নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর আত্রাই উপজেলার রাণীনগর গ্রামের অসহায় বিধবা শিউলী বেওয়া (৪৭)। বিগত ২০১১ সালে হারিয়েছেন স্বামী মোসলেম প্রামানিককে। ঘরে রয়েছে তিন কন্যা। স্বামীর মৃত্যুর পর শরিকানদের অত্যাচারের কারনে পড়ালেখা বন্ধ করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। স্বামীর দেয়া জায়গার ওপর একটি কুঁড়েঘর তুলতে গেলে শরিকানরা তার ঘর ভেঙ্গে দেয় এবং মারপিট করে। ছোট মেয়ে বর্তমানে গ্রামের রাণীনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। এ ঘটনায় থানায় রবিবার সন্ধ্যায় (৭ জুলাই) একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শিউলী। 

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, স্বামীকে হারানোর পর শ্বশুর হাফিজুল মাস্টার দুই মেয়েসহ নিজেদের ভরন পোষনের জন্য শিউলীকে ৬ বিঘা ধানী জমি ও ১ বিঘা চৈতালী ফসলের জমি ভোগদখলের অধিকার দেন। এরপর থেকে ভালই চলছিল স্বামীহারা শিউলীর সংসার। কিন্তু গত ২০১৮ সালে শ্বশুর মারা গেলে শুরু হয় তার ওপর অত্যাচার। মৃত্যুর দিন থেকেই তার বড় ছেলে হায়দার আলীসহ তার চার বোন শিউলীকে তার শ্বশুরের দেয়া জমিজমা জোরপূর্বক কেড়ে নেয় এবং অংশিদার হিসেবে শিউলীকে মাত্র দুই বিঘা জমি ভোগদখল করতে দেয়। এতে করে তিনি অসহায় জীবন-যাপন করছেন। এছাড়াও দুই বিঘা জমির ওপর নির্মিত ধানের চাতাল, দোকান ঘরসহ অন্যান্য সম্পত্তির নায্য অধিকার থেকে জোরপূর্বক বঞ্চিত করে রেখেছে হায়দার আলীসহ তার পরিবারের সদস্যরা।

এমন কি সম্প্রতি শিউলীর বাড়ির উঠানে টিনের বেড়া দিয়ে একটি ছোট ঘর তৈরি করতে গেলে হায়দার আলীর পরিবারের সদস্যরা সেই ঘর ভেঙ্গে দেয় এবং তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাসহ মারপিট করে। এতে করে তার প্রায় ২০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়। এছাড়াও সব সময় তিনি ও তার মেয়েকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে তারা। এদিকে হায়দার ও তার পরিবারের সদস্যদের ভয়ে গ্রামের কোন মানুষরা তার সঙ্গে মেলামেশা করতে পারে না।

এমনকি বাড়ি ও জমিতে কাজ করার জন্য কোন মানুষকে আসতে দেয়া হয় না। এমতাবস্তায় তার মেয়েকে নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন শিউলী। অনেকটাই একঘরে জীবন-যাপন করছেন। গ্রামের মেম্বার ও মাতবরদের নিয়ে এই বিষয়ে একাধিবার বৈঠক হলেও সুষ্ঠু বিচার পাননি তিনি ঠিক এমনটি তার অভিযোগ।

শিউলী বেওয়া বলেন, তার শ্বশুরের মৃত্যুর পর থেকে তাদের ওপর হায়দার আলী ও তার পরিবারের সদস্য এবং চার ননদদের অত্যাচারের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। নিরাপত্তাহীনতার কারনে দুই মেয়ের পড়ালেখা বন্ধ করে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়েছেন। দুই জামাই তাদের ভয়ে শ্বশুরের বাড়িতে আসতে ভয় পায়। হায়দার আলী প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বলতে পারে না। এমতাবস্থায় তিনি ছোট মেয়েকে নিয়ে প্রতিদিন চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন পার করছেন।

ইতোপূর্বে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ দিলেও তা সমাধান করা হয়নি। তারা তার সন্তানদের ও স্বামী-শ্বশুরের সম্পত্তির নায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার জন্যই এসব কর্মকান্ড করে আসছে। সম্প্রতি স্বামীর দেয়া জায়গার ওপর একটি কুঁড়েঘর তুলতে গেলে তারা আমার ঘর ভেঙ্গে দেয় এবং মারপিট করে। এ ঘটনায় আত্রাই থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

স্থানীয় বিশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, প্রায় এক বছর আগে বিধবা শিউলী বেওয়া এ বিষয়ে পরিষদে লিখিত অভিযোগ দিলে উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হলেও বৈঠকে বিবাদী হায়দার আলী উপস্থিত না হওয়ায় তার সমাধান করা সম্ভব হয়নি।

পরবর্তীতে শিউলী বেওয়াকে আইনের আশ্রয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। আত্রাই থানার ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(বিএম/এসপি/জুলাই ০৯, ২০১৯)