রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাও) প্রতিনিধি : সংবাদ পরিবেশনের জন্য তথ্য চাওয়ায় ঠাকুরগাওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) সোহাগ চন্দ্র সাহা কর্তৃক স্থানীয় দুই সাংবাদিক হেনস্থার শিকার হয়েছেন। 

সাংবাদিক দুজন হলেন রাণীশংকৈল প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক ভোরের কাগজের উপজেলা প্রতিনিধি মোবারক আলী ও সাবেক সম্পাদক দৈনিক করতোয়ার উপজেলা প্রতিনিধি মোঃ বিপ্লব। ঘটনাটি গত সোমবার বিকেলে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমির কার্যালয়ে ঘটে।

সাংবাদিক মোবারক জানান, সোমবার বিকালে এসিল্যান্ড মহোদয়কে তার ব্যবহৃত সরকারী পুল গাড়ী নিয়ে রাণীশংকৈল উপজেলা থেকে জেলা সদর ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতিদিন যাওয়া আসার নিয়ম আছে কিনা এবং কি এই অতিরিক্ত গাড়ী চলাচলে জ্বালানী তৈলের খরচ কোন ফান্ড থেকে ব্যয় হয় মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি তার অফিসে সরজমিনে আসতে বলেন, সে অনুযায়ী সাংবাদিক মোবারক স্থানীয় আরেক সাংবাদিক বিপ্লবকে সাথে নিয়ে এসিল্যান্ডের অফিসে আসেন।

এ সময় সাংবাদিক মোবারক আবারও একই প্রশ্ন করলে এসিল্যান্ড সোহাগ চন্দ্র সাহা সাংবাদিক মোবারকের কর্মরত পত্রিকার পরিচয় পত্র দেখতে চান। এ সময় পরিচয় পত্র দেখালে এসিল্যান্ড পরিচয় পত্রটি হাতে নিয়ে বলেন আপনার কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। আপনি আগে মেয়াদপূর্ণ পরিচয়পত্র নিয়ে আসেন তারপরে আপনাকে তথ্য দিবো। এরপরে ঐ সাংবাদিক তার কর্মরত পত্রিকায় ফোন দিয়ে এসিল্যান্ডকে প্রতিনিধি বিষয়ে তথ্য নিতে বললেও তিনি তা নিতে অস্বীকৃতি জানান।

পরে সাংবাদিক মোবারক সঙ্গীয় সাংবাদিক বিপ্লব কে নিয়ে এসিল্যান্ডের কার্যালয় থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে উঠলে এসিল্যান্ড মোটরসাইকেল আটক করে সাংবাদিক মোবারককে গাড়ীর কাগজপত্র দেখাতে বলেন, এ সময় সাংবাদিক মোবারক বলেন, আমার তো গাড়ী নেই।

এটা বিপ্লবের গাড়ী সে-সময় এসিল্যান্ড সাংবাদিক বিপ্লবকে গাড়ীর কাগজ দেখাতে বলেন, সাংবাদিক বিপ্লব গাড়ীর বৈধ কাগজ দেখিয়ে সেখান থেকে গাড়ী যোগে মোবারককে নিয়ে আসেন।

পরে ঐদিনেই সন্ধায় প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে জরুরী সভা ডেকে এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে সম্মিলিত ভাবে বিষয়টি গুরত্ব সহকারে দেখার সিদ্বান্ত গৃহিত হয়।

অপরদিকে ঐদিনেই সন্ধায় এসিল্যান্ড সোহাগ চন্দ্র সাহার আয়োজনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেীসুমী আফরিদার সভাপতিত্বে রাণীশংকৈলে কর্মরত সাংবাদিকদের বিরুদ্বে অফির্সাস ক্লাবে এক জরুরী বৈঠক হয় বলে একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে।

এ ব্যাপারে সাংবাদিক মোবারক আলী জানান, সরকারী গাড়ী নিয়ে এসিল্যান্ড অফিসের কাজ বাদ দিয়েও তার কর্মস্থল রানীশংকৈল থেকে জেলা সদর ঠাকুরগাওয়ে প্রতিদিন যাওয়া আসা করে যা আনুমানিক মোট ১৬৮ কিলোমিটার। এ জ্বালানী তেলের খরচ কোন ফান্ড থেকে হয় তা নিয়ে সংবাদ পরিবেশনের জন্য তথ্য চাওয়ায় এসিল্যান্ড আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকেসহ আমার সহকর্মিকে হেনস্থা করে। তিনি আমার কার্ড দেখতে চেয়েছেন আমি দেখিয়েছি তিনি মেয়াদর্ত্তীণের কথা বলেছেন আমি বলেছি ৩০জুন পর্যন্ত মেয়াদ ছিলো। নবায়নকৃত কার্ড অতি শিগগির আসবে। আপনার আমাকে এ পত্রিকার প্রতিনিধি মনে না হলে অফিসে ফোন দিয়ে জানতে পারেন। কিন্তু তিনি তা জানেন নি। উল্টো আমাকে বিভিন্ন ভাবে আক্রোমণের চেষ্টা করেছেন।

তবে এ ব্যাপারে এসিল্যান্ডের সাথে সোমবার রাতে প্রেস ক্লাবের বর্তমান আহবায়ক আনিসুর রহমান বাকী মুঠোফোনে কথা বললে তিনি মঙ্গলবার তার অফিসে বসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার আহবান জানান।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) আমিনুল ইসলাম বলেন, এসিল্যান্ডের ব্যবহৃত জেলা প্রশাসকের পুল গাড়ীটি তিনি নিজ ষ্টেশন ছাড়া অন্য ষ্টেশনে অফিসের বাইরে কাজে নিয়ে যেতে পারেন না এটা বে আইনি। তবে নিয়ে গেলে অব্যশই জেলা প্রশাসকের অনুমিত অথবা সরকারী কোন কাজে ব্যবহার করতে হবে।

উল্লখ্য যে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি সোহাগ চন্দ্র সাহার কর্মস্থল রাণীশংকৈল হলেও তিনি ঠাকুরগাও সদর থেকে যাওয়া আসা করেন। এবং এ যাওয়া আসায় পরিবহণ হিসাবে ব্যবহার করেন জেলা প্রশাসকের পুল গাড়ীটি। তিনি প্রতিদিন গড়ে দুই বার যান দুই বার আসেন ঠাকুরগাও জেলা সদর থেকে।

দুই সাংবাদিককে হেনস্থা করায় এসিল্যান্ডের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানিয়ে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁও প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুনসুর আলী ও সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান মিঠু ঠাকুরগাও অনলাইন জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহম্মেদ রাণীশংকৈল অনলাইন জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আকাশ সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম শাওন পীরগঞ্জ বালিয়াডাঙ্গী হরিপুর উপজেলার কর্মরত সাংবাদিকরা।

(কেএএস/এসপি/আগস্ট ০৬, ২০১৯)