স্বপন কুমার কুন্ডু : বাণিজ্যিক ব্যবহারের লক্ষ্যে গ্রীডে যুক্ত বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬৫ তম বার্ষিকী উদযাপন হয়েছে রাশিয়ায়। ১৯৫৪ সালের ২৭ জুন তৎকালিন সোভিয়েত ইউনিয়নে মস্কো শহরের প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবনিন্স্ক শহরে চালু হয় মাত্র ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন অবনিন্স্ক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রায় পাঁচ দশক ধরে সফলভাবে উৎপাদনের পর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০০২ সালের ২৯ এপ্রিল বন্ধ করে দেয়া হয়।

এই উপলক্ষ্যে রুশ রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন- রসাটমের প্রধান নির্বাহী আলেক্সি লিখাচোভ বলেন, “৬৫ বছর ধরে প্রযুক্তির বিবর্তনের ফলে বর্তমানের পারমাণবিক প্রযুক্তি অনেক নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য এবং কার্যকরী। ১৯৫৪ সাল থেকে শুরু করে পারমাণবিক শিল্পে সঞ্চিত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিভিন্ন উচ্চমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বেস্ট প্র্যাকটিসের সংযোজন ঘটেছে।”

তিনি আরও বলেন, “আজকে ২০১৯ সালে দাড়িয়ে আমরা স্টেট- অব- দ্যা- আর্ট ৩+ প্রজন্মের ভিভিইআর ১২০০ পারমাণবিক রিয়্যাক্টর অফার করতে সক্ষম, যেগুলো পূর্বের গুলোর তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ এবং এগুলোর উৎপাদন ক্ষমতাও তুলনামূলকভাবে বেশি।”

অবনিন্স্ক পারমাণবিক বিদ্যুকেন্দ্রের ৬৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে রসাটম বেশ কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এখানে উল্লেখ্য এটি শুধু বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রই নয় একই সঙ্গে এটি রুশ পারমাণবিক শক্তি শিল্পের ভিত্তিও বটে। মস্কোতে অবস্থিত রসাটমের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হয় দিনটির উদ্যাপন। স্থানীয় গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের জন্য এই উপলক্ষ্যে অবনিন্স্ক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। উদ্যাপনের অংশ হিসেবে অবনিন্স্ক শহরে বিশেষ কনসার্ট, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান এবং পরমাণু শক্তি বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্মেলন আয়োজন করা হচ্ছে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বর্তমান বিশ্বে রাশিয়ার স্থান নেতৃস্থানীয়। রাশিয়া এই মুহুর্তে ১২টি দেশে ৩৬টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট নির্মাণ করছে। দেশটির ভান্ডারে রয়েছে সর্বাধুনিক ৩+ প্রজন্মের ভিভিইআর ১২০০ রিয়্যাক্টর। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এর সকল নিরাপত্তা চাহিদা পুরোপুরি পূরণে সক্ষম এই রিয়্যাক্টরটি আজকের দিনে বিশ্বের সর্বাধিক নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত। ভিভিইআর ১২০০ রিয়্যাক্টর ভিত্তিক বিদ্যুৎ ইউনিট বর্তমানে বাংলাদেশ, বেলারুশ, তুরস্ক, ফিনল্যান্ড, হাঙ্গেরী, মিসর এবং উজবেকিস্তানে নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে।

ভিভিইআর প্রযুক্তির বিবর্তনের ফসল এই ভিভিইআর ১২০০ রিয়্যাক্টরটির তার পূর্বসুরি ভিভিইআর ১০০০ রিয়্যাক্টরের তুলনায় বেশকিছু প্যারামিটারে যথেষ্ট উন্নত। যেমন এর উৎপাদন ক্ষমতা ৭ শতাংশ বেশি হলেও পরিচালনাকারী স্টাফের সংখ্যা ৩০-৪০ শতাংশ কম।

বাংলাদেশে পাবনা জেলার রূপপুরে তাদের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। রুশ কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় নির্মিয়মান রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতিটি ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ভিভিইআর ১২০০ পাওয়ার ইউনিট থাকবে। প্রথম ইউনিটটি ২০২৩ এবং দ্বিতীয়টি ২০২৪ সালে উৎপাদনে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অবনিন্স্ক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস :

তৎকালিন সোভিয়েত সরকার ১৯৪৯ সালের ১৬ মে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আদেশ প্রদান করেন। সে সময় পারমাণবিক বোমা তৈরীর কাজে নিয়োজিত বিখ্যাত রুশ বিজ্ঞানী ইগর কুরচাতভকে বিদ্যুৎ প্রকল্পের সুপারভাইজর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। রিয়্যাক্টরের প্রধান ডিজাইনার দায়িত্ব পান নিকোলাই ডলেঝাল। ইগর কুরচাতভের পরামর্শে ইউরেনিয়াম- গ্রাফাইট রিয়্যাক্টর নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় এবং এই জাতিয় রিয়্যাক্টরই পরবর্তীতে অবনিন্স্ক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে স্থাপিত হয়।

(এসকেকে/এসপি/জুলাই ০৭, ২০১৯)