নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এক গ্রামে দূর থেকে দেখে বুঝার উপায় নেই যে এটি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মনে হবে এলাকাবাসীর স্বার্থে তৈরী করা একটি খড়িঘর অথবা শৌচাগার। অবশ্য কাছে গিয়ে দেখা যায় অনেকটা শৌচাগারের আদলেই তৈরী ছোট একটি টিনসেড ঘরের দেয়ালে ঝুলছে ‘চকগৌরী যায়েদা বেগম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে একটি সাইনবোর্ড। এ ঘর সংলগ্ন সামনেই রয়েছে একটি টিউবওয়েল এবং সামান্য পরিসরে খেলার মাঠ। এ মাঠ নিয়মিত এলাকার লোকজন রবি শস্য ও খড় শুকানোর কাজে ব্যবহার করে থাকে। এ মাঠের এক প্রান্তে ভাঙ্গাচোরা ঢেউ টিন দিয়ে ঘেরা একটি ঘর রয়েছে। টিনের ঘেরা এ ঘরেই নাকি পাঠদান কার্যক্রম চলে। 

প্রকৃত পক্ষে দেখা যায়, এ ঘরে গ্রামবাসী জ্বালানী লাকড়ী মজুদ রাখে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বাস্তব চিত্র দেখলে যে কোন সচেতন মানুষের চোখ স্থির হয়ে যাবে। উপজেলার সফাপুর ইউনিয়নের চকগৌরী গ্রামে অবস্থিত এ বিদ্যালয়টি ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ সরকারি করণ করা হয়। ২০১০ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়।

এ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি যায়েদা বেগম তার ছেলে কামাল হোসেনকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। একই সময় মাসুমা জোবাইদা মুন্নি, জোসনা বানু, রিপা রানী মন্ডল, মোঃ রবিউল ইসলাম, মর্জিনা খাতুন ও শাজাহান আলীকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। বিদ্যালয়টি ২০১৭ সালে সরকারি করণ হওয়ার কয়েক দিন পর প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেনসহ সহকারী শিক্ষক মাসুমা জোবাইদা মুন্নি, জোসনা বানু এবং রিপা রানী মন্ডলের নামে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশ করে।

গ্রামবাসী জানায়, বিদ্যালয়টি সরকারি করণের পর থেকেই ঠিকাদারী কাজে ব্যস্ত থাকায় প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত রয়েছেন। এ ছাড়াও এ বিদ্যালয়টিতে হাতে গোনা কয়েক জন শিক্ষার্থী থাকলেও প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের অনুপস্থিতির কারণে নিয়মিত পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

ওই গ্রামের ইয়াদ আলীর স্ত্রী ফাতেমা বেগম জানান, এটি একটি বিদ্যালয় তার জানা ছিল না। এ কারণেই তিনিসহ গ্রামের অনেকেই শিশুদের খেলার মাঠে রবি শস্যসহ জ্বালানী লাকড়ী শুকানোর কাজে ব্যবহার করা এবং ওই টিনের ঘেরা ঘরে রাখা হয়।

একই এলাকার অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্য আব্দুল কুদ্দুস জানান, নিয়মিত বিদ্যালয়ের টিন সেড ঘরে সন্ধ্যার পর মাদকাসক্তদের অভয়ারণ্য গড়ে ওঠে। একই সঙ্গে অনেক অপরাধ চক্রের সদস্যরাও টিনের ঘেরা ঘরটিকে ব্যবহার করে এলাকায় অপরাধ সংঘটিত করে আসছে।

চকগৌরী যায়েদা বেগম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেহাল অবস্থার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আনোয়ার হোসেন জানান, ওই স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে মামলা-মোকর্দমা চলছে। স্কুল সরকারীকরন হলেও তাদের কোন বেতন-ভাতা এখনো হয়নি। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেনকে একাধিকবার বলা হলেও তিনি তাদের কথা উপেক্ষা করে ঠিকাদারী কাজে নিয়মিত সময় দেন।ইউএনওর নির্দেশে সোমবার (২২ জুলাই) উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিষয়টি তদন্তে যাব।

এ ব্যাপারে সদ্য যোগদানকৃত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান জানান, খতিয়ে দেখার জন্য উপজেরা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা নেয়া হবে।

(বিএম/এসপি/জুলাই ২১, ২০১৯)