রূপক মুখার্জি, নড়াইল : নড়াইলের লোহাগড়া পৌরসভার লক্ষীপাশা এলাকায় অবসস্থিত আলোচিত মা সার্জিক্যাল ক্লিনিকে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনার একদিন পর অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ওই ক্লিনিক পরিচালনার অভিযোগে শনিবার (৬ জুলাই) সকাল ১১ টায় লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যজিষ্ট্রেট মুকুল কুমার মৈত্র ওই ক্লিনিক পরিদর্শন করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ক্লিনিক মালিক শেখ জাহাঙ্গীর আলমকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে অপারেশন থিয়েটার সিলগালা করে দিয়েছেন।

এ ছাড়া আগামী বৃহস্পতিবারের (১১জুলাই) মধ্যে ওই ক্লিনিকে ভর্তি থাকা রোগীদের অন্যত্র চিকিৎসা সেবা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ সময় লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্েরর আবাসিক মেডিকেল আফিসার মোহামাইন জিসান উপস্থিত ছিলেন

এ দিকে,গত শুক্রবার দুপুরে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনার পর ক্লিনিক মালিক জাহাঙ্গীর রাতেই রোগীর স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে চেকের মাধ্যমে দুই লক্ষ টাকায় ঘটনার রফা করেছে বলে জানা গেছে। ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার বলি বিলকিস বেগমের (২৫) স্বামীসহ স্বজনদের অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই গতকাল শনিবার সকালে উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের করগাতি গ্রামের নিজ বাড়ির পারিবারিক কবর স্থানে তার লাশের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বিলকিসের স্বামী দিনমজুর কামাল হোসেন চেকের বিনিময়ে সৃষ্ট ঘটনার রফা করেছেন বলে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।

অভিযুক্ত ডাক্তার তাজরুল ইসলাম তাজের বাড়ি লোহাগড়ার দিঘলিয়া গ্রামে। তিনি স্বাস্থ্য বিভাগে ওএসডি হিসেবে কর্মরত থাকলেও প্রেষণে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওএমএস কোর্স করছেন বলে জানা গেছে। তিনি ইউরোলজিষ্ট বিষয়ে মেডিকেল পাশ করলেও দীর্ঘদিন ধরে লোহাগড়ার বিভিন্ন ক্লিনিকের চুক্তির মাধ্যমে প্রসূতিদের সিজার কাজ পরিচালনা করে আসছেন। এমন কি, গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) রাতে পৌর শহরের সিকদার ক্লিনিকে সিজার করার সময় অপর এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এর একদিন পর শুক্রবার দুপুরে ওই ডাক্তার সিজার করার সময় প্রসূতি মা বিলকিসের মৃত্যু হয়।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, উপজেলার কোটাকোল ইউপির করগাতী গ্রামের দিনমজুর কামাল হোসেন তার স্ত্রী বিলকিস বেগমের (২৫) প্রসব বেদনা নিয়ে গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টায় সিজার করার জন্য পৌর এলাকার মা সার্জিক্যাল ক্লিনিকে আসেন।এ সময় ওই ক্লিনিকের মালিক ওহিদুজ্জামান জাহাঙ্গীরের সাথে সিজার বাবদ সাড়ে ৭ হাজার টাকা চুক্তির পর দুপুর ২ টার দিকে ডাক্তার তাজরুল ইসলাম তাজ কোন অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার ছাড়াই অদক্ষ নার্সকে সাথে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে সিজারের কাজ শুরু করেন।

প্রসূতির শরীরে ইনজেকশন ও স্যালাইন পুশ করার পর অস্ত্রপাচার শুরু করলে অপারেশন থিয়েটারেই প্রসূতির মৃত্যু ঘটে। অবস্থা বেগতিক দেখে ক্লিনিকের মালিক জাহাঙ্গীর একটি এ্যম্বুলেন্স যোগে রোগীকে নড়াইল সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়ে ক্লিনিক তালা মেরে পালিয়ে যায়। রোগীকে নড়াইল সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রসূতিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় এলাকায় তেলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে।

(আরএম/এসপি/জুলাই ০৬, ২০১৯)