ভোলা প্রতিনিধি : বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ ভোলার দৌলতখানের ১১ জেলের সন্ধ‍ান ১৫ দিনেও মেলেনি। এসব পরিবারে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা আর আতংক। চর খলিফা ও সৈয়দপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের নিখোঁজ জেলে পরিবারের সদস্যরা ঈদের হাসি-আনন্দের পরিবর্তে কান্না আর শোকের সাগরে ভাসছে।

সাগরে নিখোঁজ রাসেলের স্ত্রী বিলকিস বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাংলানিউজকে বলেন, তার আত্মীয়-স্বজন বলতে কেউ নেই শুধু স্বামী ছাড়া। কিন্তু স্বামীকে ছাড়া দেড় বছরের সন্তানকে নিয়ে ভবিষ্যতের চিন্তায় তিনি অস্থির। ঈদের আগেই তার স্বামীর বাড়ি ফেরার কথা ছিলো।

রাসেলের মা রেবু বেগম বলেন, সাগরে যাওয়ার আগে ছেলে বলেছিলো, মা আমাকে দোয়া কইরেন, ঈদের আগেই বাড়ি ফিরবো। কিন্তু সেই ছেলে আর ফিরে এলো না।

নিখোঁজ জেলে সৈয়দপুরের আবু মাঝির স্ত্রী জহুরা বেগম স্বামীর চিন্তায় পাগলপ্রায়, স্বামীর কথা মনে করতেই বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন, কান্না-আহাজারি করছেন।

তিনি বলেন, তিন ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে তার সংসার, মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। ২৭ রোজার সময় বাড়ি আসার কথা ছিলো স্বামীর। ছেলে ও নাতীদের জন্য ঈদের নতুন জাম-কাপড় কিনে দেওয়ার কথা ছিলো।

নিখোঁজ জেলে আবু মাঝির বোন নাসিমা বলেন, বহুবার সাগরে গেছে কখনও এমন দুর্ঘটনা ঘটেনি। এখনো ভাই ফেরার অপেক্ষায় বোন নাসিমা।

দুর্ঘটনা থেকে ফিরে আসা জেলে ফারুক মাঝি বলেন, ‘গত ১২ জুলাই রাত ৮টায় মাছ ধরার জাল ফেলি। হঠাৎ করেই আবহাওয়া খারাপ হয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই কালো মেঘ, শুরু হয় ঘূর্ণিঝড়। উত্তাল সাগরে তাদের নৌকা উল্টে যায়।

ঢেউ ভেসে নিয়ে যায় জেলেদের। ভাসতে থাকা কাঠ, পুলুট ও ট্রলারের অংশ ধরে বেঁচে ফিরেন ৭ জেলে। পরে আশপাশের জেলেরা সকাল ৮টায় তাদের উদ্ধার করে।

সেদিন সাগরে নিখোঁজ জেলেরা হলেন- সৈয়দপুর ইউনিয়নের আইয়ুব আলীর ছেলে রাসেল, একই ইউনিয়নের মৃত বশিরের ছেলে হিরণ, হোসেনের ছেলে আলমগীর, আবু মাঝি, চর খলিয়া ইউনিয়নের শুক্কুর আলীর ছেলে বাবুল, চৌধুরী মোল্লার ছেলে ইসমাইল, ইউনুসের ছেলে ফারুক মাঝি, পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের রুহুল আমিনের ছেলে ফারুক মিস্ত্রী, চরফ্যাশনের কালকিনীর মুকুলের ছেলে সহিজল, ছিদ্দিকের ছেলে অহিদ ও মালেকের ছেলে আলাউদ্দিন।

দুর্ঘটনায় নিখোঁজ জেলে ইসমাইলের পিতা ও ট্রলারমালিক চৌধুরী মোল্লা বলেন, নিখোঁজরা বেঁচে আছেন কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নিখোঁজ জেলেদের প্রত্যেকের পরিবারকে উপজেলা পরিষদ থেকে ৫ হাজার টাকা ও এক বস্তা করে চাল দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সরকারিভাবে তাদের তালিকা তৈরি করে পাঠানো হয়েছে, এখনও বরাদ্দ আসেনি, আসলে তা বিতরণ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, নিখোঁজদের উদ্ধারে কোস্টগার্ডের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তারা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের জোনাল কমান্ডার নজরুল ইসলাম মিনা জানান, কোস্টগার্ডের বেশ কিছু টিম নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে সাগরের সোনার চর ও শিবচর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সন্ধান করছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন জেলের সন্ধান মেলেনি।

গত ১২ জুলাই দৌলতখানের এফবি মা-২ নামের একটি ফিশিং বোট নিয়ে দৌলতখানের ১৮ জেলে সাগরের সোনার চর শিবচরের মাঝামাঝি এলাকায় মাছ শিকারে যান। রাতে ঝড়ের কবলে পড়ে ১১ জেলে নিখোঁজ হয়, বেঁচে ফিরেন ৭ জেলে।

(ওএস/এটিআর/জুলাই ২৯, ২০১৪)