জাককানইবি প্রতিনিধি : দেশের বন্যা পরিস্থিতি দিন দিন আরো অবনতি হচ্ছে । প্রবল বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢালে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে । যাতে করে বিশুদ্ধ পানি, খাবার সংকট দেখা দিয়েছে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে । ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছে লক্ষাধিক মানুষ। যত দিন যাচ্ছে ততই মানুষের দূর্ভোগ চরমে পৌচ্ছাছে । 

দেশের বন্যা কবলিত মানুষের জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ইতোমধ্যে ত্রাণ পৌছাতে শুরু করেছে । দুর্ভোগের এ চিত্র নাড়া দিয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। বন্যা কবলিত এলাকায় অসহায় মানুষের পাশে দাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সহ নানা সংগঠন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্যাদুর্গতের সহযোগিতা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে “বানভাসি” নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

ভিন্নমাত্রার এ পারফরম্যান্স আর্ট অনুষ্ঠানের নির্দেশক নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক মেহেদি তানজির জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় সংগঠনগুলিকে সংযুক্ত করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আগ্রহী শিক্ষকদের সক্রিয় অংশগ্রহণে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাড়াবার জন্য এই প্রয়াস। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পুকুরকে বন্যার্ত অঞ্চলের একটুকরো হিসেবে উপস্থাপন করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ৩টি স্থানকে সংযুক্ত করে চলবে এই পারফরম্যান্স। গান, নাচ, যন্ত্রবাদন, কবিতার পাশাপাশি চিত্রাঙ্কন থাকছে পর্যায়ক্রমিক ভাবে। থাকছে নিজেদের তৈরী খাবার বিক্রির ব্যবস্থা এবং দলগত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে বন্যার্তদের জন্য সাহায্য উত্তোলন। আর বন্যার্ত মানুষের কষ্ট উপলব্ধির জন্য দুইদিন তাদের মতো বসবাসের চেষ্টা।

‘বন্যার্তদের পাশে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়’ স্লোগানকে সামনে রেখে গত ২২ এপ্রিল আইন ও বিচার বিভাগের উদ্যোগে জামালপুরের ইসলামপুরে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় বন্যার্তদের মাঝে চারশতাধিক পরিবারকে শুকনোচিড়া, গুড়, কলা, স্যালাইন, বিস্কুট, মোমবাতি, মেস, পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য ফিটকিরি ও পানিবাহিত রোগের ঔষধ সহ নগদ প্রদান করা হয়।

জামালপুরে বন্যা কবলিত বৃদ্ধা রহিমা বেগম বলেন, আমাগো ঘরে বন্যার জল উঠছে। আমাগো সাহায্য করার জন্য আপনেরা আইছেন আমরা খুব খুশি হইছি। আল্লাহ আপনাগো ভালা করুক।

বন্যার্তদের সাহায্য করার জন্য জাককানইবি উদীচী শিল্পী সংসদ আগামী ২৪,২৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স হলে আয়োজন করেছে ডকুমেন্টারি ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ থেকে বন্যার্তদের সাহায্য করার জন্য ময়মনসিংহ, ত্রিশাল, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থান থেকে এই ত্রাণসামগ্রীর টাকা সংগ্রহের কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার জানান, ‘সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আসলে এত বেশি মানুষ বন্যার কারণে দুর্ভোগের মধ্যে আছে যে, তাদের অনেক বড় সহায়তা প্রয়োজন। তাই চেষ্টা করছি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকেও এ বিষয়ে সংযুক্ত করতে। যাতে অনেক মানুষকে সহায়তা করা সম্ভব হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু-নীলদলের সভাপতি ড. সিদ্ধার্থ দে জানান, বন্যা দুর্গতদের অর্থ সংগ্রহ করে সাহায্য করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি অনুষদের আমরা শিক্ষক প্রতিনিধিদের দায়িত্ব দিয়েছি।

সরেজমিনে দেখা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষদের পাশে দাঁড়াতে সাহায্যের বক্স হাতে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দিনরাত অর্থ সংগ্রহের কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা। এ কাজে এগিয়ে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, জেলা ছাত্র কল্যাণ সংগঠন সহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীরা জানান, মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। বিপদে মানুষের বিপদে মানুষই পাশে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ববোধ থেকে বানভাসি মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি। একদিনের জন্য তাদের মুখে খাবার দিয়ে তাদের মুখের সামান্য হাসি ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শুধু পড়াশুনার মধ্যেই আটকে থাকবে না। তাদের সামাজিক দায়িত্বও পালন করতে হবে। দেশের মানুষ যখন দুর্ভোগের মধ্যে আছে তখন তাদের পাশে দাঁড়ানো সেই দায়িত্বর মধ্যেই পড়ে। সেই জায়গা থেকেই শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এসেছে। একজন শিক্ষার্থী যখন সামাজিক দায়িত্ব নেয়া শিখবে, যখন তার মাঝে মনুষ্যত্ববোধ কাজ করবে তাই শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগ বন্যার্তদের সহযোগীতা করবে । সকলকে আহবান জানাই বন্যার্তদের পাশে এগিয়ে আসুন।

(এম/এসপি/জুলাই ২৩, ২০১৯)