রহিম আব্দুর রহিম


গ্রামের নাম খনিয়াপাড়া, সম্প্রতি এক রাতে, এক মা তার দু’সন্তানকে ঘরে রেখে; বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে ওই মা প্রতিবেশির ঘরে বসে টেলিভিশন দেখছিলেন। ঘুমন্ত শিশু জেগে ওঠে দেখতে পায়, বিছানায় তার মা নেই। শুরু হয় কান্না-কাটি। শিশুর কান্না শোনে প্রতিবেশীর ঘর থেকে চিৎকার শুরু করেন শিশুর মা, কে কোথায় আছেন, এগিয়ে আসুন, আমার সন্তানকে ছেলে ধরায় নিয়ে যাচ্ছে। চতুরপাশে হৈ-চৈ, চিল্লা-চিল্লি, শত মানুষের হাক-ডাক, মূহুর্তে বাড়িতে হাজির হাজার মানুষ। জেগে ওঠা ঘুমন্ত শিশু আরও আতঙ্কিত। চিৎকার দিয়ে দরজার কাছে। মানুষের ঠেলা-ঠেলি, মায়ের আহা-জারি আর দরজায় ধাক্কা-ধাক্কিতে শিশুর একটি আঙ্গুল থেতলে যায়। গুজব রটলো ছেলে ধরা। আগমন থানা পুলিশের। ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রচার হলো অজ্ঞাত ব্যক্তি কর্তৃক শিশুর আঙ্গুল কেটে নেয়ার অভিযোগ। ঘটনাটি পঞ্চগড় জেলায় ঘটেছে। সম্প্রতি বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশ পেয়েছে একটি সংবাদ। এক মসজিদের ঈমাম, যিনি মাদরাসার শিক্ষকও বটে। তিনি জ্বীনের ভয় দেখিয়ে তার পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৭ জন নারী শিশুকে ধর্ষণ করেছে। ভয়ংকর এই ধর্ষক র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর, তার কু-কৃতির ফিরিস্তীর বর্ণনা দিয়েছে।

বগুড়ার এক মাজার ঘিরে প্রায়ই জ্বীনের বাদশার আর্বিভাব বহুদিন ধরে ঘটে আসছে। প্রত্যন্ত গ্রামই নয়, এখনো শহরের শিক্ষিত মানুষরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে, টিয়া পাখি ভাগ্য গণনা করতে পারে। সাপুড়িয়ার দেয়া তাবিজ-কবজ গলায় পড়লে সাপে কামড়াবে না।

তেলপড়া, পানিপড়া, লবণপড়ায় রোগ বালাই দূর হয়। যাত্রাপথে হোঁচট খাওয়া অমঙ্গল। কথার মাঝে টিকটিকির শব্দ ইতিবাচক, প্যাঁচার ডাক ক্ষতিকর। সূর্য বা চন্দ্র গ্রহণের সময় খাওয়া-দাওয়া অমঙ্গল। শনিবারে দূরের যাত্রা বিপদ ডেকে আনে। মঙ্গলবারে বাঁশঝাড়ের বাঁশ কাটা গুরুত্বর ক্ষতির বিষয়। মাজারে সিন্নী কিংবা আর্থিক অনুদান দিলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন। পরীক্ষার দিন ডিম খেলে পরীক্ষায় খাতায় গোল্লা অর্থ্যাৎ শূণ্য পাওয়া যায়। এসমস্ত লোকাচারের অন্ধকার থেকে জাতির আজও পরিত্রাণ ঘটেনি।

কবির ভাষায়, “যে জাতি জীবন হারা অচল অসাড়/পদে পদে বাঁধে তার জীর্ণ লোকাচার।” সম্প্রতি বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছেলে ধরার গুজব এমন ভাবে ছড়িয়েছে যে, আল্লাহর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠজীব, মানুষ দ্বারা গণপিটুনির শিকার হয়ে নির্মম ভাবে নিহত হয়েছেন ১০ জন। নিহতরা মস্তিষ্ক বিকৃত (পাগল)। কর্মক্লান্ত জেলে, কঠোর পরিশ্রমী রিক্সা-ভ্যান চালক।

স্কুলে সন্তান ভর্তি করতে আসা মা, সন্তানকে দেখতে যাওয়া বাক প্রতিবন্ধী বাবা, মানসিক প্রতিবন্ধী নারী, নিছক পথচারী, মাদকাসক্ত অসুস্থ ব্যক্তিসহ অপরিচিত লোকজন। আইন শালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে ২০১৮ সালে সারাদেশে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ৩৯ জন। ২০১৯ জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত গণপিটুনিতে নিহত হন ৩৬ জন। ‘গুজব’ জন্মের রহস্য কোথায়? অন্ধত্ব, কু-সংস্কার, ধর্মীয়গোড়ামী, আধুনিক শিক্ষার অভাব, রাজনৈতিক স্বার্থন্বৈষী মহলের কু-প্রবৃত্তি। গত ০৩ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার ১১ পাতায় প্রকাশিত একটি শিরোনাম ছিল, “কুড়িগ্রামে ছেলে ধরার গুজবে কাঠুরিয়াকে মারপিট।”

