জামালপুর প্রতিনিধি : নিন্মমানের ক্রোকারিজ পণ্য বিক্রির মাধ্যমে অভিনব কায়দায় মানুষ ঠকানোর খেলায় নেমেছে রাফি মার্কেটিং কনসেপ্ট নামে ভুঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠান। পাড়া মহল্লায় মাইকিং করে বিক্রয়কর্মী বাড়ি বাড়ি গিয়ে লোভনীয় অফারের ফাঁদ পেতে চলছে তাদের লাটরীর মাধ্যমে মার্কেটিং কার্যক্রম। জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর বাজার এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ৭দিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছে এই প্রতারণার ব্যবসা।

‘১শ টাকায় স্ক্র্যাচ কার্ড কিনলে ঘষলে পাবেন দামি দামি পণ্য। প্রথমে স্ক্র্যাচ কার্ড ঘষে পণ্যের নাম ভেসে উঠার পর বলছে এই পণ্য আমাদের শরিফপুর বাজারে অফিসে গিয়ে ১৫’শ টাকায় উত্তোলন করতে হবে। তাদের এই আকর্ষনীয় অফারে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষজন। ১’শ টাকা দিয়ে কিনছে স্ক্র্যাচ কার্ড। কার্ড ঘষে যে পণ্যের নাম পাওয়া যায় তা খুবই নিন্ম মানের এবং ১৬ টাকার চেয়ে কম দামি পণ্য পাওয়া যায় এমনই অভিযোগ করেছে শহরের মিয়াপাড়া গ্রামের ফাহারিয়া ইসলাম। অনেকেই স্ক্র্যাচকার্ড কেনার পর নিন্মমানের পণ্যের খবর পেয়ে পণ্য তুলতে যাচ্ছেনা। স্ক্র্যাচ কার্ড বিক্রি করেই হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।

বিভিন্ন এলাকার ভুক্তভোগীদের অভিযোগে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শরিফপুর বাজারে পাশে তোতা মিয়ার বাড়ির সামনে রাফি মার্কেটিং কনসেপ্ট নামে একটি সাইনবোর্ড ঝুলছে। বাড়ীর সামনে জটলা হট্ট্রগোল। ১শ টাকার স্ক্র্যাচ কার্ড হাতে নিয়ে পণ্য তুলতে আসছে লোকজন। ১৫’শ টাকা জমা দিয়ে নিন্মমানের পণ্য হাতে পেয়ে ফ্যাকাশে মুখে বাড়ি ফিরছে। আবার স্ক্যাচ কার্ডে ঘষার পর যে পণ্য লেখা সেই পণ্য সরবরাহ নেই বলে অনেক ক্রেতাকেই খালি হাতে ফেরত দিচ্ছে। প্রতারণার শিকার শহরের মুসলিমাবাদ গ্রামের অবলা বেগম নামে ৬০ বছর বয়সি এক বৃদ্ধার সাথে কথা হয়। তিনি ১’শ টাকার স্ক্র্যাচ কার্ড নিয়ে সিরামিকের পণ্য পেয়েছেন। পণ্য সরবরাহ নেই বলে খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আদৌ পাবেন কিনা তাদের প্রতারণা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

অফিসের অভ্যন্তরে গিয়ে দেখি নিন্মমানের সারি সারি ক্রোকারিজ পণ্য, ফ্যান, ইলেকট্রিক চুলা, ফ্লাক্স সাঁজানো। তাও খুবই নিন্মমানের। তবে স্ক্র্যাচ কার্ডের গায়ে সেলাই মেশিন, এলইডি টিভি ও ফ্রিজসহ দামি দামি পণ্যের হদিস পাওয়া যায়নি। মার্কেটিং ম্যানেজারের টেবিলের উপর দেয়ালে ঝুলছে লিমিনেটিং করা মাদারগঞ্জ পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স। তাদের প্রচারপত্রে হেড অফিসের ঠিকানা লেখা রয়েছে মিডফোর্ড রোড, ঢাকা-১১০০। খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায় এই নামে মিডফোর্ড এলাকায় কোন প্রতিষ্ঠান নেই। নানা স্থানে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায় এই প্রতারণা ব্যবসার আড়ালে কলকাঠি নাড়ছে সাজু নামে এক ব্যক্তি।

এই লটারী ব্যবসার বৈধ কোন কাগজ পত্র রয়েছে কিনা প্রশ্ন করলে রাফি মার্কেটিং কনসেপ্টের জামালপুর শাখার মার্কেটিং ম্যানেজার মো: শাকিল হাসান এ প্রসঙ্গে বলেন, মাদারগঞ্জ পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে এবং শরিফপুরের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য দেলোয়ার হোসেনের অনুমতি রয়েছে।

মাদারগঞ্জ পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে জামালপুরে ব্যবসা ও ইউপি সদস্যের অনুমতি নিয়ে লটারী ব্যবসা করা যায় কিনা প্রশ্ন করলে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।

শরিফপুর ইউপি সদস্য মো: দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি এই ব্যবসার সাথে জড়িত নয় এবং অনুমতিও দেয়নি। এই প্রতারকেরা আমার নাম বিক্রি করছে।

জামালপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: সালেমুজ্জামান, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবির বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে লটারির অনুমতি নেয়নি। প্রতিষ্ঠানটির নাম প্রথম শুনলাম। মানুষের সাথে পণ্য বিক্রির নামে প্রতারণা করে থাকলে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(আরআর/এসপি/জুলাই ৩১, ২০১৯)