রাজন্য রুহানি, জামালপুর : গোয়াল ঘরে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পুড়ে মারা গেছে দুধেল গাভী ও বাছুরসহ ৫টি গরু। অগ্নিদগ্ধ আরও ৩টি গরুর মধ্যে জবাই করা হয়েছে মধ্যে ১টি, বাকি দুই গরু মারাত্মক আহত। গোয়াল থেকে গরু বের করার সময় শরীরের একাংশ পুড়ে গেছে মালিকের। ঢাকার গো-হাটায় দুটো ষাড় বেচার কথা ছিল। তা আর হলো না। গরু পোড়ার সাথে সাথে পুড়ে গেল আসাদুল্লার স্বপ্ন, মুখ থুবড়ে পড়ল গোটা পরিবার।

দুটো দুধেল গাভীর দুধ দিয়ে সংসারের খরচ চালাতো আসাদুল্লা (৩০)। দেখভাল করতো বাবা দুলাল মন্ডল (৫৫)। হাটে হাটে গিয়ে গরু কিনে সেই গরু লালন-পালন করে দুটো অর্থ উপার্জনই ছিল আসাদুল্লার কাজ। গরু মোটাতাজা হলে হাটে গিয়ে বেচে দিতো সেই গরু। এভাবেই সঞ্চয় করছিলেন তিনি। সঞ্চয়ের টাকায় দুটো গাভী কিনেছিলেন। গাভীর দুধ বেচে চলতো তাদের সংসার।

৩ আগস্ট শনিবার দিবাগত রাত ২ টার সময় কে বা কারা গোয়াল ঘরে আগুন দিয়েছে জানে না কেউ। আগুনের তাপে গরুর ডাক-আর্তনাদে ঘুম থেকে উঠে ছুটে যায় বাড়ির মানুষেরা। ততক্ষণে আগুন সারা গোয়াল ঘরে ছড়িয়ে পড়েছিল। মাত্র ৩টি গরু গোয়াল ঘর থেকে বের করতে সক্ষম হয়েছিলেন আসাদুল্লা। গোয়াল ঘর, খড়ের গাদা যখন পুড়ে প্রায় শেষ, তখন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে জামালপুর সদর থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের দল। মুমূর্ষু অবস্থায় এক গরু জবাই করা হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় কাতরাচ্ছে একটি গাভী ও একটি বাছুর। গোয়াল ঘর থেকে গরু বের করার সময় পুড়ে যায় আসাদুল্লার শরীরের একাংশ। জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসাদুল্লা চিকিৎসা নিচ্ছেন।

২ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছিলেন দুটো ষাড় গরু। আগামিকাল সোমবার সেই ষাড় দুটোকে ঢাকার গো-হাটায় তোলার কথা ছিল। ‘আমগরে সব শেষ হয়ে গেছে গো বাজান’ বলে আর্তনাদ করছিলেন আসাদুল্লার পিতা। ‘দুইডে গাইয়ের দুধ বেইছে সংসার চালাইতেম, এহন হেই পথও বন্ধ অয়ে গেল’ বলে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানাচ্ছিলেন তিনি। আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছে দুটো দুধেল গাভী, একটা বকনা বাছুর ও দুটো ষাড় গরু। সব মিলিয়ে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৮ লাখ টাকা।

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার চরবাণী পাকুরিয়া ইউনিয়নের নলের চর মধ্যপাড়া গ্রামে ঘটেছে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি। রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মেলান্দহ থানার ওসি মো. রেজাউল করিম। এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয় নি এখনো।

(আরআর/এসপি/আগস্ট ০৪, ২০১৯)