রূপক মুখার্জি, নড়াইল : নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্স চালক খাইরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানাবিধ অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার অপকর্ম সমূহের আশু তদন্ত এবং শাস্তির দাবি জানিয়ে এলাকার বিক্ষুদ্ধ প্রায় দেড় শতাধিক বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি অভিযোগপত্র স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক), নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসকের নিকট দাখিল করেছেন।

এ দিকে, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নড়াইল জেলা সিভিল সার্জনের নির্দেশে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে গঠিত তদন্ত কমিটি সাত দিনের মধ্যে নড়াইল জেলা সিভিল সার্জনের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা থাকলেও তা দাখিল করতে পারে নাই।
লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্স চালক খাইরুল ইসলাম নড়াইল সদর উপজেলার আউড়িয়া ইউপির সড়াতলা গ্রামের আনু মৃধার ছেলে।

বিগত ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তৎকালিন নড়াইল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুফতী শহিদুল ইসলামের সহযোগিতায় লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্সের চালক হিসেবে চাকুরী পান।

এর আগে খাইরুল ইসলামী প্রতিষ্ঠান আল-মারকাজুলের এ্যাম্বুলেন্সের চালক হিসেবে কর্মরত ছিল। চাকুরী পাওয়ার পর থেকে খাইরুল অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে রোগী পরিবহনের ক্ষেত্রে রোগী ও তার স্বজনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে আসছে। যাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে পারছে না, তাদেরকে বলে দেন এ্যাম্বুলেন্স নষ্ট। অথচ ওই সময়ই অবৈধ আর্থিক সুবিধা নিয়ে অন্য রোগীদের নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। সে রোগী বহনের ক্ষেত্রে কোন নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করে না। ভাড়ার বিপরীতে রশিদ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও খাইরুল কাউকে রশিদ দেয় না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরাতন দুটি এ্যাম্বুলেন্সের যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে লোহাগড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও রহস্যজনক কারণে পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা করে নাই বলে অভিযোগ।

ধুরন্ধর এ্যাম্বুলেন্স চালক খাইরুল নতুন এ্যাম্বুলেন্সের ইঞ্জিন খুলে বাজারে বিক্রি করে পুরাতন ইঞ্জিন নতুন এ্যাম্বুলেন্সে স্থাপন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। চালক খাইরুলের রয়েছে ব্যক্তিগত ২টি এ্যাম্বুলেন্স। সে সরকারি এ্যাম্বুলেন্স বিকল দেখিয়ে ওই গাড়ি দুটিতে অতিরিক্ত ভাড়ায় রোগী পরিবহন করে থাকে। দুটি গাড়ির একটি দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কিত ইসলামি প্রতিষ্ঠান আল-মারকাজুলের কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তার বিরুদ্ধে জঙ্গী কাজে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। কুখ্যাত জঙ্গী আবু জান্দালের (জেলে আটক) অন্যতম সহযোগী সে। সুচতুর চালক খাইরুল সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে প্রায়শই হাসি-তামাশা করে থাকে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সহ শেখ হাসিনা সহ উচ্চ পর্যায়ের নেতা ও মন্ত্রী নিয়ে ঠাট্টা তামাশা, ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে থাকে। তার অপকর্মের প্রতিবাদ করলে সে স্থানীয় মাদকাসক্ত যুবকদের দিয়ে প্রতিবাদীদের শায়েস্তা করতে দ্বিধা করে না।

এ্যাম্বুলেন্স চালক খাইরুলের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে নড়াইল জেলা সিভিল সার্জনের নির্দেশে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার মোয়ামিন কুদ্দুস জিসনকে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দু’জন সদস্য হলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার শেখ আবুল হাসনাত ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারি কাম-কম্পিউটার অপারেটর মঞ্জুর রহমান। গঠিত কমিটি সাত কার্যদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা থাকলেও রহস্যজনক কারণে তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে নাই।

এ ব্যাপাারে তদন্ত কমিটির প্রধান ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার মোয়ামিন কুদ্দুস জিসন সোমবার দুপুরে গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য দক্ষ বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে অধিকতর তদন্তের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করা হয়েছে।


(আরএম/এসপি/জুলাই ২২, ২০১৯)