শিরোনামের সারসংক্ষেপ, গত বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রামের উলিপুরে পল্লী উন্নয়ন রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের আব্দুল মমিন নামক এক শিক্ষক, গুজব রটিয়ে আলাউদ্দিন নামক এক কাঠুরিয়াকে মারধর শুরু করেন। একপর্যায় নিরীহ কাঠুরিয়া গণপিটুনির শিকার হয়, মূমুর্ষ কাঠুরিয়া আলাউদ্দিনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। থানা পুলিশ গুজবের শ্রষ্টা আব্দুল মমিনকে গ্রেফতার করেছে। অজ্ঞাত আরও ৫ জনের নামে থানায় মামলা হয়েছে। একজন শিক্ষক আলোকিত মানুষ সৃষ্টি করার কথা, অথচ তিনিই গুজব সৃষ্টি করে মানব হত্যার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি করলেন! এই বিকৃত রুচির পঁচন ধরা মানবটির পথ প্রদর্শক কে? তা কি আমরা খুঁজে পেয়েছি বা পাওয়ার চেষ্টা করেছি? কু-সংস্কার, অন্ধত্ব, গুজব, লোকাচার শুধু আমাদের দেশেই নয়।

উন্নত বিশ্বের জাপান এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও রয়েছে। জাপানের কিছু অঞ্চলের মানুষরা এখনো বিশ্বাস করেন, তাদের পিতা-মাতা যে তারিখে মারা গেছেন; প্রতিবছর ওইদিন বা তারিখে মৃত পিতা-মাতার আত্মা কোন একটি রূপ ধারণ করে তাদের বাড়িতে আগমন করবেন এবং মৃত আত্মার মনে যা চাবে তা নিয়ে যাবে। যে কারণে তাঁরা পিতা-মাতার মৃত্যু দিবসে তাদের ঘরের দরজা খোলা রাখেন। উন্নত দেশ হওয়ায় তাদের বাড়ির কোন ক্ষয়ক্ষতি হয় না।

তবে সুযোগ সন্ধানীরা এই লোকাচারকে কেন্দ্র করে চুরি-চামারী ঠিকই করে। জাপানে লোকাচার, অন্ধত্ব থাকলেও সে দেশে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার কারনে সে দেশে একেবারেই গুজব নেই। ভারতে এখনও জ্যোতিষী শাস্ত্রের প্রতি বিশ্বাস করে দেশটির সিংহভাগ জনমানুষ। গত বছর ভারতের গুজবের জঘন্য বহি:প্রকাশ ঘটে গো-মূত্র পানের হিড়িকের মধ্য দিয়ে। এই গুজবের কারনে দুধের চেয়ে গো-মূত্রের দাম বেড়েছিল চারগুণ। একই ভাবে অজ্ঞ মুসলিম কান্ট্রি হিসাবে বিশ্ব দরবারে পরিচিত লাভ করেছে বাংলাদেশ, দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে চাঁদে দেখার মত গুজব ছড়ানোর মধ্য দিয়ে।

বর্তমানে হন্ডুরাস, বাংলাদেশ ও ভারতসহ পৃথিবীর বহু দেশে এডিসমশা বাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এই এডিসমশার জন্ম রহস্য সবাই জানেন। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, জমে থাকা নর্দামার আবর্জনা, পঁচনশীল ডাস্টবিন, পরিত্যক্ত টায়ার-টিউবে জমে থাকা পানি, ফুলের টবে সাধারণত এডিস মশার জন্ম। এগুলো জানার পরেও আমরা এখনও সভ্যতার আলোতে পৌঁছিনি। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা আমাদের জন্মগত অভ্যাস। বাংলাদেশের মত উর্বর মাটিতে এডিসমশা জন্ম হওয়া কথা না।

ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় বাংলাদেশের মাটিতে সোনা ফলে, এই দেশে শিঁয়াল-বাদুরের মল থেকে ‘জাম’-‘কাঁঠাল’এর গাছ গজায়। মাটি খুড়লেই সু-স্বাদু পানি বের হয়। নদী-নালা পুকুর ডোবায় অলৌকিক ভাবে মাছ পাওয়া যায়। অথচ এই পুষ্টিকর ফল-ফসলের দেশের রন্ধে-রন্ধে, অন্ধত্ব, কু-সংস্কার, গুজব, গজব, হুজুগে-সুযোগের মত মহামারীর জন্য দায়ী কে? গত ১৫ দিন আগেই সংবাদপত্রে জেনেছি, হন্ডুরাসে ৫৫ হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত, ৪৫ জন মারা গেছেন। ভারতে আক্রান্ত ৭’শ জন। মালেশিয়া বৃষ্টি প্রবণ দেশ হওয়ায় প্রতিবছর সে দেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হন শত শত মানুষ। লেখাটি তৈরির প্রাক্কালে বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ২১ হাজার, মৃত ১৪ জন।

