রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : বর্ষার শুরুতেই যমুনা নদীর পূর্বপাড়ের টাঙ্গাইল অংশের বেশ কয়েকটি উপজেলায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনের ফলে শতশত বাড়ী-ঘর ও ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে যমুনা রক্ষা বাঁধ। এদিকে জিও ব্যাগ সংকটের কারণে ভাঙন ঠেকাতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব হচ্ছে বলে দাবি টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষ কর্তারা। 

উজানের ঢলে প্রমত্তা রূপ ধারণ করেছে যমুনা। পানি বৃদ্ধির সাথে পাল্পা দিয়ে বাড়ছে পূর্ব পাড়ের ভাঙন। ভাঙনে জেলার ভূঞাপুর উপজেলার খানুরবাড়ী, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, কুঠিবয়ড়া, তাড়াই এলাকার কয়েক শতাধিক বসতি ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া সদর উপজেলার মামুদনগর ও নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ ও চর সলিমাবাদ এলাকাতেও প্রতিদিনই যমুনা গ্রাস করে নিচ্ছে নদী পাড়ের মানুষের সহায় সম্বল। বসতভিটা হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন অনেকেই।

শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে দিশেহারা টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর উপজেলার কষ্টাপাড়া গ্রামের বিধবা ফিরোজা বেওয়া। স্বামীসহ দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে সংসার চলছিল তার। স্বামী রোশন আলী ভ্যান চালাতেন। কোন রকমে সংসার চলতো তাদের। কিন্তু গত ৬ মাস আগে ফিরোজা বেওয়ার স্বামী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সংসারে এক মাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীর মৃত্যুর পর সংসারে চরম দুর্ভোগ নেমে আসে ফিরোজা বেওয়ার।

এর মধ্যে যমুনার করাল গ্রাসের শিকার হয়েছেন ফিরোজা বেগম। শেষ সম্বল হিসেবে বাড়ির ৮ শতাংশ জায়গার মধ্যে একটি কুড়ে ঘর ছিল। সেই ঘরটিও যমুনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এতে চরম বিপদে পড়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বর্তমানে সে কোথায় আশ্রয় নিবে কি করবে কিছুই জানা নেই তার। চোখে মূখে শুধুই হতাশার ছাপ।

কষ্টাপাড়ার ফিরোজা বেওয়ার মত অনেক ফিরোজা, আমিনা লাল বানু এমন করুন দশায় জীবন যাপন করছে নদীর পাড়ে খোলা আকাশের নিচে।

এ উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া ও খানুরবাড়ি এলাকায় তীব্র ভাঙনে তিনশতাধিক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে। এছাড়া গাবসারা ও অজুর্না ইউনিয়নের বলরামপুর, তারাই, চর তারাই এলাকার ফসলী জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

তাদের অভিযোগ, প্রশাসন ও রাজনীতির ছত্রছায়ায় একটি মহল গত কয়েক বছরে অবৈধ ও অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলনের ফলেই যমুনার পূর্বপাড়ে ভাঙন তীব্র রূপ ধারণ করেছে। ত্রাণ নয়, ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান চান তারা।

নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে স্বীকার করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, যমুনার পূর্ব তীর রক্ষায় বড় বড় প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। আর জিও ব্যাগের সংকট থাকায় জরুরি ভাঙন ঠেকাতে বিলম্ব হয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি বিশ বছরে তীব্র ভাঙনের ফলে যমুনা তার গতিপথ পাল্টে ৬ কি.মি পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে হুমকির মুখে পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের যমুনা রক্ষা বাঁধটি।

যদিও ভাঙনরোধে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেইনি টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে দেড় কিলোমিটার ভাঙনের মধ্যে মাত্র ৭৫ মিটার এলাকায় ভাঙনরোধে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজ শুরু করেছে।

এদিকে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) যমুনা নদী ভুঞাপুর অংশে পানি বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তবে ভাঙনের কবলে গৃহহারা মানুষদের সহায়তায় সরকারি বা বেসরকারি কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
ভুঞাপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ জানান, যমুনা নদীর গোবিন্দাসীর তিন গ্রামে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গৃহহারা ওইসব লোকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীর ভূঞাপুর অংশে বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে। নতুন করে আরো ৭৫ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজ শুরু হবে।

(আরকেপি/এসপি/জুলাই ১৬, ২০১৯)