন শরিফ তুলে দিয়ে কসম কাটান যাতে ধর্ষনের ওই ঘটনাটি আর কেউ না জানতে পারে। জানলে আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে ধর্ষিতা ছাত্রীর কঠিন শাস্তি হবে। এই ভয়ে ধর্ষিতা ছাত্রীটি ধর্ষনের ঘটনাটি এতদিন চাপা রেখেছিল।

৫ জুলাই শুক্রবার সকাল সড়ে আটটার দিকে কথিত লম্পট ওই মোহতামিম তার স্বয়ন কক্ষে ১১ বছরের অন্য এক ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে জোর পূর্বক ধর্ষনের চেষ্ঠা চালায়। এ সময় ওই ছাত্রীর আর্তচিৎকারে মাদ্রাসায় অবস্থানরত তার অপর বোন ও অন্যান্য ছাত্রীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাটি স্থানীয় অভিভাবকদের জানায়। স্থানীয় অভিভাবক ও জনতা দুই ছাত্রীর মুখ থেকে এ ঘটনা শুনে উত্তেজিত হয়ে মোহ্তামিম আবুল খায়ের বেলালীকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

এস.আই. ছামেদুল হক জানান, সকাল ১১টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আবুল খায়ের বেলালীকে আটক করে এবং দুই ছাত্রীকে উদ্ধার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিরাপদ হেফাজতে আনা হয়। এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কেন্দুয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান জানান, ধর্ষন ও ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় মোহ্তামিমকে আটক করা হয়েছে।

নেত্রকোনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া শুক্রবার বিকেলে কেন্দুয়া থানায় এসে নির্যাতিত ওই ছাত্রীদেরকে এবং অভিযুক্ত মোহ্তামিম আবুল খায়ের বেলালীকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় নির্যাতিত ছাত্রীর বাবা ও চাচা বাদী হয়ে কেন্দুয়া থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন।

ছাত্রীদেরকে ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা সংক্রান্ত ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য শনিবার সকালে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে। এদিকে শুক্রবার দুপুরে কেন্দুয়া পৌর শহরে বিক্ষুব্ধ জনতা ধর্ষনকারীর ফাঁসির দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।

(এসবি/এসপি/জুলাই ০৫, ২০১৯)