স্টাফ রিপোর্টার : আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে আগামী ২৯ জুলাই। অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলবে ২ আগস্ট পর্যন্ত।

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাজধানীর রেলভবনে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে রেলওয়ের প্রস্তুতি বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন এ কথা জানান।

রেলের ফিরতি টিকিট বিক্রি ৫ আগস্ট শুরু হয়ে ৯ আগস্ট পর্যন্ত চলবে বলেও জানান মন্ত্রী।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১২ বা ১৩ আগস্ট দেশে মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। তবে আগামী ১২ আগস্ট ঈদ ধরে রেলওয়ের কর্মপরিকল্পনা সাজানো হয়েছে।

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে শহরের পেশাজীবী মানুষ গ্রামে ছুঁটে যান। ঈদের ১০ দিন আগে থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে।

যারা ২৯ জুলাই টিকিট সংগ্রহ করবেন তারা ৭ আগস্ট, যারা ৩০ জুলাই সংগ্রহ করবেন তারা ৮ আগস্ট, যারা ৩১ জুলাই সংগ্রহ করবেন তারা ৯ আগস্ট, যারা ১ আগস্ট সংগ্রহ করবেন তারা ১০ আগস্ট, যারা ২ আগস্ট সংগ্রহ করবেন তারা ১১ আগস্ট ভ্রমণের সুযোগ পাবেন বলে জানান রেলমন্ত্রী।

যাত্রীদের সুবিধার্থে এবার পাঁচটি স্থান থেকে রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘ঈদ উদযাপন উপলক্ষে ঘরমুখো যাত্রীদের অগ্রিম টিকিট কমলাপুর স্টেশন (ঢাকা স্টেশন), বিমানবন্দর স্টেশন, বনানী স্টেশন, তেজগাঁও স্টেশন এবং ফুলবাড়িয়া স্টেশন থেকে বিক্রি হবে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একনাগারে টিকিট বিক্রি চলবে।’

মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি শুরু হবে সকাল ৬টা থেকে। চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বলেও জানান মন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, ‘ঈদ শেষে ফিরতি টিকিটের ক্ষেত্রে যারা ৫ আগস্ট টিকিট সংগ্রহ করবেন তারা ১৪ আগস্ট, যারা ৬ আগস্ট টিকিট সংগ্রহ করবেন তারা ১৫ আগস্ট, যারা ৭ আগস্ট টিকিট সংগ্রহ করবেন তারা ১৬ আগস্ট, যারা ৮ আগস্ট টিকিট সংগ্রহ করবেন তারা ১৭ আগস্ট, যারা ৯ আগস্ট টিকিট সংগ্রহ করবেন তারা ১৮ আগস্ট ভ্রমণ করতে পারবেন।’

বরাবরের মতো এবারও একজন যাত্রী চারটির বেশি টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন না জানিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘ঈদের অগ্রিম বিক্রিত টিকিট ফেরত নেয়া হবে না। জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে।’

ঈদের ১০ দিন আগে এবং ঈদের পর ১০ দিন পর্যন্ত ট্রেনে ভিআইপিদের জন্য সেলুন সংযোজন করা হবে না। আগামী ১১ ও ১৪ আগস্ট ঢাকা-কলকাতা-ঢাকার মধ্যে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করবে না বলেও জানান রেলমন্ত্রী।

প্রতিদিন ২৬ হাজার ৫০০ অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে জানিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘যাত্রীরা ৫০ শতাংশ টিকিট মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে কিনতে পারবেন। স্টেশন কাউন্টার থেকে ৫০ শতাংশ টিকিট অগ্রিম সংগ্রহ করতে পারবেন।’

ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত যাত্রী চাহিদা মেটানোর জন্য এক হাজার ৪৩৭টি যাত্রীবাহী কোচ সার্ভিসে যুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।

