গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের গৌরীপুরের শ্যামগঞ্জ খাদ্যগুদামে কৃষকরা ধান বিক্রি করতে পারছে না। গোদাম কর্মকর্তারা কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় না করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রভাবশালীদের ধান ক্রয় করছে। এতে কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছে। ধান ক্রয় না করায় রোববার দুপুরে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাদের সাথে কৃষকের বাক-বিতন্ডা হয়। পরে গুদাম কর্তৃপক্ষ গুদামের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়।

কৃষকরা জানায়, গুদামের অফিস সহকারী মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে গড়ে উঠা সিন্ডিকেটকে টাকা দিয়ে প্রভাবশালীরা রাতের বেলা ট্রাক বোঝাই ধান এনে গুদামে বিক্রি করছে। কিন্ত কৃষকদের ধান গুদামে পড়ে থাকলেও ক্রয় করা হচ্ছেনা।

জানতে চাইলে মাহমুদুল হাসান বলেন, কৃষকদের ধান রাতে বাইরে থাকলে বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হতে পারে এই ভাবনা থেকেই রাতের বেলা ধান গুদামে ঢোকানো হয়েছে। আর আমাদের কোনো সিন্ডিকেট নেই।
খাদ্যগুদাম সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মওসুমে উপজেলার সিধলা ও মইলাকান্দা ইউনিয়নের কৃষকের জন্য শ্যামগঞ্জ খাদ্যগুদামে ধান ক্রয়ের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৯২ মেট্টিক টন। প্রতি মণ ধানের সরকারি মূল্য ১ হাজার ৪০টাকা।

রবিবার দুপুরে শ্যামগঞ্জ খাদ্যগুদামে গিয়ে দেখা যায় গুদামের মূল ফটকে তালা দেয়া। কৃষকদের ধান নিয়ে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছেনা। সাংবাদিকের উপস্থিতিতে গেট খোলা হলে বিক্ষুব্ধ কৃষকরা ভেতরে ঢুকে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাইদুর রহমান ও শ্যামগঞ্জ খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা প্রদীপ রিছিলের সাথে দফায় দফায় বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরে তাদের বুঝিয়ে শোনে শান্ত করা হয়।

গুদাম ও গুদামের বাইরে ঘুরে দেখা যায় কৃষকের সারি সারি ধানের বস্তা পড়ে থাকলেও ক্রয় হচ্ছে না। পাওয়া যায়নি কার্ডধারী প্রকৃত কৃষকের তালিকা। ময়েশ্চার মেশিন না থাকায় ধানের গুণগত মান পরীক্ষা না করেই তড়িঘড়ি করে ক্রয় হচ্ছে প্রভাবশালীদের ধান। কৃষকরা প্রতিবাদ করতে গেলেই দফায় বাক-বিত-া ও হট্টগোল হচ্ছে।

গুদামের লেবার সর্দার আব্দুল গফুর বলেন, স্থানীয় নেতারা গুদামে ধান বিক্রি করায় কৃষকরা ধান বিক্রি করতে পারছে না। তাই একটু পর পর কৃষকরা গুদামের লোকজনের সাথে বাক-বিত-া জড়িয়ে পড়ছেন।
মইলাকান্দা ইউয়িনের কৃষক আজিজুল হক বলেন, গুদাম সিন্ডিকেটকে টাকা না দেয়ায় আমার ধান নেয়া হয়নি। দুই তিন দিন ধরে ধরণা দিয়েও ধান বিক্রি করতে পারিনি।

শ্যামগঞ্জ খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা প্রদীপ রিছিল বলেন, গুদামের ময়েশ্চার মেশিন নষ্ট। যে সকল কৃষকের ধান গুদামে ঢুকানো হয়েছে তাদের ধান অন্য উপজেলা থেকে বরাদ্দ এনে ক্রয় করা হবে। যদি গুদামের কেউ টাকা চায়, আমাকে জানালে আমি ব্যবস্থা নিবো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক মোঃ সাইদুর রহমান বলেন, ১৮২জন কৃষকের তালিকা করা হয়েছে। অতিরিক্ত আরো ৬০/৭০জন কৃষক ধান দিতে আগ্রহী। ডিসি ফুড স্যারের সাথে কথা বলে তা সমন্বয় করার চেষ্টা চলছে। কোনো অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এস/এসপি/জুলাই ২২, ২০১৯)