গাইবান্ধা প্রতিনিধি : আষাঢ় গেল বৃষ্টিতে, শ্রাবপইা ৫দিনেও এলোও কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা নেই। ঋতুচক্রে এ দুই মাস বর্ষাকাল। এসময় সারা দেশের মতো পলাশবাড়ীতে অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। গাইবান্ধার ৬ উপজেলায় এখনও বন্যার পানির নিচে। চারদিকে পানিতে থই থই করে মাঠঘাট। 

কিন্তু পলাশবাড়ীতে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির পানির দেখা নেই এই মাসে। ছিটেফোটা পানিতে কোনো মতে একটি চাষ দিয়ে আর চাষ দিতে পারছেন না চাষিরা। ফলে বৃষ্টির পানির আশায় চাতক পাখির মতো চেয়ে আছেন চাষিরা। কখন নামবে আকাশ থেকে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি আর ধুম পড়বে আমন রোপণের চাষে। তবে এরই মধ্যে বাধ্য হয়ে কেউ কেউ গভীর নলকুপ (সেচযন্ত্র) হতে বেশি দরে পানি কিনে আমণ চাষ শুরু করেছে।

২২ জুলাই সোমবার বিকালে পলাশবাড়ী অঞ্চলের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায় মাঠের পর মাঠ চাষ করা জমি পড়ে রয়েছে। আবার যাদের জমি খালের ধারে তারা শ্যালোমেশিন দিয়ে জমি চাষ করে কোনো মতে রোপণ করেছেন। আবার অনেক জমিতে একটি চাষ দেবার পর পানির অভাবে চাষ তো দূরের কথা চাষকৃত জমি ফেটে যাচ্ছে। অনেক চাষি ধরেই নিয়েছেন আশানুরূপ বৃষ্টির দেখা মিলবে না। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে সেচের উপর ভরসা করা শুরু করেছেন। কারণ কোনো উপায় নেই। এদিকে আমনের বীজতলার সময় পার হয়ে পড়ছে। বীজতলার বয়স হয়ে গেলে রোপণ করলেও ফোলন আসবে না। এক মহা দুঃশ্চিন্তায় দিন পার করছেন কৃষকরা। পলাশবাড়ীতে আমনের চাষাবাদ সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে হয়।

বরেন্দ্রঅঞ্চলে রয়েছে বেশকিছু এলাকায় উঁচু জমি। আর এসব জমিতে চাষের ভরসা বৃষ্টির পানি। বিশেষ করে জেলার ৬ উপজেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ.সাঘাটা,ফুলছড়ি,সাদুল্যাপুর ও গোবিন্দগঞ্জ বন্যা কবলিত হিসাবে ষাচ তো দুরের কথা পানির নিচে রয়েছে বাড়ি ঘড়।

মহদীপুর,বরিশাল, হোসেনপুর বেতকাপা ইউনিয়ানের শত শত চাষির ভরসা আমন চাষে। তারা দীর্ঘদিন ধরে আমন রোপণের জন্য প্রস্তুতি নিলেও পানির অভাবে রোপণ করতে পারছেন না। চাষি মমিন জানান,কোনো মতে নিজের জমি রোপণ করতে পেরেছি। কিন্তু পানির দেখা না পাবার কারণে চরম শঙ্কায় আছি। দু-এক দিনের মধ্যে বৃষ্টির পানির দেখা না পেলে হয়তো রোপণকৃত জমি মরে যাবার আশঙ্কা সৃষ্টি হবে।

সাজু নামের আরেক চাষি জানান, আমন রোপণ হয় বৃষ্টির পানিতে এবং উত্তোলন পর্যন্ত বৃষ্টির পানিই ভরসা। এজন্য চাষে সেচ খরচ বাঁচা যায়। যার ফলে আমন চাষ করে লাভও পাওয়া যায় ভালোই। কিন্তু এবারে চিত্র পুরোটাই উল্টো। এখন পর্যন্ত জমি রোপণের মতো বৃষ্টির পানির দেখা নেই। জানি না বৃষ্টির পানির দেখা পাওয়া যাবে কিনা। যাদের জমি মিনি মটরের আওতায় তারা অতিরিক্ত খরচে সেচ দিয়ে জমি রোপণ করছেন। বিগত বছরগুলোতে এসময় এতোই পরিমাণ বৃষ্টি হতো খাল বিল জমিতে পানিতে থই থই করত। এমন কি বৃষ্টির স্রোতে নিচু এলাকার জমির ধান ভেসে যেত। কিন্তু এবার আষাঢ় মাস পার হয়ে গেলেও শ্রাবণেও বৃষ্টির দেখা না থাকলেও খরতাপ ও ভ্যাপসা গরমে জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে।

কৃষক আলম জানান ৫ বিঘা জমিতে আমন রোপণের গত প্রায় ১৫ দিন আগে চাষ দিয়েছি। কিন্তু বৃষ্টির পানি না হওয়ার কারণে পুনরায় চাষ দেয়া যাচ্ছে না। এমনকি সেচের পানি দিয়ে জমি রোপণ করব তাও হচ্ছে না। কারণ গভীর নলকূপের টান্সফারমা খুলে রাখা হয়েছে। আবার বীজতলার বয়স বেড়ে যাচ্ছে।

কৃষক সহিদুল জানান, ৪ বিঘা জমিতে চাষ দিয়ে বৃষ্টির পানির অপেক্ষায় ছিলাম। বৃষ্টি না হওয়াতে বাধ্য প্রতি ঘণ্টায় ১৬০ টাকা করে দিয়ে জমি রোপণ করেছি। এতে করে সেচ বাবদ বাড়তি খরচ গুনতে হয়েছে।

জুয়েল নামের আরেক চাষি জানান ১৫ বিঘা জমিতে চাষ দিয়ে বৃষ্টির অপেক্ষায় প্রহর গুনছি। কিন্তু ছিটেফোটা বৃষ্টি ছাড়া জমি রোপণের মতো বৃষ্টি হচ্ছে না। এখন দেখছি সেচের পানি ছাড়া কোনো উপায় নেই। বিভিন্ন মাঠে দেখা যায় কৃষকরা এক প্রকার বাধ্য হয়ে সেচের পানি নিয়ে জমি রোপণ করছেন।

একাধিক শ্রমিকরা জানান, বৃষ্টির অপেক্ষা করে দিন অহিবাহিত করেছেন কৃষকরা। শেষে বাধ্য হয়ে সেচ দিয়ে জমি রোপণ করতে হচ্ছে। তাছাড়া কোনো উপায় নেই কারণ বীজের বয়স হয়ে পড়েছে। সময় পার হলে ফলন কম হবে। সেচ দিয়ে জমি রোপণের কারণে বেড়েছে খরচ।

কিন্তু ধানের দাম নেই সে তুলনায়। তবে পলাশবাড়ী অঞ্চলে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হওয়ায় চাষ ব্যাহত হওয়ার আশংকা করছেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা।

(এস/এসপি/জুলাই ২২, ২০১৯)