সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌর এলাকার বাদে আঠারোবাড়ি মহল্লার মা হাওয়া (আঃ) কওমী মহিলা মাদ্রসার প্রধান শিক্ষক মাওঃ আবুল খায়ের বেলালী আদালতে ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট ছাত্রীদের ধর্ষণের দায় স্বীকার করেছেন। শনিবার সন্ধ্যায় আবুল খায়ের বেলালীকে নেত্রকোণা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। 

দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে আদালতের বিচারক সোহেল ম্রং ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক ধর্ষণের অভিযোগে আটক আবুল খায়ের বেলালীর জবানবন্দী রেকর্ড করেন। নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অপরাধ মোঃ শাহজাহান মিয়া শনিবার রাতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, দুটি ধর্ষণের মামলায় বেলালীকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। দুটি ধর্ষনের ঘটনাই তিনি তার দায় স্বীকার করেছেন।

গত শুক্রবার ৫ জুলাই সকাল সাড়ে আটটার দিকে কেন্দুয়া পৌর শহরের বাদে আঠারোবাড়ি মহল্লার মা হাওয়া (আঃ) কওমী মহিলা মাদ্রসার মোহ্তামিম (প্রধান শিক্ষক) আবুল খায়ের বেলালী মাদ্রাসার ভেতর তার কক্ষ থেকে কলিংবেল চেপে এক ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন। ওই ছাত্রীর চিৎকারে তার বড় বোন ও অন্যান্য ছাত্রীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রীটিকে বেলালীর কবল থেকে উদ্ধার করে অভিভাবকদের জানায়। এ ঘটনা শুনে অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে মাদ্রাসায় গিয়ে আবুল খায়ের বেলালীকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়ার জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন আবুল খায়ের বেলালী। তার দেয়া তথ্য মতে গত ১ বছরে তিনি আরো ৬ ছাত্রীকে ধর্ষন করেছেন। গত মঙ্গলবার ২ জুলাই ওই মাদ্রাসার আরেক ছাত্রীকে কলিংবেল চেপে তার কক্ষে নিয়ে ধর্ষন করেন। ধর্ষণের পর তার মাথায় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ তুলে দিয়ে কসম কাটান যাতে এই ধর্ষনের ঘটনা অন্য কারো কাছে প্রকাশ না করে। এ ঘটনা প্রকাশ করলে ধর্ষিতা ছাত্রীকে দোযখের আগুনে পুড়তে হবে বলে ভয় দেখান। এই ভয়ে ধর্ষনের ঘটনা ছাত্রীরা প্রকাশ করত না। কিন্তু শুক্রবারের ছাত্রী ধর্ষনের ঘটনা প্রকাশের পর গণপিঠুনির শিকার হয়ে পুলিশের কাছে অকপটে সব স্বীকার করেন। এক বছরে ওই দুই ছাত্রী ছাড়াও আরো ৬ ছাত্রীকে ধর্ষন করার কথা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে প্রকাশ করেন বেলালী।

এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে ধর্ষিতা এক ছাত্রীর বাবা ও অপর ছাত্রীর চাচা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কেন্দুয়া থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কেন্দুয়া থানা পুলিশের এস.আই আব্দুর রাজ্জাক ও আব্দুল আহাদ। শনিবার সন্ধ্যায় আদালতের জিজ্ঞাসাবাদে ছাত্রীদের ধর্ষনের কথা স্বীকার করলে আদালত তার রিমান্ড মঞ্জুর না করে নেত্রকোণা জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

শিক্ষক কর্তৃক একই মাদ্রাসার একাধিক ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছেন কওমী মাদ্রসা শিক্ষা বোর্ডের কেন্দুয়া উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক মাওঃ হারুন অর রশিদ।

রবিবার তিনি তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, কেন্দুয়া উপজেলায় প্রায় ১শ কওমী মাদ্রসা আছে। এই ১শ মাদ্রাসার তালিকার মধ্যে মা হাওয়া (আ) কওমী মহিলা মাদ্রাসা নেই বলে তিনি দাবী করেন। তবে ১শ মাদ্রাসার মধ্যে ৭০টি মাদ্রাসা বোর্ড থেকে রেজিষ্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও দিক নির্দেশনা দিতে আগামী মঙ্গলবার সব মাদ্রাসার মোহ্তামিদের সমন্বয়ে সাউদপাড়া মাদ্রাসায় সভা আহ্বান করেছেন তিনি।

(এসবি/এসপি/জুলাই ০৭, ২০১৯)