উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : সন্ধ্যা ৬টায় ক্যাপ্টেন গাফফারের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা মর্টারের সাহায্যে কুমিল্লার পাকবাহিনীর মন্দভাগ বাজার ও নাক্তেরবাজার অবস্থানের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়।

এই আক্রমণে পাকসেনাদের ১২ জন সৈন্য নিহত হয় ও কয়েকটি বাঙ্কার ধ্বংস হয়। পাকবাহিনী মুক্তিকবাহিনীর অবস্থানের ওপর কামানের সাহায্যে পাল্টা আক্রমণ চালালে মুক্তিবাহিনীর একজন নায়েব ও ৩ জন সেপাই আহত হয়।

রাত ১০ টায় ২নং সেক্টরে ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের নেতৃত্বে দুইদল মুক্তিযোদ্ধা পাকবাহিনীর দত্তসারদিঘী ও আমতলা অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে পাকহানাদার বাহিনীর ১৫ জন আহত ও কিছু সৈন্য নিহত হয়।

দাউদকান্দির উত্তরে গোমতী নদীতে মুক্তিবাহিনীর এ্যামবুশ দল পাকবাহিনীর একটি টহলদারি স্পীডবোটকে আক্রমণ করে। এই এ্যামবুশে একজন লেপটেন্যান্টসহ ২১ জন পাকসেনা নিহত হয়। এ্যামবুশ দল প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে।

কুষ্টিয়ার ভারতীয় বাহিনীসহ মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর দর্শনা ক্যাম্প আক্রমণ করে। এই অভিযানে ১২/১৪ জন পাকসেনা নিহত হয়।

ল্যান্সনায়েক মান্নানের নেতৃত্বে ১৩ জন যোদ্ধা ও স্থানীয় ২০০ জন মুক্তিযোদ্ধা যৌথভাবে ফুলবাড়িয়া থানার লক্ষ্মীপুর গ্রামে পাক আর্মির একটি টহলদার দলকে এ্যামবুশ করে। এই এ্যামবুশে মুক্তিযোদ্ধারা ৪৩টি রাইফেল, ৩টি এল-এম-জি, ১টি চীনা এল-এম-জি, ২টি চীনা রাইফেল ও ২টি এস-এম-জি দখল করে।

মুক্তিযোদ্ধারা ফেনী-গুনবতী রেলপথে স্বরিসদি ব্রিজ পাহারারত সশস্ত্র দালালদের আক্রমণ করে। এতে কিছু দালাল নিহত হয় ও বাকীরা পালিয়ে যায়। পরে মুক্তিযোদ্ধারা ডিমোলিশন লাগিয়ে ব্রিজটি ধবংস করে দেয়। ফলে পাকসেনাদের ফেনী ও গুনবতীর মধ্যে রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়।

ক্যাপ্টেন হাফিজউদ্দিন আহমদের ব্যাটালিয়নের কমাডিং অফিসার হিসেবে মেজর মঈনুলহোসেন চৌধুরী নিযুক্ত হন এবং ক্যাপ্টেন হাফিজউদ্দিনের কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুৃট্টো করাচীতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, তিনি তেহরানে বলেছিলেন বে-আইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে নয়, যেসব সদস্য বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না তাদের সাথে সরকারের আলোচনা করা উচিত।

তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান আলোচনার প্রথম থেকেই অবাস্তব মনোভাব পোষণ করে আসছিলেন। আলোচনায় শেখ মুজিবুর রহমান যখন জাতীয় পরিষদকে দু‘টো কমিটিতে বিভক্ত করার কথা বলেছিলেন তখনই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন সুষ্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ জন্যই পরে সরকার আওয়ামী লীগ বেআইনী ঘোষণা করেন এবং শেখ সাহেবকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি আরো বলেন, জাতীয় পরিষদ ঠিকই থাকবে। আওয়ামী লীগের যেসব সদস্য বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে যোগদান করেছেন কেবল তাঁরাই পরিষদের সদস্যপদ হারিয়েছেন।

কনভেনশন মুসলিম লীগ নেতা ও সাবেক প্রাদেশিক মন্ত্রী ফকরুদ্দিন আহমেদকে আহবায়ক ও এ.ই.বি. রেজাকে সেক্রেটারী করে ময়মনসিংহ শহরের নতুন বাজার শান্তি কমিটি গঠিত হয়।

বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার আ্যালেক ডগলাস হিউম পার্লামেন্টে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, পাকিস্তানের গোলযোগে নিহত লোকের সঠিক সংখ্যা নির্ণয়ে ভারত ও পাকিস্তান দূতাবাস ব্যর্থ হয়েছে।

তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
(ওএস/এএস/জুলাই ১৩, ২০১৯)