রাজন্য রুহানি : ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি ও অপ্রতুল ত্রাণব্যবস্থার কারণে জামালপুরের বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে খাদ্যসংকট চরম। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় চাহিদা অনুপাতে ত্রাণ সরবরাহ যেমন বিঘ্নিত হচ্ছে, তেমনই অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে প্রয়োজনীয় ত্রাণ পাচ্ছেনা বানভাসীরা। সেই সাথে দুর্গত এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার ও স্বাস্থ্যসেবার অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে উপদ্রুত এলাকার লোকজন।

পানিবন্দি মানুষের অভিযোগ, অনেকেই এখনও কোনো ত্রাণসামগ্রী পায়নি। জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, যে ত্রাণ তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। অন্যদিকে ত্রাণ বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

১০০ বছরের রেকর্ড ভেঙে বৃহস্পতিবার বিপদসীমার ১৬৬ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনার পানি। এতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

বুধবার মাদারগঞ্জ উপজেলার চরনাদাগাড়িতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে ১৫ টি গ্রাম। বিভিন্ন স্থানে রেল লাইন বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ রেলপথ এবং জামালপুর-তারাকান্দি-বঙ্গবন্ধু সেতু রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধের ঘোষনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। উপজেলা সদরের সাথে আন্তঃ ইউনিয়নের সমস্ত সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। চরম দুর্ভোগে পড়েছে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ। এ পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে ১৮ হাজার ২শ ৩ হেক্টর জমির ফসল। বন্যার্তদের চিকিৎসা সহায়তায় গঠন করা হয়েছে ৮০টি মেডিকেল টিম। বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে প্রায় ৪০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বন্যার পানির তোড়ে পুরো জেলার ৪৪১৬টি মৎস্য খামারের ২১ কোটি টাকার অধিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ।

জেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী জেলার ৬৮ টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৯টি ইউনিয়ন এবং ৮টি পৌরসভার মধ্যে ৭টি পৌরসভা বন্যা কবলিত। পুরো জেলায় ৯০ হাজার ১৩০ টি পরিবারের ৪ লাখ ৪৩ হাজার ১৮০জন পানিবন্দি। এদের একটি অংশ ৩৭ টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করলেও অধিকাংশ বানভাসীরা বিভিন্ন পাকা সড়ক, ব্রিজ ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গবাদি পশুর খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি মানুষের অভিযোগ, অনেকেই এখনও কোনো ত্রাণ সামগ্রী পায়নি।

ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জানান, সরকারিভাবে যে পরিমান ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে তা ২৫ ভাগ মানুষে কাছে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। ৭৫ ভাগ মানুষই বঞ্চিত হচ্ছে। তাই তিনি ত্রাণের পরিমাণ বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- এ পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য ৭৮০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। ত্রাণের বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আহমেদ কবির।

(আরআর/এসপি/জুলাই ১৮, ২০১৯)