চৌধুরী আবদুল হান্নান


মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমামের কাছে তার শিশু ছাত্রী যখন নিরাপদ নয় তখন অন্যদের কথা আর কি বলা যায়। ছাত্রীরা পিতৃতুল্য শিক্ষকের কাছে যখন যৌন লালসার শিকার হয় এর চেয়ে বড় লজ্জার আর কিছু নেই। কেউ কেউ আবার নিজেই মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে ধর্মের লেবাসে পরীক্ষায় সুযোগ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্রী ধর্ষণের “কুলবাগান” তৈরী করে নিয়েছে, ধর্ষণের ঘটনা গোপন রাখতে পবিত্র ধর্মগ্রন্থে হাত রেখে ধর্ষিতাকে শপথ করানো হয়। শিক্ষক-ছাত্রীর নির্মল সম্পর্কের চিরকালীন সামাজিক বিশ্বাসকে হত্যা করে চলেছে এ সকল লেবাসধারী ধর্মগুরুরা।

আমাদের মেয়েরা কোথাও নিরাপদ নয়, পথে পথে ওত পেতে আছে ভয়ংকর সব নেকড়ে। ধর্ষিত হয়েও মেয়েরা বিচার চাইতে ভয় পায় কারণ সেক্ষেত্রে তাকে দ্বিতীয়বার ধর্ষণের মত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়। স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়ায় আইনের আওতায় এনে এদের বিচার করা সম্ভব নয়। তাছাড়া আইনমন্ত্রী যখন বলেন, “সামাজিক-পারিবারিক কিছু সংকটের কারণে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সব অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।” ( সমকাল ১৮ মে, ২০১৯)।

মানুষের যখন আইনের প্রতি, বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থার সংকট তৈরী হয়, তখন আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবনতা প্রবল হয়। তাই কথিত বন্দুকযুদ্ধে আসামি মারা গেলে মানুষ এতো খুশি হয়। বরগুনার রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার প্রধান আসামি নয়নবন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার খবরে সারা দেশের মানুষ খুশি হয়েছে।

আমাদের মেয়েরা চোখের সামনে নিপীড়িত হচ্ছে, নরক যন্ত্রনায় বসবাস আমাদের। নারীর প্রতি নিষ্ঠুর লাঞ্চনার স্মৃতি নিয়ে আমরা ঘুমাতে যাই, সকালে ঘুম থেকে উঠে খবরে আরও ভয়ংকর, বিভৎস ঘটনা দেখে দেখে আমাদের অনুভূতি ভোঁতা হয়ে গেছে, তা না হলে জনরোষের তীব্রতা নেই কেন?

দেশব্যাপী ভয়াবহ এ সামাজিক ব্যাধি দ্রুত নিরসনে সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে গণপিটুনি আর ক্রসফায়ার ভিন্ন অন্য কোনো পথ খোলা নেই। তবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

এমন আদালত প্রতিষ্ঠা করা হোক, যেখানে নির্যাতিত, ধর্ষিত মেয়ের অভিযোগ প্রমান করার জন্য তাকে প্রকাশ্য আদালতে ডাকা হবে না, সত্যতা যাচাইয়ে গোয়েন্দা রিপোর্ট কাজে লাগাতে হবে এবং নির্ধারিত স্বল্প সময়ে বিচার কাজ সম্পন্ন হবে। অন্যদিকে আসামি ধরতে গিয়ে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মূল আসামি যদি নিহত হয় হোক, তবুও জনমনে স্বস্তি আসুক।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।