মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : শ্রীমঙ্গলের আলোচিত কিশোর সন্ত্রাসী সাগর মিয়া ওরফে স্টেফ সাগর। কতই না হবে সদ্য আলোচনায় আসা উঠতি বয়সী ভয়ঙ্কর এই কিশোরের বয়স? ১৬ কিংবা ১৭ এর বেশি নয়। সম্প্রতি পর্যটন শহর শ্রীমঙ্গলের এ কিশোরই এক আতঙ্কের নাম। তার অপরাধ কর্মকান্ডে শক্তি বাড়াতে নিজ পাড়াসহ আশপাশের এলাকা থেকে সমমনা বখাটে কিশোরদের নিয়ে  গড়ে তুলেছে গ্যাং। এসব কিশোরদের নিয়ে বেশ কয়েকটি ঘটনার জন্ম দিয়ে যৌবনে পা দিয়েই নিজ নামের পূর্বে অপকর্ম করতে করতে শেষ পর্যন্ত স্টেপ সাগর খ্যাতি অর্জন করেছে।

সূত্রে জানা যায় ,স্টেপ সাগর নিজের সাথে থাকা ছুরি জাতীয় দেশীয় অস্ত্র দিয়ে একের পর এক স্টেপিং করে হামলা চালিয়ে কখনো আহত আবার কখনো গুরুতর আহতের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে সে, প্রতিবাদের কোন সুযোগ নেই। তার সঙ্গে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বিরোধ বাঁধলেই শরীরের বিভিন্ন জায়গায় স্টেপিং বসিয়ে অজোরে রক্ত ঝরাচ্ছে। লাগামহীন বেপরোয়া এই কিশোর সন্ত্রাসীর এমন কান্ডে নামের পূর্বে স্টেপ সাগর’ হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। তার বেপরোয়া কর্মকান্ডে ইতি মধ্যে সে স্টেপ সাগর হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে দেশের নামিদামি গণমাধ্যমে।

সর্বশেষ সে শ্রীমঙ্গল শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান জরিপ মিয়ার ছেলে এবং শ্রীমঙ্গল পৌরসভার বর্তমান মেয়র মো. মহসীন মিয়া মধুর ভাতিজা ঢাকার নটরডেম কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী ইমানী হোসেন অন্তরকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তার বাম হাতের সব রগ কেটে দিয়েছে। গুরুতর আহত অন্তর উন্নত চিকিৎসার জন্য এখন ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা দিয়ে লড়াই করছে বলে অন্তরের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে। এর আগেও এমন অনেক ঘটনাই ঘটিয়েছে সাগর। এই কিশোর সন্ত্রাসী সাগর শহরের ৪-৫টি ছেলেকে বিভিন্ন সময়ে হাত, পা, হাঁটু কুপিয়েছে। এদের কেউ কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করে বেঁচে আছে।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পৌর শহরের কলেজ সড়কের তৃষান হেয়ার ফ্যাশন সেলুনের সামনে সাগর চাপাতি দিয়ে কোপায় নটরডেম কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া মেধাবী শিক্ষার্থী অন্তরকে। তাকে প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরে ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। অন্তরের চাচা সুহেল আহমেদ জানান, অন্তরের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। কথা বলতে পারছে না। গত তিনদিন পূর্বে আইসিইউ থেকে তাঁকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন গত সোমবার পর্যন্ত তার শরীরে ৪টি অপারেশন হয়েছে। বাম হাতের তার সব রগ কেটে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, এই তৃষান হেয়ার ফ্যাশন সেলুন ও রেবতী টি স্টলের সামনে বখাটে ছেলেরা সকাল-সন্ধ্যা পর্যন্ত আড্ডা জমায় এবং স্কুল-কলেজে ছুটি হলে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসা-যাওয়ার পথে ছাত্রীদের বিরক্ত করে। তবে এবিষয়ে ভয়ে কেউ মুখ খোলেন না। তারা জানান, উঠতি বয়সের সন্ত্রাসী হিসেবে সাগর একাধিক ঘটনা ঘটিয়েছে। সে কারণে তাকে সবাই এক নামে স্টেপ সাগর বলে চেনে।

পুলিশ জানায়, ২০১৭ সালে ১১ই নভেম্বর একই স্থানে রেবতী স্টলের সামনে সন্ধ্যা ৬টায় কলেজ সড়কের বাসিন্দা সৈয়দ মুর্শেদ সালেহীন নাবিল (২৬) রিকশাযোগে বাসায় ফেরার পথে সাগর তার গতিরোধ করে রামদা দিয়ে কোপ মেরে প্রাণে হত্যা করতে চাইলে তার বাম পা ও হাতের কবজির তালু কেটে ফেলে রক্তাক্ত জখম করে। সে এখনও পঙ্গুত্ব জীবনযাপন করছে। ওই মামলটি বর্তমানে বিচারাধীন। এ ঘটনার কিছুদিন পর পৌর কমিশনার আলকাছ মিয়ার ছেলে বদরুজ্জমান নাইমকে কোর্ট সড়কে আটকিয়ে সাগর একই কায়দায় মারধর করে। একপর্যায়ে তার হাতে থাকা দা দিয়ে কোপ দিলে ওই কোপ মাটিতে পড়ে সে প্রাণে রক্ষা পায়।

এদিকে অন্তরকে গুরুতর আহত করার ঘটনায় তার বড় ভাই মোশাররফ হোসেন রাজ থানায় দেয়া লিখিত এজাহারে উল্লেখ করেন, পূর্ব হতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাগরের সঙ্গে তার ভাইয়ের মনোমালিন্য ছিল। সাগর এলাকার উচ্ছৃঙ্খল, বখাটে ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির ছেলে। এরই প্রেক্ষিতে পুলিশ শ্রীমঙ্গল শহরের আলোচিত কিশোর সন্ত্রাসী স্টেপ সাগরকে (১৭) তার সহযোগী দীপ সাগরসহ (১৮) গত সোমবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে পুলিশ অভিযান চালিয়ে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া থেকে আটক করেছে পুলিশ।

এর পর দুধর্ষ এই সন্ত্রাসীকে তার সহযোগীসহ আটক করে শ্রীমঙ্গলে নিয়ে আসে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের একটি দল।

আটকের পর ঐদিন রাত ৯টার দিকে শহরের বনশ্রীর এলাকার একটি নার্সারীর পরিত্যাক্ত জায়গা থেকে বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। স্টেপ সাগরের বিরুদ্ধে শ্রীমঙ্গল থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানান শ্রীমঙ্গল খানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আব্দুস ছালেক ।

অপর দিকে সূত্রে জানা যায়, উঠতি বয়সী কিশোর সন্ত্রাসী স্টেপ সাগরের কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ শ্রীমঙ্গল শহরের শান্তিপ্রিয় মানুষ। সে শহরের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটিয়ে ত্রাসের সৃষ্টি করেছে ।

সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তাদেরকে পুলিশ মৌলভীবাজারে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে। ‘পুলিশ জানিয়েছে, এই কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভয়ঙ্কর এই কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত, এদের মূল উৎপাটনের জন্য এই চারজনকে ৭দিনের রিমান্ড চেয়ে সার্কেল অফিসের মাধ্যমে আদালতে আবেদন পাঠানো হয়। আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে আদালতে রিমান্ডের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

(একে/এসপি/জুলাই ১০, ২০১৯)