জাকির আহমেদ খান : মিঠু ও মোনা দুই বন্ধু। ফাঁদ নিয়ে এসেছে পাখি ধরতে। মিঠু ফাঁদটি নিয়ে এগিয়ে গিয়ে একটি জায়গা দেখে বললো, দেখো মোনা এই জায়গাটা খুব ভালো। আজ আমরা এখানেই ফাঁদ পাতি; কি বলিস?

মোনাও মিঠুর কথায় সায় দিয়ে বললো, হ্যাঁ জায়গাটা ভালো। আশপাশে অনেক পাখিও দেখা যাচ্ছে।

দু’জনে মিলে সুন্দর করে ফাঁদটি পাতলো। একটু দূরে গাছের নিচে গিয়ে বসলো দু’জনে। চারপাশে খুব সুন্দর প্রকৃতি। হাজার হাজার পাখি ঝাঁক বেঁধে এক বিল থেকে অন্য বিলে উড়ে যাচ্ছে। মৃদু বাতাসে ধানের পাতা হেলে-দুলে নাচছে। বিলের পানিতে ছোট ছোট ঢেউয়ের ওপর কাঁচা সোনা রোদ পড়ে বিলের পানি চকচক করছে। একটু দূরে দূরে একটি-দুটি বকপাখি দাঁড়িয়ে আছে। কোনোটা লম্বা পা ফেলে মাছ খুঁজছে।

ওদিকে দুই বন্ধু গাছের নিচে বসে আছে। একঝাঁক পাখি উড়ে এসে আস্তে আস্তে নিচে নামতে নামতে আবার উড়ে অন্যদিকে চলে গেলো। পাখিগুলো দেখে দু’জনেই খুব খুশি হয়েছিল। কিন্তু চলে যাওয়ায় আবার মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। পাখির ঝাঁকটা এখানে নামলে হয়তো দু-একটা পাখি অবশ্যই ফাঁদে আটকা পড়তো; কিন্তু তা আর হলো না।

একটু পরে আবার একঝাঁক পাখি এলো। পাখিগুলো নিচে নামলো। পাখি দেখে দু’জনে খুব খুশি হলো। দু’জনে চুপচাপ বসে রইলো। কারণ তাদের দেখে আবার যদি পাখিগুলো উড়ে যায়!

মোনা আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখছে আরো পাখির ঝাঁক আছে কি-না। হঠাৎ মিঠু আনন্দে লাফিয়ে উঠলো। মোনা আকাশের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে? অমন লাফাচ্ছিস কেনো?

মিঠু মোনার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ফাঁদের দিকে দৌড় দিলো। মোনার আর বোঝার বাকি নেই, সেও এক ভৌঁ দৌড়ে ফাঁদের কাছে গিয়ে হাজির। ওরা দেখলো, একটি পাখি আটকা পড়ে ছুটে যাওয়ার জন্য পাখা ঝাপটাচ্ছে। কিন্তু যতই পাখা ঝাপটাচ্ছে, ততই আরো ফাঁদে আটকে যাচ্ছে। খুশিতে দু’বন্ধুর চোখ ভোরের সূর্যের মতো জ্বলজ্বল করছে। জীবনে প্রথম ফাঁদ পেতে পাখি ধরতে এসে শতভাগ সফল। এ আনন্দ কি বলে বোঝানো যাবে?

দু’জনে মিলে পাখিটি ফাঁদ থেকে বের করলো। মিঠু পাখিটি তার বুকের সঙ্গে জাপটে ধরে রাখলো। মোনা খুব তাড়াতাড়ি ফাঁদটি গুটিয়ে নিলো। বিকাল প্রায় শেষ। গোধূলির রঙে চারদিক ভরে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যে সন্ধ্যা হয়ে আসবে। মিঠু বললো, চল বাড়ি ফিরে যাই।

মোনা মিঠুর কথায় রাজি হয়ে পাখিটি নিয়ে বাড়ির পথে হাঁটতে লাগলো। বাড়ি ফেরার পথে রাজীবের সঙ্গে দেখা। রাজীব বয়সে তাদের বড়। কলেজে পড়ে। খুবই ভালো সে। গাঁয়ের সবাই তাকে খুব ভালোবাসে। রাজীব ভাইও সবাইকে সম্মান করে। ছোটদের আদর-স্নেহ করে।

দূর থেকে রাজীব ভাইকে দেখে কাছে আসতে আসতে মোনা জিজ্ঞেস করলো, কেমন আছেন রাজীব ভাই? আমি ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো?

আমরাও ভালো আছি। হঠাত্ রাজীবের চোখ পড়লো পাখিটির ওপর। সে জিজ্ঞেস করলো, তোমার হাতে ওটা কী পাখি মিঠু? কোথায় পেলে? অসুস্থ বুঝি?

মিঠু বলে, না ভাই, অসুস্থ না। আমরা দু’জনে মিলে বিলের পাড় থেকে ফাঁদ পেতে ধরেছি।

রাজীব ভাই একবার ভালো করে দেখলো পাখিটিকে। এখনো চারদিকে তেমন অন্ধকার নামেনি। মিঠু পাখিটির মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করছে। তোমারে একটি কথা জিজ্ঞেস করি?

মিঠু বললো, কী কথা রাজীব ভাই? রাজীব ভাই বললো, আচ্ছা এখন যদি কেউ তোমাদের মাকে ধরে নিয়ে যায়, তোমাদের কেমন লাগবে?

মিঠু প্রথমেই বলে উঠলো, আমি মাকে ছাড়া একদিনও থাকতে পারবো না।

মোনা বললো, মায়ের হাতে না খেলে আমার পেট-ই ভরে না।

রাজীব ভাই বললো, তবে তোমরা যে এই পাখিটি ধরে আনলে, এই পাখির বাচ্চাদের কী হবে?

মোনা ও মিঠু একে অপরের দিকে তাকালো। হ্যাঁ, তাই তো! এই পাখির বাচ্চাদের কী হবে? আমরা তো কখনো এমন করে ভাবিনি! আমাদের ভুল হয়ে গেছে রাজীব ভাই। এখন আমরা কী করবো?

তোমরা পাখিটি ছেড়ে দাও; রাজীব ভাই বললো।

একটু ভেবে দু’জনেই রাজি হলো।

রাজীব ভাই বললো, তবে আর দেরি কেন? এখনই ছেড়ে দাও!

মিঠু কয়েকবার পাখিটির মাথায় হাত বুলিয়ে ছেড়ে দিলো। পাখিটি পাখা জাপটে দূরে যেতে যেতে গাছের আড়ালে চলে গেল।