বেরোবি প্রতিনিধি : বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি আন্দোলন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। আন্দোলনের ১৩ তম দিনে গতকাল মঙ্গলবার সাড়ে আটটা থেকে প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দেন তারা।

যৌক্তিক দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিেেয়ছেন কর্মচারীরা। কর্মচারীদের লাগাতার আন্দলনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমে স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে বিভাগগুলোতে আবারো দীর্ঘমেয়াদী সেশনজটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টগণ।

সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, তিন দফা দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার ১৩ তম দিনের মত আন্দোলন করেছেন কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ নামে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের একটি সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দুটি গেটেই তালা লাগিয়ে আন্দোলন করার ফলে প্রশাসনিক ভবনে ঢুকতেই পারছেন না কর্মকর্তারা। বিভাগগুলোর ভর্তি কার্যক্রম ও ফরম পূরণের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।

যেসব বিভাগের ল্যাব ক্লাস থাকে তারা বেশি বিপাকে পড়েছে, সেমিনার এটনডেন্ট, ল্যাব এ্যাটেনডেন্ট এর অনুপস্থিতির কারণে ল্যাব ক্লাস হচ্ছে না, সেমিনার বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা সেমিনারে ঢুকতেই পারছে না, ওয়াশরুমগুলোেেত একদিকে পানি নেই অপরদিকে অপরিস্কার থাকার কারণে ব্যহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে, কিছু কিছু বিভাগে খাবার পানিও নেই, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে কোন কর্মচারী না থাকায় চলছেনা স্বাভাবিক কার্যক্রম।

কর্মচারীদের আন্দোলনের ফলে চতুর্দিক থেকে ভোগান্তিতে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবারো ভয়ানক সেশনজটের কবলে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘কর্মচারীদের যৌক্তিক দাবী নিয়ে প্রশাসন টালবাহানা শুরু করেছে। এতে যতটুকু ভোগান্তি হচ্ছে তা শিক্ষার্থীদের। চলমান সমস্যা গুলো দ্রুত সমাধান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক সুষ্ঠু পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীগণ।’

জানা যায়, বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ, আপগ্রেডেশন- প্রমোশন ও নীতিমালা প্রণয়নসহ তিন দফা দাবিতে গতমাসের ২৪ তারিখ থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত কর্মচারী পরিষদ। এসব দাবিতে মাত্র আড়াই মাস আগে প্রায় ২০ দিনের কর্মবিরতি পালন করেছে কর্মচারী ইউনিয়ন। উল্লেখিত দাবিতে বর্তমান উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ-এর মেয়াদকালেই এটি ২য় মেয়াদে আন্দোলন কর্মচারীদের।

ড. কলিমউল্লাহ দায়িত্ব নেওয়ার আগের দুই উপাচার্যের আমলে কার্যত ক্যাম্পাস ভিসি-বিরোধী আন্দোলনে প্রকম্পিত ছিল। বিভিন্ন সময় বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়। এসব আন্দোলন সংগ্রামের ফলস্বরুপ শিক্ষার্থীরা পেয়েছেন দীর্ঘদিনের সেশনজট। কর্মচারীদের আন্দোলনের ফলে আবারো সেই সেশনজট হাতছানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, ‘কর্মচারীরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পার্ট। তাদের কোন দাবী-দাওয়া থাকলে তা অবশ্যই শুনতে হবে। একটি আন্দোলন এতদিন থেকে চলছে অথচ প্রশাসন তা সমাধান করতে পারছেনা। এটি অবশ্যই প্রশসনের ব্যর্থতা। এর প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের উপর। শিক্ষকরা ঠিকমত ক্লাস-পরীক্ষা নিতে পারছেন না। ফলে, সেশনজট বাড়তেই পারে।’

এ বিষয়ে কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি নুর আলম জানান, আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবী নিয়ে আন্দোলনে নেমেছি। শিক্ষার্থীদের কোন ধরণের সমস্য হলে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানাবে। প্রশাসন আমাদের দাবী মেনে নিলেই আমরা এই আন্দোলন তুলে নেব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (চলতি দায়িত্ব) আতিউর রহমান বলেন, ‘তাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে তবে কিছু সময়ের প্রয়োজন।

(এম/এসপি/জুলাই ০৯, ২০১৯)