প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : গত ৪ দিন ধরে অবিরাম বর্ষন এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের ৫হাজার মানুষ পানি বন্ধী হয়ে পড়েছে।

এদিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবল স্রােতে শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাঙ্গন। ইতোমধ্যে নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলের ২০টি বাড়ী ও কয়েক বিঘা ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কয়েকদিন আগে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের হংসধর কালিরহাট এলাকায় নদী ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হয়। সে কারণে নদীর পশ্চিমাঞ্চলের তীর এলাকায় নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দেয়। এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পনি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, বৃহস্পতিবার তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় তিস্তার বিপদসীমার ২৭.৬৫ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিস্তা ব্যারেজের সব সুইচ গেট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ কারণে ভাটির দিকে নিম্নাঞ্চল ডুবে যেতে পারে। তিস্তার পানি অব্যাহত বাড়ার কারণে উপজেলার বিদ্যানন্দ, নাজিমখান, ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের দূর্গম চরাঞ্চলের ৩ হাজার বাড়ী প্লাবিত হয়েছে।

এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রবল বর্ষনে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ২হাজার বাড়ী-ঘরসহ ফসলি জমির ভাদাই ধান, শাক সবজি, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তলিয়ে গেছে বেশ কয়েকটি মাছের খামারসহ প্রায় ২শতাধিক ছোট-বড় পুকুর। এদিকে তিস্তা নদীর তীরবর্তী বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চরাঞ্চল চর বিদ্যানন্দ, চর গাবুর হেলান, চর তৈয়ব খাঁ গ্রামে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।

এতে চর বিদ্যানন্দ গ্রামের সাইফুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, রহিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, নুরনবী, মঞ্জু মিয়া, মতি মিয়া, ইসমাইল হোসেন, সবুর মিয়া, ফকরুল ইসলাম, ইউনুছ আলী, হানিফ মিয়া, গাবুর হেলান গ্রামের আঃ সালাম, মন্টু মিয়া, ও ময়না বেওয়ার বাড়ীসহ ২০টি বাড়ী ও ৭/৮ বিঘা ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় গৃহহারা পরিবার গুলো অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।

এছাড়া ভাঙ্গন আতংকে অনেকে বাড়ী-ঘর ভেঙ্গে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুমন কুমার সরকার জানান, ১০জুলাই সকাল ৯ টা থেকে ১১জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ১১জুলাই সকাল ৯টায় এ অঞ্চলের ৪.৯মিলিমিটার বৃষ্টিপাত পরিমাপ করা হয়েছে।

আগামী ১২জুলাই শুক্রবার এর সামান্য পরিবর্তন ঘটতে পারে। আরো ২/৩দিন আবহাওয়া অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ তাইজুল ইসলাম জানান, পানি বন্ধীদের মাঝে এ পর্যন্ত কেউ সহযোগীতার হাত বাড়ায় নাই। ১১জুলাই বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহঃ রাশেদুল হক প্রধান বলেন, প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

রাজারহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহিদ ইকবাল সোহরাওয়ার্দ্দী বাপ্পি বলেন, দফায় দফায় এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম পনি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফুল ইসলাম জানান, ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকলে আজ-কালের মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

(পিএম/এসপি/জুলাই ১১, ২০১৯)