স্টাফ রিপোর্টার : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে কারওয়ান বাজারে প্রতি মাসে একটা করে খুন হতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তা বন্ধ হয়েছে। চাঁদাবাজিও বন্ধ করেছি। তবে সম্প্রতি এখানে চাঁদাবাজির কিছু কিছু খবর পাওয়া যাচ্ছে। আমি স্পষ্ট করে বলছি, চাঁদাবাজি করলে কারওয়ান বাজার ছেড়ে চলে যান।

রবিবার দুপুরে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন-বিরোধী সচেতনতামূলক সভা এবং পরিচ্ছন্নতা অভিযানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কারওয়ান বাজারে মাস্তানি-চাঁদাবাজি হতে দেয়া হবে না। যেই চাঁদাবাজি করবেন তাদের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মোহনা টিভির একজন সিনিয়র সাংবাদিক নিখোঁজ রয়েছেন। তাকে উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গুলশানের ডিসি মোস্তাক আহমেদকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মোহনা টিভির সাংবাদিককে দ্রুত খুঁজে বের করার জন্য। আশা করছি দ্রুতই আমরা খুঁজে পাব।

মন্ত্রী বলেন, বুড়িগঙ্গা নদীতে ৬/৭ ফুট শুধু পলিথিনের গার্বেজ। বিদেশ থেকে এক্সপার্ট আনা হচ্ছে। তবুও আমরা পুরোপুরি পারছি না। এর কারণ পলিথিন। ক্যান্সার, কিডনি রোগী কেন বাড়ছে? কারণ পলিথিন। মাছের ভেতরে পলিথিন ঢুকে গেছে। তিমি মাছ যখন ধরা পড়ে কিংবা উপকূলে চলে আসে তখন দেখা যায় পেটে পলিথিন আর পলিথিন। আমাদের বর্তমান সরকার পলিথিনের ব্যাপারে কঠোর পলিথিন-বিরোধী আইন করেছে। কিন্তু কেউ আইন মানি না। আমরা এখন কঠোর হব।

তিনি বলেন, ঢাকা শহরের মূল সমস্যা আমরা গার্বেজ অপসারণ করতে পারছি না, ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, পানি নিষ্কাশন করা যাচ্ছে না। কারণ পলিথিন। পলিথিন যাতে আমরা ব্যবহার না করি সে জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমরা পলিথিন আর ব্যবহার করব না। পলিথিন যে ক্ষতি করে সেগুলো যদি বিবেচনায় নিই তাহলে কেউই পলিথিন ব্যবহার করতে পারে না।

সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, আগে পলিথিন ছিল না। চটের ব্যাগে বাজার করতে যেত মানুষ। সভ্যতার নামে পলিথিনের প্রসার ঘটে যা সভ্যতার জন্যই ক্ষতিকর। কিন্তু এরপরও পলিথিন ব্যবহার না কমে বরং বেড়েছে।

তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু অর্ডিনেন্স আকারে করেছিলেন পানিদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন। বর্তমান সরকার পলিথিন নিষিদ্ধ করেছে। তবুও কেন আমরা নিষিদ্ধ জিনিস ব্যবহার করব? বিশেষ করে পলিথিনের শপিং ব্যাগ কোনোভাবে চলতে দেয়া যাবে না। বিকল্প ব্যাগ সোনালী ব্যাগ বাজারে আসছে। সোনালী ব্যাগ উৎপাদনের জন্য মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দিয়েছে। খুব শিগগিরই বাজারে আসবে। জেল-জরিমানা দিয়ে আমরা পলিথিন বন্ধ করতে চাই না। ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই পলিথিন পরিহার করুন, পরিবেশবান্ধব বিকল্প ব্যবহার করুন। তাহলে পলিথিন চলবে না, উৎপাদনও হবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার বলেন, পলিথিনের বিচরণ সর্বত্র। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও পলিথিন পৌঁছে গেছে। এই পলিথিনের কারণে ড্রেনেজ সিস্টেম আজ অকার্যকর হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টিতেই পানি জমছে, জলাবদ্ধতার কারণ এই পলিথিন। পলিথিন সবার জন্য ক্ষতিকর। সবাইকে সহযোগিতা না করলে এই সমস্যা থেকে বের হওয়া সম্ভব না। পলিথিন নয়, ব্যবহার করব সোনালী আশের ব্যাগ। তাহলে এইদেশে শুধু নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও পাটের বড় মার্কেট তৈরি হবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল্লাহ আল মোহসিন চৌধুরী বলেন, সারা পৃথিবীতে পলিথিন পরিহারের জন্য প্রচার-প্রচারণা, আইন করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে পলিথিনের ব্যবহার হঠাৎ বেড়েছে। পলিথিন ব্যবহারে অনেক বেশি ক্ষতি হয় মানবদেহে। ক্যানসারসহ মরণঘাতী অনেক রোগের কারণ পলিথিন।

ব্যবসায়ীরা বলেন, ৫ হাজার টাকার ক্ষুদে ব্যবসায়ীকে পলিথিন বিক্রির দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু যেখানে উৎপাদন, যেখানে ডিলার ব্যবসা সেখানে আগে বন্ধ করতে হবে। তাহলে কারওয়ানবাজার কেন কোথাও খুচরা পলিথিন বিক্রি হবে না।

(ওএস/এসপি/আগস্ট ০৪, ২০১৯)