স্টাফ রিপোর্টার : হঠাৎ করেই দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার পর রাজধানীর বাজারগুলোতে শুক্রবার আবার কিছুটা দাম কমেছে। মঙ্গলবারের তুলনায় পেঁয়াজের দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিতে কমেছে ১০ টাকা পর্যন্ত। পেঁয়াজের দাম কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে সবজি, মাংস ও মাছের দাম। এদিকে কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে।

শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, রামপুরা, মালিবাগ হাজীপাড়া, খিলগাঁও অঞ্চলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

কারওয়ানবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মঙ্গলবার ব্যবসায়ীরা ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজের পাল্লা বিক্রি করেন ২২৫ টাকায়। এখন সেই পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা পাল্লা। অর্থাৎ প্রতিকেজির দাম পড়ছে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা।

এদিকে খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, যেসব বাজারে গত বুধবার দেশি পেঁয়াজের কেজি ৫৫ টাকা বিক্রি হচ্ছিল, তা এখন কমে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কিছুটা নিম্নমানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকা কেজি, যা গত বুধবার ছিল ৫০-৫২ টাকা কেজি। তবে কিছু কিছু বাজারে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত বুধবার ছিল ৫৫ টাকা কেজি।

পেঁয়াজের দামের বিষয়ে শান্তিনগরের ব্যবসায়ী মো. খায়রুল বলেন, গত মঙ্গলবার ও বুধবার পেঁয়াজের কেজি ৫৫ টাকা বিক্রি করেছি। আজ তা ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। এ হিসাবে প্রতিকেজিতে পেঁয়াজের দাম কমেছে ৫ টাকা। পাইকারিতে দাম কমার কারণে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারছি।

মালিবাগ হাজিপাড়ার ব্যবসায়ী ইদ্রিস বলেন, পাইকারিতে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরাও কিছুদিন বাড়তি দামে বিক্রি করেছি। ৩০ টাকার পেঁয়াজের দাম এক লাফে বেড়ে ৫০ টাকা হয়েছিল। আজ তা আবার কিছুটা কমেছে। গত বুধবার যে পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা বিক্রি করেছি, তা আজ ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।

এদিকে সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখন সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শসা, টমেটো ও গাজর। বাজার ভেদে শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পাঁকা টমেটো ও গাজর। সপ্তাহের ব্যবধানে শসা ও গাজরের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও টমেটোর দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে কোনো বাজারেই টমেটোর কেজি একশ টাকার নিচে বিক্রি হয়নি।

শসা, টমেটো ও গাজরের মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি। গত সপ্তাহের মতো করলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। কাকরোল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। ঢেঁড়সের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে ঝিঙ্গা, উসি ও ধুন্দুল।

এছাড়া পটল বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি, বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, পেঁপের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বরবটির কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কচুর লতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজিগুলোর দামও অপরিবর্তিত রয়েছে।

সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী মো. আলম বলেন, আজ নতুন করে কোনো সবজির দাম বাড়েনি। গত সপ্তাহের দামেই বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে। তবে যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে যে কোনো সময় সবজির দাম বেড়ে যেতে পারে।

বেশিরভাগ সবজির দাম অপরিবর্তিত থাকলেও দাম বেড়েছে কাঁচামরিচের। কাঁচামরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫ থেকে ২০ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

কাঁচামরিচের দামের বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী ইদ্রিস বলেন, গত সপ্তাহে এক পোয়া কাঁচামরিচ বিক্রি করেছি ২০ টাকায়। সেই মরিচের পোয়া এখন ৩০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকারিতে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমাদের এমন বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

এই ব্যবসায়ী বলেন, কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হয়েই যাচ্ছে। এতে মরিচের ক্ষতি হচ্ছে। বৃদ্ধির পানিতে মরিচ যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি মরিচ গাছও পঁচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে কাঁচামরিচের দাম সামনে আরও বাড়তে পারে।

এদিকে মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির আগের সপ্তাহের মতো ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে লাল লেয়ার মুরগি। গরুর মাংস বাজার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি।

আর কয়েক মাস ধরে চড়া দামে বিক্রি হওয়া মাছ এখনও সাধারণ ক্রেতাদের ভোগাচ্ছে। খুচরা বাজারে তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পাঙাশ মাছ। রুই মাছ ২৮০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, টেংরা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং চিতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি।

মাছের দামের বিষয়ে খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা ইসরাফিল আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই মাছের দাম খুব চড়া। বৃষ্টি না হওয়ায় মাছের এমন দাম বলে এর আগে জানিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এখন বৃষ্টি হলেও মাছের দাম কমেনি। আগের মতোই চড়া দামে মাছে বিক্রি হচ্ছে। অবস্থা এমন দাড়িয়েছে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য নিয়মিত মাছ খাওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে।

(ওএস/এসপি/জুলাই ১২, ২০১৯)