মানিক সরকার মনিক, রংপুর : কোন ধরণের ঘুুষ, উৎকোচ, অর্থ বাণিজ্য কিংবা কোন মন্ত্রী এম.পির সুপারিশে নয়, সরকারের পরিপূর্ণ বিধিঅনুসারে মাত্র ১’শ ৩ টাকায় পুলিশের কনষ্টেবলের চাকরি পেলেন রংপুরের ২৮৬ জন চাকুরি প্রার্থী। আজকের যুগে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সম্পুর্ণ মেধার ভিত্তিতে যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের অধিকাংশই দিনমজুর এবং বর্গাচাষিদের ছেলেমেয়ে এবং পিতৃ-মাতৃহীন পরিবারের সদস্যরা। এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন রংপুরের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। তিনিই ছিলেন এই নিয়োগ পরীক্ষার যাচাই বাছাই কমিটির প্রধান। চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই শেষ করে তারা এখন পুলিশের ট্রেইনী বিক্রুটিং শেষে নিয়োগপত্র হাতে পেয়েই কাজে যোগ দেবেন। অবশ্য ইতোমধ্যেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

জানা গেছে, এবার রংপুর জেলার ৮ উপজেলা থেকে কনস্টেবল পদের জন্য দুই হাজার চাকরি প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। পুলিশ সুপার জানান, নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে কেউ যেন কোন ধরণের অনৈতিক বা আর্থিক লেনদেন করতে না পারে সেজন্য অনেক আগে থেকেই তিনি কঠোর নজরদারি রেখেছিলেন। শুধু তাই নয়, যারা প্রার্থী তারা যেন একে অপরের সাথে কোন ধরণের যোগাযোগ এবং উৎকোচ প্রদান বিষয়ে কথা বলতে না পারে সেদিকেই ব্যবস্থা রেখেছিলেন তিনি। তাই এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সন্তোষজনকভাবে শেষ করেছেন তিনি।

তিনি জানান, নিয়োগে তিনি সবচেয়ে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েদের মেধাকে গুরত্ব দেন তিনি। এদের মধ্যে বর্গাচাষী পরিবারের ছেলেমেয়েরা ভাল করেছে যাদের সংখ্যা ৫১ জন। পরের অবস্থানে রয়েছে দিনমজুর পরিবারের ছেলে মেয়েরা। এদের সংখ্যা ৩৫জন।

এছাড়া ১০জন রিকশা, অটো বাইক চালক, কাঠ মিস্ত্রি ১০ জন এবং পিতৃমাতৃহীন ২৬জন ছেলেমেয়ে চাকরি পেয়েছে। বাদবাকী ১৭৪ জন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার দরিদ্র মানুষের ছেলে মেয়ে। এ ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা, উপজাতীয় কোটায় চাকরি পেয়েছেন কেউ কেউ। পুলিশ সুটার জানান, নিয়োগ পরীক্ষা চকাকালে তিনি তার নিজস্ব মোবাইল ফোন বন্ধ বেখেছিলেন যাতে কেউ ফোন করতে না পারে।

ঘুষ বা উৎকোট ছাড়া চাকরী পেয়েছে পীরগঞ্জ উপজেলা জাহিদপুর গ্রামের দিনমজুর সাইফুল ইসলামের ছেলে রফিকুল ইসলাম তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এটি আমার কাছে স্বপ্নের ব্যাপার মনে হয়েছে। ভাবিনি এ্ জনমে কোন দিন সরকারী চাকরী পাবো। তবু আশায় আশায় পরীক্ষা দিয়েছিলাম যে, একজন দিনমজুরের ছেলে হিসেবে কী হয় ? আমার বাবার দৈনন্দিন আয়ের উঁপর সংসার চলে। বাবার কাছে টাকা চাইত্ওে শরম পেয়েছি। বর্গাচাষি পরিবারের সন্তান আজমিরা বেগম। বাড়ি রংপুর সদর উপজেলার ফতেপুর গ্রামে। তিনিও এমন প্রতিক্রিয় ব্যক্ত করে কান্নায়ভঙ্গে পড়েন। উপজাতি পরিবারের সন্তান কুমারী লিলিতা কুজুর। বাবা ধানাই কুজুর। বাড়ি মিঠুপুকুর উপজেলার গীড়াই গ্রামে। মাত্র ১’শ টাকায় অর্থ এবং মামা, চাচা, কাকা ছাড়া চাকরি পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বলেন, ইশ্বওএই স্যারকে হাজার বছর বাঁচিয়ে রাখুক। তিনি যেন সারা জীবন মানুষের সেবা করে যেতে পাবেন। লিলিতা কুজুর এখন থেকেই নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখছেন। এ রকম আর কত রাজমিস্ত্রির মেয়ে, অটো চালকের ছেলে কিংবা মেয়ে, কাঠ মিস্ত্র্রির মেয়ে যারা নির্বাচিত হয়েছে তারা সকলেই বিস্ময় প্রকাশ করে এক বাক্যে পুলিশ সুপারের জন্য দোয়া করছেন।

পুলিশ সুপার মজিানুর রহমান জানান, তার চাকরী জীবনের একটা স্বপ্ন ছিল। পুলিশ বিভাগের এই পথাগত ট্রেডিশন ভেঙ্গে নতুন একন একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন তিনি। তাই করা চেষ্টা করেছেন। তিনি জানানম কিছুই না হোক এ কয়েকটা মানুষের ভালবাসাতো পাবো। এটাই আমার জীবনের পড় পাওয়া।

প্রার্থীদেও কাছে ১’শ ৩ টাকা নেয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, সরকারী ব্যাংক ড্রাফট বাবদ ১’শ টাকা এবং সরকারী বিধিমোতাবেক ৩ টাকা করে ভ্যাট নিতে হয়েছে। যা সরকারে কোষাগাওে জমা হবে। আগামীতেও এমন কাজ কারর জন্য সকলের দোয়া চান তিনি।

(এসজে/এসপি/জুলাই ১৩, ২০১৯)