মাগুরা প্রতিনিধি : বখাটের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মাগুরার শালিখায় এক স্কুলছাত্রী বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। শালিখা উপজেলার হরিশপুর গ্রামের গোলাম কিবরিয়ার কন্যা মিতা স্থানীয় গোবরাপঞ্চ পল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী।

বুধবার স্কুলে গিয়ে মিতা বিষপান করে। প্রথমে তাকে শালিখা ও পরে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে ওই রাতেই সে মারা যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় নিজ গ্রামে তার মরদেহ দাফন করা হয়।

মিতার বাবা গোলাম কিবরিয়া অভিযোগ করেন, যশোরের চুড়ামনকাঠি এলাকার সানি ওরফে রাজা হরিশপুর গ্রামে তার ভাইয়ের শ্বশুর বাড়িতে আসা-যাওয়ার সুযোগে তার মেয়ের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে। পরে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এক বছর আগে স্থানীয় গোবরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালে তার নাবালিকা মেয়েকে সানি ওরফে রাজা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় নিয়ে দেহ ব্যবসায়ী চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। এ ঘটনায় তিনি শালিখা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন (যাহার নং-৪৭০, তাং-১১-০৭-১৮ইং)। পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে অপহরণের ১৫-১৬ দিন পর ঢাকার কাফরুল এলাকার একটি বাসা থেকে মিতাকে উদ্ধার করে। এ সময় তাকে আটকে রেখে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসা করানোর অপরাধে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার কাছিহারা গ্রামের গোলজার শেখের পুত্র নাজমুল শেখ ও বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার খাসতাবক গ্রামের মৃত ইউনুস আলীর স্ত্রী শাহিদা বেগমকে আটক করে।

এ ঘটনায় তিনি শালিখা থানায় নারী শিশু নির্যাতন দমন ২০০০ ও সংশোধিত ২০০৩ আইনে নাজমুল, শাহিদা ও সানি ওরফে রাজার নামে মামলা দায়ের করেন। শালিখা থানা মামলা নং-৫ তাং-২৭-০৭-১৮।

পুলিশ সানিকে আটক করতে না পারলেও ঢাকা থেকে আটকৃত দুইজনকে ওই মামলায় আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। পরে জেলহাজত খেটে দুই আসাসী জামিনে মুক্ত হয়।

গোলাম কিবিরিয়া বলেন, তার মেয়ে বাড়ি ফিরে সুস্থ্য হয়ে আবারো লেখাপড়া শুরু করে। এ বছর অষ্টম শ্রেণীতে ভাল ফলাফল করে নবম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু সম্প্রতি সানি ও নাজমুল তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে নেওয়ার জন্য মোবাইলে ও বিভিন্ন লোকমারফৎ তাকে চাপ দিতে থাকে। একইভাবে মোবাইল ফোনে ও মাঝেমধ্যে সানি এলাকায় এসে মিতাকে উত্যক্ত করতে থাকে।

মামলা তুলে না নিলে তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন ও হত্যা করা হবে বলে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে।প্রতিনিয়ত তাদের এ অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বুধবার সকালে স্কুলে গিয়ে মিতা বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এ সময় তাকে চিকিৎসার জন্য শালিখা ও পরে যশোর আড়াইশ’ বেড হাসপাতালে নিয়ে গেলে ওই রাতেই তার মৃত্যু ঘটে। ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজ গ্রামে মিতার দাফন সম্পন্ন হয়।

মিতার বাবা বলেন, বিষপানের পর সে বার-বার বলতে থাকে সানি-নাজমুল আমাকে বাঁচতে দিলোনা।
বখাটের অত্যাচারে স্কুল পড়ুয়া মেয়ের বিষপানে আত্মহত্যা করলেও গোলাম কিবরিয়া কোন মামলা করবেন না বলে জানান। কারণ একবার মামলা করে তার মেয়ের জীবন চলে গেছে।

এবার মামলা করলে তাকেও মরতে হবে। তাছাড়া দরিদ্রতার কারনে মাললার খরচ চালানোও তার পক্ষে সম্ভব নয় বলে তিনি জানান।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাসী জানান, বখাটের প্ররোচনা মেয়ের জীবন গেলেও নিজ গ্রামে মুল অভিযুক্ত সানির আত্মীয়-স্বজন ও ঢাকায় বসবাসকারী গোলাম কিবরিয়ার এক ভাতিজার চাপের কারনে তিনি মামলা করতে সাহস পাচ্ছেন না। এমনকি সাংবাদিকদের কাছে মেয়ের মৃত্যুর তথ্য দেওয়ার অপরাধে ওই চক্রটির ধমকে এখন তিনি কারো সাথে কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না। এমনকি তার মোবাইল ফোনটি পর্যন্ত তার কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছেন।

শালিখা থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, হরিশপুর গ্রামের স্কুলছাত্রী মিতার আত্মহত্যার বিয়ষটি তিনি শুনেছেন। পরিবার অভিযোগ দিলে তারা আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। ইতিপূর্বে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মিতার বাবার দায়ের করা মামলা মাগুরা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলেও ওসি তরিকুল ইসলাম জানান।

(ডিসি/এসপি/জুলাই ২৭, ২০১৯)