স্টাফ রিপোর্টার : শেয়ারবাজারে দরপতনের কবলে পড়ে প্রতিনিয়ত পুঁজি হারাচ্ছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। পুঁজি হারানো এসব বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারের দুরবস্থায় অনেকটাই দিশেহারা। কয়েক মাস ধরে চলা এ দরপতনের মাত্রা ভয়াবহ রূপ নিলেও এর পেছনের যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কারসাজি চক্রকে দায়ী করছেন। দরপতনের প্রতিবাদ ও কারসাজি চক্রের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনও করেছেন তারা।

বিনিয়োগকারীরা দিনের পর দিন বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করলেও নীরব থাকছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে গতকাল রবিবার (২১ জুলাই) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক প্রায় একশ পয়েন্ট পড়ে গেলে দরপতনের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি।

বিএসইসির পরিচালক রেজাউল করিমকে আহ্বায়ক করে গঠিত এ তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে উপ-পরিচালক মো. অহিদুল ইসলাম, মো. নজরুল ইসলাম এবং মো. রাকিবুর রহমানকে। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

বিএসইসির এ তদন্ত কমিটি গঠনের পরও থেমে নেই শেয়ারবাজারের দরপতন। আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় সোমবারও (২২ জুলাই) দরপতন হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে শেষ ১২ কার্যদিবসের মধ্যে ১০ কার্যদিবসেই দরপতন হলো। সেই সঙ্গে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের পর ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক আবারও পাঁচ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে গেছে।

সোমবার লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৬৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৬৬ পয়েন্টে। অপর দুটি সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ২৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৭৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। শরিয়াহ সূচক ১৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৯ পয়েন্টে।

শেয়ারবাজারে চলমান এ ভয়াবহ দরপতনের কারণে মতিঝিলের ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে বিনিয়োগকারীদের আনাগোনাও কমে গেছে। সোমবার বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজ ঘুরে হাতেগোনা কয়েকজন বিনিয়োগকারীকে দেখা যায়। বেশিরভাগ ব্রোকারেজ হাউজে একসঙ্গে দু-তিনজন বিনিয়োগকারীর দেখা মিলেছে। অথচ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেও এসব ব্রোকারেজ হাউজ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে জমজমাট ছিল।

মোবারক হোসেন নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, শেয়ারবাজারের দরপতনে প্রতিনিয়ত আমাদের রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমাদের এ রক্তক্ষরণ দেখার কেউ নেই। দিন যত যাচ্ছে ততই হতাশার মধ্যে পতিত হচ্ছি। শেয়ারবাজারের কথা মনে পড়লে মাঝে মধ্যে গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায়। এরপর টেনশনে সারারাত ছটফট করি, ঘুম আর আসে না।

একটি ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তা আজম বলেন, শেয়ারবাজারের যে অবস্থা তাতে শুধু বিনিয়োগকারীরা নন, আমরাও টেনশনে আছি। যেকোনো মুহূর্তে অফিস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ মাসে সবাই ঠিকমতো বেতন পাব কি না এমন দুশ্চিন্তাও কাজ করছে। সামনে ঈদ, কী হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।

মূল্য সূচকের বড় পতনের পাশাপাশি প্রতিদিন লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। সোমবার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া মাত্র ৬০ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার বিপরীতে কমেছে ২৭৭টির। দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬টির।

এমন দরপতনের বিষয়ে বিনিয়োগকারী মনির হোসেন বলেন, কী কঠিন অবস্থায় আছি বলে বোঝানো যাবে না। আমার পোটফোলিও দেখলে আপনিও আঁতকে উঠবেন। শেয়ারবাজারে যে অর্থ বিনিয়োগ করেছি, গত তিন মাসে তা তিন ভাগের একভাগে নেমে এসেছে। কোনো শেয়ারের মুনাফার মুখ দেখিনি। যেটিই কিনেছি, সেটির দামই কমেছে।

এদিকে মূল্য সূচক ও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার এবং ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি লেনদেন খরাও দেখা দিয়েছে। অবশ্য সোমবার ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ আগের কার্যদিবসের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে ৪৬৪ কোটি ১৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩৬৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ লেনদেন বেড়েছে ৯৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

ডিএসইর মতো দুরবস্থা বিরাজ করছে দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। বাজারটির সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২০০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ২১৫ পয়েন্টে। বাজারটিতে হাত বদল হওয়া ২৮৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৫১টির, কমেছে ২১৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টির দাম। লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ১৭ লাখ টাকা।

(ওএস/এসপি/জুলাই ২২, ২০১৯)