স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর মশা যদি মারতে না পারেন, ডেঙ্গুরোগ যদি প্রতিরোধ করতে না পারেন তাহলে দুই মেয়রের পদে থাকার কোনো অধিকার নেই। তাদের রাজধানী ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত। শুক্রবার ‘গৌরব ৭১’ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এসব বলেন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘নাগরিকদের জীবন মরণের প্রশ্ন নিয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছি। কারণ ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ডেঙ্গুকে কেন্দ্র করে। প্রত্যেকটি পরিবারে আতঙ্কের নাম ডেঙ্গু। এমনই পরিস্থিতিতে নগরের কর্তা ব্যক্তিদের ভূমিকা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। তাদের উদাসীনতা, দায়িত্বহীনতামূলক কথাবার্তা মানুষকে আরও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি আমার ঘরের পরিবেশ ঠিক রাখলেই কি ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পাব? আপনি কি নর্দমাটি পরিষ্কার করেছেন? দু’বছর আগে শুনেছি মশা মারতে শুধু ওষুধ দিয়ে হবে না। নর্দমাতে নাকি আপনারা একটি বিশেষ বিদেশি মাছ ছেড়েছেন। সেই মাছ নাকি মশা খেয়ে ফেলবে, মশার ডিম খেয়ে ফেলবে। এবার কই, এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দিচ্ছেন না কেন? কোথায় আপনাদের সেই গাপটি মাছ। সেটি কি নর্দমায় ছেড়েছেন নাকি শুধু কাগজে কলমেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো সিটি কর্পোরেশন এ ব্যাপারে ব্রিফিং করেনি। মশা মারার ব্যাপারে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন তা নগরবাসীকে জানান। কার্যকরী পদক্ষেপ নিন। কোন দেশে কী ধরনের মশা মারা ওষুধ পাওয়া যায় সেটা জানাবেন। আপনাদের দায়িত্বহীনতার কারণে কারও মৃত্যু নগরবাসী মেনে নেবে না।’

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি বলেন, ‘এখনও সময় আছে দুই মেয়র বসুন, ডেঙ্গু মশার হাত থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করুন। যদি সেটা না পারেন তাহলে নগরবাসী আপনাদের ছাড় দেবে না। মানুষ যদি একবার ক্ষেপে যায় তাহলে কি হতে পারে তা প্রত্যেকেই খুব ভালো করেই জানেন।’

সারাবাংলা ডটনেট ও গাজী টিভির এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ‘দুই মেয়র আমাদের ব্যক্তিগত সচেতনতার কথা বলেন। আমার তো মনে হয় রাজধানীবাসী এখন অনেক সচেতন, ডেঙ্গু সম্পর্কে তারা জানে। কিন্তু যেখানে সচেতনতার প্রয়োজন ছিল সেখানে ভয়ঙ্কর ব্যর্থতা দেখতে পাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘সারা শহরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। শহরজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নির্মাণ সামগ্রী। পানি জমছে আর ডেঙ্গু মশা বাসা বাঁধছে। ডেঙ্গুরোগ ছড়াচ্ছে। এগুলো মনিটর করার কোনো ব্যবস্থা নেই। সিটি কর্পোরেশন, ঠিকাদার-কন্ট্রাক্টর, স্থানীয় সরকার কিংবা রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে বলেন কেউ তা মনিটরিং করছেন না। মূলত: এই উদাসীনতার কারণে মশা বেড়ে যাচ্ছে। মশা মারতে না পারার ব্যর্থতা নিয়ে দুই মেয়রের চলে যাওয়া উচিত।’

গাজী টিভির এডিটর ইন চিফ বলেন, ‘আজ ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছে। যাদের স্বজন গেছে তারাই শুধু আপনজন হারানোর বেদনা বুঝতে পারছেন। যাদের স্বজনরা ডেঙ্গুর সাথে লড়াই করছেন তারা বুঝতে পারছেন সেই লড়াইটা কোন জায়গায়। কাঁচের ঘরে বাস করে এর কিছুই তারা টের পাচ্ছেন না। কাচের ঘর ভেঙ্গে পড়তে সময় লাগে না। জনগণ যদি ক্ষেপে ওঠে।’

প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে এ সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, দুই মেয়রকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড় করান। কারণ তারা আপনার সম্মান নষ্ট করছে। এই সরকার মানুষের মধ্যে যে উন্নয়ন স্পৃহা তৈরি করেছে তা নষ্ট করে দিচ্ছে দুই অকর্ম মেয়র।’ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে না এলে আমরা দুই মেয়রের অপসারণ চাই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সাবেক ছাত্রনেতা বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, ‘আমরা শুনেছি, মশার এমন এক ওষুধ আনা হচ্ছে যা কিনা মশা মারতে পারছে না। আবার বলা হচ্ছে, মশা নাকি ওষুধের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে গেছে। আবার কখনো বলছে, ওষুধ ঠিকই আছে কিন্তু আমরা হয়তো অন্য কোনো কারণে পারছি না। এই যে না পারার ব্যর্থতা তা জনগণ মেনে নেবে না।’

ডেঙ্গুতে সন্তান হারানো গুলশান আরা উর্মি নামে এক অভিভাবক বিক্ষোভ সমাবেশে বলেন, ‘ঢাকায় আমার মতো সচেতন খুব কম অভিভাবকই আছে। সারাদিন মশারি টাঙিয়ে রাখি। গুড নাইট ইলেক্ট্রিক কয়েল জ্বলে। কিন্তু বাসার পাশের ড্রেন ময়লা। দুর্গন্ধ। সন্ধ্যায় মশা ঢোকে বাসায়। আজ আমার সন্তান ডেঙ্গুতে মারা গেল। কাল হয়তো অন্য কারো। এটার লাগাম টানা উচিত।’ দুই মেয়র স্বজন হারানোর ব্যথা অনুভব করতে পারেন না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

(ওএস/এসপি/জুলাই ১২, ২০১৯)