রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ছাগলে পাটের পাতা খাওয়ার প্রতিবাদ করায় মসজিদে ঢুকে নামাজ চলাকালিন তিন সহোদরকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় এক জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। 

গত শনিবার মাগরিবের নামাজের সময় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বালিয়াডাঙা জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতের নাম আকবর আলী সরদার (৫০)। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বালিয়াডাঙা মাঝের পাড়ার মৃত আহম্মদ সরদারের ছেলে। আহতরা হলেন তার দু’ সহোদর ইউপি সদস্য রইচউদ্দিন সরদার(৪৬) ও আব্দুল গফফার সরদার(৪২)।

বালিয়াডাঙা গ্রামের মিজানুর রহমান সরদার জানান, একই পাড়ার আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী আনুর ছাগলে চাচা আব্দুল গফফারের পাট গাছ খায়। জানতে পেরে প্রতিবাদ করেন আব্দুল গফফর। কঞ্চি দিয়ে চাচা ওই ছাগলের গায়ে দু’টি আঘাতও করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্তার ও তার ভাইয়েরা দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এ নিয়ে বচসা হয় রইচউদ্দিন, গফফার ও আকবরের সঙ্গে।

তিনি আরো জানান, শনিবার স্থানীয় বালিয়াডাঙা জামে মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়তে যায় আকবর সরদার, তার ভাই রইচউদ্দিন ও আব্দুল গফফার। ৫০ জনেরও বেশি মুসল্লির সঙ্গে নামাজে দাঁড়িয়ে থেকে তাকবিদ দেওয়ার সময় বাহিরে অবস্থান করতে দেখা যায় প্রতিবেশী পরান সরদারের ছেলে আব্দুল্লাহ সরদার, আবু তালেব সরদারেরছেলে আসাদুল, ওয়াজেদের ছেলে আসাদুলসহ কয়েকজন। এ সময় আব্দুস সাত্তারের ছেলে হাসান, আব্দুল ওয়াজেদের ছেলে ইদ্রিস আলী ও তার ভাই কুদ্দুস ধারালো রামদা নিয়ে মসজিদের মধ্যে ঢুকে আকবর, গফফার ও রইচউদ্দিনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে।

মোয়াজ্জেম আব্দুল আলালসহ মুসল্লিরা ঘটনার আকষ্মিকতায় কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই হামলাকারিার চলে যায়। মুসল্লিরা তিন সহোদরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় আকবরকে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ও পরে ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ এণ্ড হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে আকবর সরদারের মৃত্যু হয়।

মিজানুর রহমান সরদার জানান, শনিবার তার তিন চাচাকে মসজিদের মধ্যে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় চাচা আব্দুল গফুর বাদি হয়ে রোববার হাসানসহ ১০জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আটজনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন। পরদিন আসামী হাসান, আক্তারুল ও আব্দুল্লাহ ব্যতীত সাতজন এজাহার নামীয় আসামী ইদ্রিস, কুদ্দুস, আসাদুল, মোতালেব, বেল্লাল, আবু তালেব ও আব্দুস সাত্তার আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। বুধবার সন্ধ্যায় চাচা আকবর আলীর মৃত্যুর খবর মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক তরিকুল ইসলামকে অবহিত করা হয়।

বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে লাশ বাড়ি আনার পর থেকে বৃহষ্পতিবার সকাল ১০টায় পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফনের আগে পর্যন্ত কয়েক দফায় উপপরিদর্শক তরিকুল ইসলামকে জানানোর পরও তিনি আসেননি। বাধ্য হয়ে বিষয়টি পুলিশ পরিদর্শক মহিদুল ইসলামকে অবহিত করা হয়। তরিকুল ইসলাম ও মহিদুল ইসলাম খুলনার উপ মহাপুলিশ পরিদর্শক সাতক্ষীরায় অবস্থান কারণে তারা ব্যস্ত রয়েছেন উল্লেখ করে তাদের বাড়িতে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন। যদিও ওই দিন বিকেল ৫টার দিকে উপপরিদর্শক তরিকুল ইসলাম তাদের বাড়িতে যেয়ে চাচা আকবর আলীর মৃত্যু সনদ ও সুরতহাল প্রতিবেদনসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তার কাছ থেকে সংগ্রহ করেন।

অভিযোগ, শুক্রবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত এজাহার নামীয় হাসান, আক্তারুল ও আব্দুল্লাহকে গ্রেপ্তারের কোন উদ্যোগ নেননি উপপরিদর্শক তরিকুল ইসলাম। ফলে জামিন পেয়ে আসামীরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বাদি ও সাক্ষীদের হুমকি ধামকি অব্যহত রেখেছে।

স্থানীয় একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মামলার প্রধান আসামী হাসান শিবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম ও কুচপুকুরের সিরাজুল ইসলাম হত্যা মামলা ছাড়াও দু’িটি অস্ত্র মামলার এজাহার ও চার্জশীটভুক্ত আসামী। আসামী বেল্লাল চারটি নাশকতা ও বোমা হামলা মামলার আসামী। আব্দুল্লাহ চুরি ও মারপিটের দু’টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামী। আবু তালেব সিরাজুল হত্যা ও দু’টি গাছ কাটা মামলার আসামী। গাজা ও ইয়াবা বিক্রেতা ইদ্রিস আলী কয়েকটি মাদক মামলার আসামী হয়েও মাদক সম্রাট হিসেবে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মামলার সকল আসামীরা জামায়তের নাশকতা পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত থেকেও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় না।

জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক তরিকুল ইসলাম শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, আব্দুল গফুরের দায়েরকৃত মামলার প্রধান তিন আসামী পলাতক রয়েছে। হত্যা চেষ্টার মামলাটির সঙ্গে হত্যার অভিযোগ সম্বলিত ৩০২/৩৪ ধারা সংযোজন করে শুক্রবারই আদালতে অগ্রবর্তী করা হবে। একই সাথে আগামি ধার্য দিনে জামিন পাওয়া আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ থাকায় পূর্বের জামিন বাতিলের আবেদন জানানো হবে। মামলার অনান্য আসামীদের সন্ধান দেওয়ার জন্য মসজিদের সকল মুসল্লি ও বাদি পক্ষের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

(আরকে/এসপি/জুলাই ১৯, ২০১৯)