শরীয়তপুর প্রতিনিধি : মাত্র আট দিনের ব্যবধানে শরীয়তপুরের এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ মামলায় আদালত থেকে জামিন দেয়া হয়েছে মামলার একমাত্র আসামী পৌরসভার মেয়র পূত্রকে। আসামীর জামিন প্রাপ্তির পর আতংকিত হয়ে পরেছে ধর্ষিতা মেয়েটির দরিদ্র পরিবার। একজন নারী বিচারক এমন একটি চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলার আসামীকে জামিন দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এলাকার সুশীল সমাজ। জেলা মহিলা সংস্থা ঘোষনা দিয়েছেন বুধবার তারা এ বিষয়ে জেলা শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রদর্শণ করবেন।

গত ২৯ জুন বিকেল শরীয়তপুর জেলার জাজিরা পৌরসভার মেয়র ইউনুছ বেপারী বিবাহিত পূত্র মাসুদ বেপারী তার দু:সম্পর্কের আত্মীয়া হতদরিদ্র প্রান্তিক কৃষকের এক কলেজ পড়–য়া মেয়েকে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে মেয়েটিকে শ্বাস রোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। নিজের বুদ্ধি আর সাহসিকতার জোরে মেয়েটি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। বিষয়টি রাত ১০টার দিকে জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ জানতে পারলে মাসুদ বেপারীকে রাত আড়াইটার দিকে আটক করে। ৩০ জুন ওই মেয়েটি ও তার বাবা দুপুরে জাজিরা থানায় হাজির হয়ে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করে। ১ জুলাই ধর্ষক মাসুদকে আদালতের মাধ্যমে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

৭ জুলাই ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মাসুদের জামিন প্রার্থনা করে তার আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষ মাসুদের জামিনের বিরোধীতা করে ৭ দিনের রিমান্ড দাবী করেন। কিন্তু আদালত মাসুদের জামিন নামঞ্জুর করেন এবং রিমান্ড আবেদটিও না মঞ্জুর করেন। ৮ জুলাই মাসুদের আইনজীবী জেলা ও দায়রা জজ আদলতে পূনরায় মাসুদের জামিন আবেদন করলে একজন নারী বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ) মরিয়ম মুন মুঞ্জুরী ধর্ষক মাসুদকে জামিনে মুক্তির আদেশ প্রদান করেন।

ধর্ষক মাসুদ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর ধর্ষিতা মেয়েটির পরিবার এখন আতংকের মধ্যে রয়েছে। বিভিন্ন প্রভাবশালী লোকদের মাধ্যমে ওই পরিবারকে চাপ দেয়া হচ্ছে মামলা তুলে নিতে। মেয়েটির হতদরিদ্র প্রান্তিক কৃষক পিতা বলেন, আমি আমার মেয়ের সর্বনাশকারীর ফাঁসি চাই। আমার বাড়িতে রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন লোক এসে মামলা তুলে নিতে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। তারা বলছে, মাসুদ জেল থেকে বেড়িয়ে গেছে। এই মামলায় মাসুদের কিছুই হবেনা। ভালো থাকতে চাইলে কিছু টাকা পয়সা নিয়ে মামলা তুলে নাও।

জাজিরা উপজেলার মূলনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন হাওলাদার বলেন, মেয়েটিকে যেদিন ধর্ষণ করা হয়েছিল সেদিনও মেয়েটির বাবা আমার কাছে ফোন করে এর বিচার চেয়েছিল। আমি মেয়েটি ও তার বাবাকে থানায় নিয়ে মামলা করিয়েছিলাম। গতকাল আসামীর জামিন হওয়ার পরও মেয়েটির দরিদ্র বাবা আমাকে ফোন করে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করছিল। আমি এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে এ ধরনের অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।

শরীয়তপুর জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদ সদস্য মানবাধিকার নেত্রী এ্যাডভোকেট রওশন আরা বলেন, একজন নারী বিচারক কী ভাবে এমন একটি চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলার আাসামীকে জামিন প্রদান করেন তা জানার পরে আমি স্তম্ভিত হয়েছি। আমরা আগামীকাল বুধবার ধর্ষকের যথাযথ বিচার দাবী ও পূনরায় গ্রেফতারের দাবী জানিয়ে জেলা শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবো।

শরীয়তপুর জেলা জজ কোটের পিপি এ্যাডভোকেট মির্জা হযরত আলী বলেন, আমরা রাষ্ট্রপক্ষ ৭ তারিখে আসামীর জামিনের বিরোধীতা করেছিলাম এবং তাকে সাত দিনের রিমান্ড আবেদনও করেছিলাম। সেদিন আদালত তার এবং রিমান্ড আবেদন জামিন না মঞ্জুর করেন। পরের দিন জজ কোর্ট থেকে অঅসামী জামিন পেয়েছে।

(কেএনআই/এসপি/জুলাই ০৯, ২০১৯)