স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের তার বড় ভাই এরশাদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বলেছেন, মেডিসিন সাপোর্ট নিয়ে বেঁচে আছেন এরশাদ। তবে শঙ্কামুক্ত নন।

বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান চিকিৎসাধীন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে শনিবার রাজধানীর বনানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।

গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, উনি এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। ওনার অবস্থা আশঙ্কাজনক। মেডিসিন সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে। সেই সাপোর্ট চলতে থাকবে। মেডিসিন সাপোর্ট নিয়ে বেঁচে আছেন উনি।

তিনি বলেন, আমি কিছুক্ষণ আগেও আমার ভাই ও দলের চেয়ারম্যানকে দেখে আসলাম। তার নাকে এখন নল দেয়া আছে, কৃত্রিমভাবে ওনার সবকিছু স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, গতকাল তিনি যে অবস্থায় ছিলেন, এখনও সেই অবস্থায় আছেন। গতকাল ও পরশু ওনাকে হেমো ডায়াফিলটারেশন ও হেমো পারফিউশন দেয়া হয়েছে। এই দুটি দিয়ে তার শরীরে যে বাড়তি পানি ছিল, বিষাক্ত পদার্থ ও যে রোগ জীবানু ছিল, তা বের করে দিয়েছেন।

জিএম কাদের বলেন, ‘ডাক্তাররা বলেছেন, তিনি এখনও শঙ্কামুক্ত নন। ওনার অবস্থা আশঙ্কাজনক। যেকোনো সময় যেকোনো দিকে যেতে পারে। তবে তারা আশাবাদী দু’ দিনের চিকিৎসায় তার অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তারা চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। আরও দু-তিনদিনের মধ্যে ওনার অবস্থা আরেকটু উন্নতি হলে, উনি স্বাভাবিক হতে পারেন।’

এরশাদকে রক্ত দিতে হাজার হাজার মানুষ এসেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ওনার (এরশাদ) জন্য বি পজিটিভ রক্ত দরকার, স্ক্রলে এমন খবর প্রচারের পর হাজার হাজার মানুষ রক্ত দিতে এসেছিলেন। ব্লাড ব্যাংকে মানুষ লাইন ধর দাঁড়িয়ে ও বসেছিলেন। তবে রক্তের প্রয়োজন এখন আর নেই। প্রয়োজনে আবার রক্ত নেয়া হবে। যারা এসেছিলেন তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর রেখে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, গতকাল পর্যন্ত ওনাকে ২৮ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে। তার আগে ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন কারণে ৮ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছিল। তবে বর্তমানে সেই অবস্থাটি আর নেই, যারা দিয়েছিল এবং এসেছিল, তাদের ধন্যবাদ।

বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, এখানকার ডাক্তাররা বলেছেন, তারা চিকিৎসা করতে পারছেন। আধুনিক সব সুবিধা তাদের আছে। তবুও আমরা চেষ্টা করেছিলাম সিঙ্গাপুরের ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করার এবং ইমেইলে তাদের সব ফাইল পাঠিয়েছিলাম। তারা বলেছেন, এ অবস্থায় রোগীকে মুভ করানো সঠিক হবে না। শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত আছে।

সিএমএইচের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে কাদের বলেন, গত দুই দিন ধরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ডায়ালাইসিস (হেমো ডায়া ফিল্টারেশন এবং হেমো পারফিউশন) দেয়া হচ্ছে। এতে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় পানি বের করা হচ্ছে এবং ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, চিকিৎসকরা আশাবাদী, অত্যাধুনিক চিকিৎসায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।

জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, কৃত্রিমভাবে পল্লীন্ধুর শ্বাস-প্রশ্বাস চলেছে, তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক হলে কৃত্রিম সাপোর্ট খুলে ফেলা হবে।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবং বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা প্রমুখ।

সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে থাকা এরশাদ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বলে গতকাল জানিয়েছিলেন জি এম কাদের। সেদিন এরশাদের জন্য দোয়াও চান তিনি।

শুক্রবার) জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদে এরশাদের রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হয়।

গত ২২ জুন থেকে ৯০ বছর বয়সী এরশাদ সিএমএইচে চিকিৎসাধীন। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা এরশাদ হিমোগ্লোবিন-স্বল্পতা, ফুসফুসে সংক্রমণ ও কিডনির জটিলতায় ভুগছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।

গত সোমবার অসুস্থ সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদকে দেখতে সিএমএইচে যান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

(ওএস/এসপি/জুলাই ০৬, ২০১৯)