মানিক সরকার মানিক, রংপুর : জাপা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ.এম এরশাদের মৃত্যুর সংবাদে দলের দূূর্গ রংপুরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রিয় নেতার মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন অনেকেই।

সবার অপেক্ষা কবে আসবে প্রিয় নেতার লাশ, কতক্ষণে শ্রদ্ধা জানাবেন তাকে। সকাল থেকেই দলীয় নেতাকর্মীরা স্থানীয় সেন্টাল রোডের দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হন। সেখানে উত্তোলন করা হয় জাতীয়, দলীয় ও কালো পতাকা। প্রিয় নেতার মৃত্যুতে নেতাকর্মী সমর্থক সকলেই মুষঢ়ে পড়েছেন। এখন প্রিয় নেতার দাফন কোথায় কখন হবে এ নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে বসে আছেন তারা। তবে স্থানীয় কেন্দ্রীয় নেতারা আগেই মতই চাইছেন, তাদের প্রিয় নেতার দাফন যেন রংপুরেই হয়। এ নিয়ে ইতোপূর্বে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলেও ধরেছেন তারা।

তারা বলেছেন, রংপুরে তার দাফন সম্পন্ন হলে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা যখন তখন তার কবরে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন। আর রংপুরের বাইরে ঢাকায় হলে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন তারা। আবার ভিন্ন কথা বলছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

তারা বলছেন, তিনি একজন জাতীয় নেতা দেশের জাতীয় পর্যায়ের নেতারা ছাড়াও দেশের বাইর থেকে আসা বিভিন্ন দেশের নেতারা তাকে শ্রদ্ধা জানতে পারবেন। কিন্তু রংপুরে দাফন হলে সে সুযোগ পাবেন না অনেকেই। এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদও চাইছেন রংপুরেই তার দাফন হোক।

কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ক্যান্টমেন্টে তার প্রথম দফা জানাযা সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল সোমবার তার দ্বিতীয় জানাযা অনুষ্ঠিত হবে ঢাকার সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়। এরপর তাকে হিমঘর রাখা হবে। ১৬ জুন বৃহস্পতিবার তার মরদেহ হেলিকপ্টারযোগে নিয়ে আসা হবে প্রিয় মাতৃভূমি রংপুরে এবং সেদিনই রংপুরের প্রিয় জাতীয় ঈদগাঁ মাঠে সর্বস্তরের জনগণের উপস্থিতিতে তার তৃতীয় জানাযা অনুষ্ঠিত হবে।

এখানে সর্বস্তরের মানুষ তাদের প্রিয় নেতাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর হেলিকপ্টারযোগে আবার তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু ঢাকার বনানীতে তার দাফন সম্পন্ন হবে বলে শোনা গেলেও নেতাদের কেউ কেউ বলছেন এখনও তা নিশ্চিত করতে পারেনি কেন্দ্রীয় নেতারা।

এ নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে। যেহেতু বৃষ্টির মৌসুম তা সত্বেও রংপুর সিটি মেয়র ও কেন্দ্রীয় সভাপতি মন্ডলির সদস্য মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা রংপুরের এই ঈদগাঁ মাঠে যাতে শান্তি ও সুষ্ঠুপূর্ণভাবে জানাযা সম্পন্ন হয় সেজন্য সিটি পরিষদের পক্ষ থেকে যাবতীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

এদিকে এরশাদের মৃত্যুর সংবাদে শহরের মানুষের চেয়ে শহরতলী ও গ্রামাঞ্চলের মানুষ আরও বেশি শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন, পল্লীবন্ধুর মত এমন দয়ালু এবং ভাল নেতা আমরা আর পবো না। তিনি রংপুরে এলেই যতসব এলাকায় পায়ে হেঁটে যেতেন সেসব এলাকার মানুষের খোঁজ খোঁজ খবর নিতেন। তাদের মতে, এমন ভাল নেতা তারা আর পাবেন না।

এদিকে তার অবর্তমানে দলের অবস্থান কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় নেতারা বলছেন, একদিন সবইকেই যেতে হবে। তিনিও গেছেন। কিন্তু যায়নি তার আদর্শ। যাবার আগে তিনি তার ভাই জি.এম কাদেরকে দলের চেয়ারম্যান বানিয়ে গেছেন আমরা তিনিসহ অন্যান্য নেতাদের নির্দেশনাতেই তার আদর্শ বাস্তবায়নে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাবো। তার আদর্শকে লালন করে দলকে আরও বেশি সুগংঠিত করবো ইনশাল্লাহ।

উল্লেখ্য, ’৯০ এ গণ অভুথ্যানে ক্ষমতা ছাড়ার পর ৭ বারের উপনির্বাচনে রংপুর-৩ (সদর) আসনে ৭ বারই নির্বাচিত হয়েছিনে তিনি। শুধু একবার সদর আসনটি ছেড়ে দিয়ে গুলশানের আসনটি রাখায় রংপুরের ওই শূণ্য আসনে স্ত্রী রওশন এরশাদকে মনোনয়ন দেয়ায় এরশাদের জনপ্রিয়তার কারণেই নির্বাচিত হয়েছিলেন রওশন। তবে তার আমলের ক্ষমতার সেই ৫ বছরে তার কাছ থেকে এলাকাবাসী এলাকার উন্নয়নতো দুরের কথা একটিবারও কাছে পাওয়া কিংবা চোখে দেখেনি তাকে। বর্তমানে এরশাদের মুত্যুর সংবাদটি এখন মানুষের মুখে মুখে। মৃত্যুর আগে ভাল মন্দ যাই করে গেছেন এরশাদ কিন্তু মুত্যুর পর সব শ্রেণির মানুষের মাঝে রংপুরের মানুষ বলে একটা অন্য রকম অনুভূতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

(এম/এসপি/জুলাই ১৪, ২০১৯)