সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : প্রশ্নপত্র ফাঁস মামলায় কেন্দুয়া উপজেলার নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শহিদুজ্জামান মিন্টু ও তার ভগ্নিপতি সহকারী শিক্ষক আজহারুল ইসলামকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বৃহস্পতিবার তাদেরকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের নির্দেশ দেয়া হয়।

পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ তাজুল ইসলাম জানান, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার প্রেরিত পত্রের নির্দেশ মোতাবেক এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওই দুই শিক্ষক সহ এ পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ প্রধান ও ৮ সহকারী সহ ১৩ শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের মাধ্যমে সংগ্রহ করে প্রতারনা ও জালিয়াতি করে উত্তরপত্র সরবরাহ করার অপরাধে কলেজ, উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা সহ ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৬০ জন সহ ৯৭ জনের বিরুদ্ধে কেন্দুয়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

কেন্দুয়া থানা পুলিশের এস.আই আবুল বাশার বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। গত রোববার মামলায় এজাহারভূক্ত ও প্রশ্নপত্র ফাঁস কেলেংকারীর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কেন্দুয়া উপজেলার দিগদাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মজিবুর রহমান, নওপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাওয়া বেগম, লিপা মুনালিসা, বলাইশিমুল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মরিয়ম আক্তার, কেন্দুয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তাহমিনা আক্তার, মদন উপজেলার জঙ্গলটেঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জেবুন্নাহার ডলি, খাগরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক লাকি আক্তার, ও আটপাড়া উপজেলার তেলিগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক স্মৃতি খানমকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

নেত্রকোনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ উবায়দুল্লাহ এক আদেশে রোববার তাদেরকে সাময়িক ভাবে বরখাস্তের নির্দেশ দেন। তিনি জানান, কেন্দুয়া, মদন ও আটপাড়া উপজেলার ৮ জন সহকারী শিক্ষককে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া একই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান ছোটন, পুড়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাকি ও পানগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তুহিন আক্তারকে সাময়িক ভাবে বরখাস্তের নির্দেশ দেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপ-পরিচালক।

এদিকে নেত্রকোনা সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের প্রভাষক আব্দুল মোমেন প্রশ্নপত্র ফাঁস মামলায় এজাহারভূক্ত আসামী। তিনি কলেজে অনুপস্থিত থাকায় তাকে কারণ দর্শাও নোটিশ দেয়া হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ নূরুল বাসেত জানান, বিনা অনুমতিতে কলেজে অনুপস্থিত থাকার জন্য তাকে ৩ দিনের মধ্যে কারণ দর্শাও নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এই চিঠিটি উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মোঃ মনিরুল ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং একই প্রকার চিঠি রেজিষ্ট্রী ডাকযোগে তার স্থায়ী ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

নেত্রকোনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ উবায়দুল্লাহ জানান, মদন উপজেলার বাগজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাবিলা রহমান চৌধুরী লিপা প্রশ্নপত্র ফাঁস ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। তবে তিনি বিদ্যালয় থেকে ডেপুটেশনে এসে নেত্রকোনা পিটিআইএ প্রশিক্ষনরত থাকায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। তার বিষয়টি পিটিআই সুপার বরাবর লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।

গত ২৮ জুন শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নেত্রকোনা জেলা সদরের বিভিন্ন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কারো কারো সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকার চুক্তি ও লেনদেন করে ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে প্রতারনার ও জালিয়াতির মাধ্যমে প্রশ্নপত্রের উত্তর সরবরাহের কাজে জড়িত ছিল একটি শক্তিশালী চক্র। তারা কেন্দুয়া পৌর এলাকার টেঙ্গুরী ছয়আনি মহল্লার শিল্পপতি মনিরুজ্জামান শামিমের বাড়িতে বসে এ কাজ করছিল।

কেন্দুয়া থানা পুলিশ গোপনসূত্রে খবর পেয়ে শিল্পপতি মনিরুজ্জামান ভূঞা শামিমের বাড়ি ঘেড়াও করে। সকাল পৌনে ১১টা থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে স্থানীয় লোকজনদের সঙ্গে নিয়ে ওই দুতালা বাড়ির কক্ষে প্রবেশ করে ৩৪ জনকে গ্রেফতার করে। এসময় পুলিশ ২টি ল্যাপটপ, ১টি ব্যাটারি, ২টি মডেম, ৭টি মোবাইল, ১টি চার্জার ও অন্যান্য গাইড বই সহ ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা মূল্যের মালামাল জব্দ করে। এসময় ৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

(এসবি/এসপি/জুলাই ০৭, ২০১৯)