রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের ইন্দ্রনগর হুসাইনাবাদ ফাজিল মাদ্রাসার রেজুলেশন খাতা জালিয়াতি করে এক শিক্ষক ও এক কর্মচারিকে চাকুরিচ্যুত করার চেষ্টা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এতে মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামী মাওলানা আকবর আলীর এক ছেলেকে অবৈধভাবে পদায়ন ও অপর ছেলেকে চাকুরি দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ফলে নিয়োগপ্রাপ্ত এক শিক্ষক ও কর্মচারি প্রতিকার চেয়ে মঙ্গলবার দু’দক চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন।

স্থানীয় দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতার ইন্দ্রনগর হুসাইনাবাদ ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে ২০১৭ সালের মে মাস পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন ইন্দ্রনগর গ্রামের রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী মামলাসহ কমপক্ষে ১৫টি নাশকতা মামলার আসামী মাওলানা আকবর আলী। তার ছেলে মামুন বিল্লাহ হত্যাসহ কমপক্ষে ৩৫টি নাশকতা মামলার আসামী। অপর দু’ ছেলে ২০১২ সালে ওই মাদ্রাসার আরবী শিক্ষক হিসেবে যোগদানকারি ২০০৩ সালে কামিল পাস মারুফ বিল্লাহ ও ছোট ছেলে মোহাছিন বিল্লাহের বিরুদ্ধে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগ রয়েছে।

ইন্দ্রনগর হুসাইনাবাদ ফাজিল মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর গঠিত নিয়োগ বোর্ডে উপাধ্যক্ষ পদে শেখ শফিউল্লাহ হাবিবি, মোঃ আবু ইউসুফ ও মোঃ আফফান আলী অংশ নেন। প্রথম স্থান অধিকার করেন শেখ শফিউল্লাহ হাবিবি। একই দিনে পৃথক বোর্ডে ইংরেজি প্রভাষক হিসেবে হযরত আলীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০০১ সালের ২৫ আগষ্ট এমএলএসএস হিসেবে শহীদুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

অভিযোগ, মাওলানা আকবর আলী পরিকল্পিতভাবে পুরাতন রেজুলেশন খাতা গায়েব করে নতুন খাতায় উপাধ্যক্ষ হিসেবে শেখ শফিউল্লাহের পরিবর্তে মারুফ বিল্লাহের নাম লিখে তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আওরঙ্গজেব ও উপজেলা শিক্ষা প্রকল্প অফিসারের সাক্ষর জাল করেছেন।

একইভাবে রেজুলেশনে জিবি কমিটির অধ্যক্ষ আকবর মাওলনা ব্যতীত উপস্থিত নয় সদেস্যের সাক্ষরও জাল করা হয়েছে। কোন প্রার্থীর আত্মীয় বোর্ডের সদস্য থাকার নিয়ম না থাকলেও ২০১২ সালে আরবী শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে মাওলানা আকবর আলী সদস্য হিসেবে উপস্থিত থেকে মারুফ বিল্লাহকে মনোনীত করান।

রেজুলেশন খাতা পরিবর্তণ করে ইংরাজী প্রভাষক হযরত আলী ও এমএলএসএস কর্মী হিসেবে শহীদুল ইসলামকে কর্মচ্যুত করার চেষ্টা চলছে। ১৯৯৫ সালের জনবল কাঠামোর সরকারি বিধি মোতাবেক ২০০৪ সালে উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেতে আট বছরের অভিজ্ঞতা ও কামিল পাশ থাকার নিয়ম থাকলেও ২০১২ সালে আরবী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত মারুফ বিল্লাহকে অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে উপাধ্যক্ষ বানানোর চেষ্টা চলছে।

অভিযোগ, সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আফফান নিজেকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেতে মাওলানা আকবর আলীর সঙ্গে সমঝোতা করে মারুফ বিল্লাহকে উপাধ্যক্ষ বানাতে রেজুলেশন খাতা জালিয়াতি করেন। যদিও ২০১৭ সালের ৪ জুন অধ্যক্ষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলেও নিয়োগ বোর্ড গঠণের আগে বাছাই কমিটি নানাবিধ দূর্ণীতির কারণে মাওলানা আফফানকে বাদ দিলে সভাপতি অনীহা প্রকাশ করায় নিয়োগ বোর্ড গঠিত হয়নি। এরপরও ওই প্রক্রিয়া অব্যহত রয়েছে।

জানতে চাইলে ইন্দ্রনগর হুসাইনাবাদ ফাজিল মাদ্রাসার আরবী প্রভাষক মারুফ বিল্লাহ ও তার ভাই মোহাছিন বিল্লার সঙ্গে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে যথাক্রমে তাদের ০১৮৫৬৮৬০৭৪৮ ও ০১৭১৭-২৮৬৫২৮ নং মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা আকবর আলীর মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

মাদ্রাসার সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আফফান আলী তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মাওলানা আকবর আলী নিজের জমিতে প্রতিষ্ঠান বানিয়েছেন। তার সময়ে পকেট কমিটি থাকলেও এখন স্বচ্ছ পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। তাই রেজুলেন জালিয়াতির মাধ্যমে মারুফ বিল্লাহকে উপাধ্যক্ষ ও শহীদুলের নিয়োগ বাতিল করে মোহাছিন বিল্লাহকে ঢোকানো সম্ভব হবে না।

বিগত ৩ জুলাই আবারো উপাধ্যক্ষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় তাকে অধ্যক্ষ হিসেবে না দেখতে একটি মহল তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

ওই মাদ্রাসার গভর্ণিং বডির সভাপতি এসএম আসাদুর রহমান সেলিম জানান, বিষয়টি নিয়ে আগামি সভায় আলোচনা করা হবে। রেজুলেশন খাতা জালিয়াতি মেনে নেওয়া হবে না।

(আরকে/এসপি/জুলাই ১০, ২০১৯)