নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীর বাঁধ ভেঙে কমপক্ষে ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ২ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে বুধবার (১৭ জুলাই) ভোর রাতে মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীর চকবালু (বনকুড়া) নামকস্থানে বাঁধ ভেঙে প্রায় ২৭ টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার পর শুক্রবার ভোরে রাণীনগরে নান্দাইবাড়ী-মালঞ্চি নামক স্থানে ছোট যমুনা নদীর বেরিবাঁধ ভেঁঙ্গে আরো ৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৮শ’ পরিবারের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। মালঞ্চি গ্রামের নওগাঁ-আত্রাই আঞ্চলিক সড়কের ২টি কালভাটের নিচ দিয়ে প্রবল বেগে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। এতে আত্রাই, রাণীনগর, বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার ফসলি জমির মাঠসহ বিস্তির্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। 

জানা গেছে, বাঁধ ভেঙ্গে নান্দাইবাড়ী-মালঞ্চি ও কৃষ্ণপুর গ্রামের বিস্তির্ণ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে বাড়িঘরসহ সবজি ক্ষেত। বন্যার পানিতে বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে ৩টি গ্রামের মানুষ। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে আসবাবপত্র ও গবাদিপশু নিরাপদ স্থানে সড়িয়ে নিচ্ছে।

গোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত খাঁন হাসান জানান এলাকার ছোট যমুনা নদীর নান্দাইবাড়ি, মালঞ্চি, কৃষ্ণপুর ও আত্রাই উপজেলার ফুলবাড়ি বেরিবাঁধটি নির্মিত হওয়ার পর থেকে অভিভাবকহীন। ৪০ বছর ধরে কোন দপ্তর কোনদিন এই বাঁধটি সংস্কার করেনি। এমনকি এই বাঁধটিকে কোন দপ্তরই স্বীকার করে না, যার কারণে সংস্কার ও উন্নয়নের কোন প্রকারের ছোঁয়া এই বাঁধে কখনো স্পর্শ করেনি। যার ফলশ্রুতিতে বাঁধটি দীর্ঘদিন যাবত চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিলো।

এমতাবস্থায় শুক্রবার বাঁধটির মালঞ্চি এলাকার কিছু অংশ ভেঙ্গে গেছে। এতে করে নদীর তীরবর্তি কয়েকটি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে বন্যার কারণে এই এলাকা পুকুর ও শতাধিক হেক্টর জমির সবজির আবাদ পানিতে তলিয়ে যাবে। এছাড়াও নওগাঁ-আত্রাই সড়কের বেশকিছু জায়গা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেইসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থান স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় স্থানীয়রা রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে নওগাঁর মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীর চকবালু (বনকুড়া) নামকস্থানে বাঁধ ভেঙে প্রায় ২৭ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বুধবার (১৭ জুলাই) ভোরে বাঁধটি ভেঙে যায়। আত্রাই নদীর পানি বিপদ সীমার ৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এই বাঁধ ভেঙ্গেছে বলে স্থানীয়রা ও প্রশাসন জানিয়েছেন।

বুধবার ভোরে বাঁধের ২০০ফুট অংশ ভেঙে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ রবিবার সন্ধ্যা থেকে আত্রাই নদীর ৩০ পয়েন্টে বাঁধে ফাটল দেখা দিলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা- কর্মচারিদের দেখা যায়নি। এর ফলে এই ভাঙ্গন হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। গভীর রাতে নদীর ডান তীরে মূল বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। স্থানীয়রা প্রায় ৪ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে ফাটল অংশে বালুর বস্তা ও মাটি ফেলেও ভাঙ্গন রক্ষা করতে পারেনি। দ্রুতই নদীর পানি ঢুকে পড়ছে বসতি এলাকা ও ফসলের মাঠে।

এরই মধ্যে মান্দা উপজেলার বনকুড়া, চকবালু, ভরট্ট, শিবনগর, দাসপাড়া, শহরবাড়ি, কর্ণভাগ, পারশিমলা, মহলা কালুপাড়াসহ অন্তত ৫০ টি গ্রামের প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে গেছে আশেপাশের ফসলের মাঠ, আমন ধানের ফসল ও সবজি ক্ষেত। ক্রমেই নতুন নতুন গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। মান্দা ছাড়াও পাশের আত্রাই, রাণীনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে।

সরকারী এপর্যন্ত ১০০টি পরিবারের মাঝে ১০কেজি করে চাল, ২কেজি করে চিনি ও মোমবাতি দেয়া হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগন্য বলে জানান বানভাসি মানুষ। মান্দা উপজেলা কৃষি অফিসার গোলাম ফারুক জানান, প্রাথমিকভাবে ৮২৯ হেক্টর আউশ, ৬০ হেক্টর আমন এবং ৭৫০ হেক্টর শাকসবজি বন্যায় তলিয়ে গেছে। পানির চাপ বাড়তে থাকলে আরো ফসল নিমজ্জিত হবে।

(বিএম/এসপি/জুলাই ১৯, ২০১৯)