সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোণা) : শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের অনেক সাফল্য। সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে চলছে দেশের জনগণ। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ফলে অপু, শিপ্রা ও মমতারা ঘরে বসেই অনেক সুবিধা ভোগ করছেন। ফলে তারা মনের আনন্দে সরকারের সাফল্য কামনা করছেন।

কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী অভিভাবক সাজিউড়া গ্রামের অপু রানী বিশ্বাস জানান, আমার কন্যা প্রিয়াংকা শর্মা তুলি নবম শ্রেনীতে অধ্যয়ন করছে। সে যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ত তখন তার উপবৃত্তির টাকার জন্যে ব্যাংকে গিয়ে লাইন ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকতে হতো। দিন শেষে মিলতো উপবৃত্তির টাকা।

তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার ফলে আমরা বর্তমানে ঘরে বসেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা পাচ্ছি। এই সুবিধা বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনা করে দিয়েছেন। আমরা তার সরকারের সাফল্য কামনা করি। শিপ্রা রানী সরকার তার স্বামী চয়ন সরকার থাকেন মালয়শিয়াতে। কর্মের তাগিদে উপার্যনের জন্য সেখানে গেছেন। সাজিউড়া গ্রামের এই নারী ইতিমধ্যে নিজেকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন।

তিনি জানান, কয়েক বছর আগে আমাদের প্রয়োজনের কথা বলতে ডাক যোগে স্বামীর নিকট চিঠি পাঠাতাম, চিঠি পৌঁছতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগত। উত্তর পেতাম আরো ১০/১৫ দিন পরে। কিন্তু এখন ঘরে বসেই মোবাইল ফোনে ভিডিও কলের মাধ্যমে চেহারা দেখেই কথা বলতে পারি। এর চেয়ে সুবিধা আর কি থাকতে পারে?

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন বলেই আমরা বিভিন্ন সুযোগ পাচ্ছি। ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র অথবা যে কোন বাজারে গিয়ে একটি কম্পিউটারের দোকান থেকে সকল প্রকার কাজ ও তথ্য সেবা পাওয়া যায়। আমার স্বামীর প্রয়োজনে একবার তার পাসপোর্ট ই-মেইলের মাধ্যমে কম্পিউটারের দোকানে পাঠালো আমিও সেই দোকান থেকে ইউনিয়ন পরিষদের জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধনের কাগজপত্র মুহুর্তেই ইমেইল করে পাঠিয়ে দেই।

শিপ্রা রানী সরকার বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার কারনেই আমরা এ সুবিধা পাচ্ছি। মমতা আক্তার বলেন, আমাদের জমিতে একবার পোকা ধরেছিল, মোবাইল ফোনে কৃষি কর্মকর্তাকে জানানোর পর তিনি মোবাইল ফোনে পোকার ছবি তুলে তার কাছে পাঠানোর জন্য বলেন। পরে ছবি তোলে সেই কর্মকর্তার কাছে পাঠাই। তিনি পোকার ছবি দেখে জমিতে যে ঔষধ ব্যবহারের কথা বলেন, সে ঔষধ ব্যবহার করে আমরা অনেক উপকার পেয়েছি।

মমতা তার মতামত ব্যক্ত করে বলেন, শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার কারনেই আমরা এ সুবিধা পাচ্ছি। সিনিয়র সংবাদকর্মী রফিকুল ইসলাম বলেন, ৯০’র দশক থেকেই আমি সংবাদ পত্রে কাজ শুরু করেছি। তখন খোলা ডাকে পোষ্ট অফিসের মাধ্যমে এক টাকার ডাকটিকিট ব্যবহার করে সংবাদ পাঠাতাম। পরের দিন পত্রিকা অফিস আমাদের প্রেরিত সংবাদ পেয়ে তা প্রকাশ করত। ডাকযোগে আমাদের কাছে পত্রিকা আসত অথবা হকারেও নিয়ে আসত। কিন্তু এখন সংবাদ পাঠাই ই-মেইলের মাধ্যমে। সংবাদটি লিখে মুহুর্তেই পাঠিয়ে দেই, আবার এই সংবাদটিই অনলাইন সংস্করনে মুহুর্তেই প্রকাশ পায়। ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার সুবাদে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকও ব্যবহার করতে পারছি। এই ফেসবুকের মাধ্যমেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের আদান প্রদান দেশ বিদেশে করতে পারছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার ফলে আমরা যত সহজে এ সেবাগুলো পাচ্ছি, ডিজিটাল বাংলাদেশ না হলে এই সেবাগুলো আমরা পেতামনা।

কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার ফলে তথ্য প্রযুক্তির দিক থেকে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে যেরকম সুবিধা সেরকম কিছু অসুবিধাও আছে। তবে অসুবিধার চেয়ে সুবিধার পাল্লাই ভারি। পল্লী এলাকায় একটি ঘটনা ঘটলে ফেসবুকের মাধ্যমে মুহুর্তেই আমরা খবরটি পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে এর সতত্যা যাচাই করতে পারি।

তিনি বলেন, মোবাইল ট্র্যাকিং করে বিভিন্ন অপরাধীদের অবস্থান সনাক্ত করার ক্ষেত্রেও অনেক সুবিধা হয়েছে। কয়েকদিন আগে একটি গণধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে। ওই মামলায় ৫ জন আসামী হয়েছে, ৩ জনকে সঙ্গে সঙ্গে ধরতে পেরেছে পুলিশ। কিন্তু বাকি রয়েগেছে প্রধান আসামী।

এ বিষয় নিয়ে কেন্দুয়া থানার ওসি মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আজকের দিনটা সময় দিন মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে আমরা মামলার প্রধান আসামীর অবস্থান সনাক্ত করতে পেরেছি। এখন শুধু এ্যাকশনে যাব। ওই দিন রাতেই মামলার প্রধান আসামীকে ধরতে সক্ষম হয়েছেন।

ওসি বলেন, এই ডিজিটাল বাংলাদেশ না হলে মোবাইল ট্র্যাকিং করে আসামীর অবস্থান সনাক্ত করা যে ত না।

ডিজিটাল বাংলাদেশের সাফল্য নিয়ে কথা বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান বিভাগীয় কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ব বিদ্যালয়ে নাটক ও নাট্য তত্ত্ব বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার্থী হৃদয় কিশোর সৌরভ বলেন, বাংলা, ইংরেজী অথবা যে কোন বিষয় নিয়ে সমস্যায় পড়লে গুগুলে চার্চ করলেই সঠিক উত্তর বেড়িয়ে আসে। তাছাড়া আমার বাবা আমার নামে মাসে দুই তিনবার যে টাকা পাঠান তা বিকাশের মাধ্যমে আমার মোবাইল নাম্বারে পাঠিয়ে দেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ না হলে আমরা এই সুবিধা পেতামনা। অপু, শিপ্রা, মমতা ছাড়াও কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষ শিক্ষার্থী শিক্ষক ও বিভিন্ন বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ ও জনপ্রতিনিধিরাও ডিজিটাল বাংলাদেশে সফলতার কথা অকপটে স্বীকার করেছেন। তারাও এই সরকারের সাফল্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।

(এসবি/এসপি/জুলাই ১৯, ২০১৯)