রেলে প্রতিদিন দুই লাখ ৭৭ হাজার মানুষ চলাচল করলেও ঈদের সময় তা বেড়ে প্রায় চার লাখ হয়ে যায় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

উত্তরাঞ্চলে ঈদযাত্রায় বিপত্তির শঙ্কা

রেলমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বন্যার মধ্যে আছি। রাস্তাঘাট ও গ্রামীণ জনপদ যেভাবে আক্রান্ত হয়েছে, আমাদের রেল বিভাগও এটা থেকে বাদ যায়নি। দুটি রুটে যেমন বগুড়া থেকে গাইবান্ধ হয়ে কুড়িগ্রাম লালমনিরহাটের যে ট্রেন, সেই ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে বর্তমানে। সেখানে ৬ কিলোমিটার রেললাইন ওয়াশআউট হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘যমুনা ও তিস্তা নদীর আশেপাশের এলাকায় রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এইটুকু বিপর্যয় ছাড়া বাকি সবই ঠিক আছে।’

অ্যাপ নিয়ে অনিশ্চয়তায় খোদ মন্ত্রণালয়

অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কাটার ক্ষেত্রে গত ঈদুল ফিতরের সময় যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এবারও একই অবস্থা হবে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘রেল বিভাগ প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন না করায় সিএনএস নামের একটি সংস্থার মাধ্যমে অ্যাপ সেবাটি পরিচালিত হচ্ছে। ওই কোম্পানি আমাদের জানিয়েছে তারা আগের সমস্যা কাটিয়ে উঠেছে, এবার আর মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। কিন্তু আসলেই ভোগান্তি হবে কি না তা আমরাও জানি না। যখন মানুষ এই সেবা গ্রহণ করবে তখন আপনাদের মূল্যায়নের মাধ্যমেই বিষয়টি বুঝতে পারব আমরা।’

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন এ বিষয়ে বলেন, তারা (সিএনএস) তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে বলে জানিয়েছে। এটি পরীক্ষা করতে এটুআইকে নিয়ে ছোট একটি কমিটি কাজ করছে। গত ঈদে তাদের সক্ষমতা ছিল এক মিনিটে ১৫ হাজার হিট নিতে পারত, এখন সেটা বৃদ্ধি করে এক লাখ করেছে বলে জানিয়েছে আমাদের। তাদের দাবি সঠিক আছে কি না তা টেকনিক্যাল কমিটি পরীক্ষা করবে, আগামী বৃহস্পতিবার আমরা রিপোর্ট পাব।

আন্তঃনগর ট্রেনের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল

নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘ঈদুল আজহার পাঁচদিন আগে ৭ আগস্ট থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত সব আন্তঃনগর ট্রেনের কোনো সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে না। ঈদের পর ডে-অফ কার্যকর করা হবে। ছুটি প্রত্যাহারের কারণে পূর্ব ও পশ্চিম মিলে প্রায় ৪৮টি ট্রেন বিশেষ ট্রিপ হিসেবে পরিচালিত হবে।’

যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে ৭ থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত কন্টেইনার ও জ্বালানি তেলবাহী ট্রেন ছাড়া কোনো পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করবে না বলে জানান রেলমন্ত্রী।

কালোবাজারি প্রতিহতে উদ্যোগ

নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে বড় বড় স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি, বিজিবি ও স্থানীয় পুলিশ এবং র্যাবের সহযোগিতায় সার্বক্ষণিক প্রহরার ব্যবস্থা থাকবে। তাছাড়া জেলা প্রশাসকদের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের মতো ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হবে, তারা টিকিট বিক্রির স্থানে মনিটরিং করবেন।’ মন্ত্রী বলেন, ‘রেলের ভেতর কিংবা বাইরের কেউ যদি টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত থাকে আমাদের জানান, আমরা ব্যবস্থা নেব।’

সংবাদ সম্মেলনে রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শাসছুজ্জামানসহ মন্ত্রণালয় এবং রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এসপি/জুলাই ২৩, ২০১৯)