৬৪ জেলার সব জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। ঈদের সময় এই ডেঙ্গু গ্রামের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা জানিয়েছেন আমাদের দেশের হুজুগ বিশেষজ্ঞরা। ওইসময় ঢাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ গ্রামে ফিরবে। ফলে সঙ্গে আনা ডেঙ্গু জ্বর ছড়িয়ে পড়বে। (তাদের কথা মত) এডিসমশা নিয়ে উচ্চ আদালতে রীট হয়েছে। ঢাকার ২ সিটিতে মশা মারার জন্য ৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দের খবর প্রকাশ হয়েছে। ডেঙ্গু রোগকে কেন্দ্র করে সরকার দল ও সরকার বিরোধী দলের দায়িত্ববান ব্যক্তিরা দায়িত্ব জ্ঞানহীন কথাবার্তা, অভিযোগ, রসিকতা করে যাচ্ছে। প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর অভিযোগ বাংলাদেশ থেকে এডিসমশা ভারতে যাচ্ছে।

সব মিলিয়ে বিষয়টি যেমন হাস্যকর, তেমনি ছেলে ধরা গুজবের নামান্তরও বটে। এডিস মশা রয়েছে বিশ্বাস করি, ভাইরাস জনিত ডেঙ্গু জ্বর রয়েছে রূঢ় সত্য। তবে যে হারে প্রচার-প্রচারণা হচ্ছে, তার সাথে বাস্তবতার কতটা মিল সেটাই বড় কথা। সম্প্রতি এক রসিক জন ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, “শাহজাহান পুরে ডেঙ্গু মশা সন্দেহে এক নিরীহ মশাকে মেরে ফেলা হয়েছে।” ৩ এপ্রিল আমার এক শিশু নাট্যকর্মীকে সর্তক করতে গিয়ে শুনতে হয়েছে, “ঢাকা থেকে এতদুরে ডেঙ্গু মশা আসতে পারবে না।” তার এই কথায় কোনো রসিকতা নেই।

তবে তার বিশ্বাস ও মনোবল তাকে চাঙ্গা রাখবে। প্রশ্ন, হাজার হাজার মানুষ তা হলে হাসপাতালে ভীড় জমাচ্ছে কেন? এদেশের জনমানুষ ছোট-খাঁটো জ্বর-সর্দির মত অসুখে ডাক্তার কাছে যান না। নিজেরাই ঔষুধের নাম বলে ফার্মেসী থেকে ক্রয় করেন এবং খেয়ে থাকে। এতে রোগও ভালো হয়। তবে যা বিজ্ঞান সম্মত নয়। এধরনের কাজের সাথে এদেশের প্রায়ই ৭৫% শতাংশ মানুষ জড়িত। এটাও এক ধরনের অন্ধত্ব। ঋতু বৈচিত্রের বাংলাদেশে এই সময়ে জ্বরের প্রকোপ বাড়বে এটাই সত্য। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু হাওয়ার আতঙ্কে এখন আর কেউ নিজের চিকিৎসা নিজে করছে না।

ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন। ফলে হাসপাতাল গুলোতে ভীড় হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই বলে, সারাদেশে এডিসমশা ছড়িয়ে পড়েছে, ডেঙ্গু রোগের মহামারী দেখা দিয়েছে; এমনটি গুজব না হলেও বাস্তবতার সাথে যে মিল নেই, তা দৃঢ়তার সাথে বলা যায়। কারণ জনশ্রুতি ও হুজুগের দেশে যে কোন ইস্যু কে কেন্দ্র করে মুনাফা লোটার মত মানুষের অভাব বাংলাদেশে নেই। ১৫০-১৮০ টাকার টেস্টিংকীট বেঁচা-কেনা হচ্ছে ৪৫০/৫০০ টাকায়। মশারির দাম বেড়েই চলছে।

ডেঙ্গু কোনো জটিল রোগ নয়। চর্মা বিষেশজ্ঞদের মতে, এর প্রতিকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, শরীরে রসুন মেশানো নারকেল তৈল মাখানো। রোগ হওয়ার পর প্রচুর পানি খাওয়া, সেলাইন খাওয়া, এন্টিবায়োটিক ওষুধ না খেয়ে প্যারাসিটামল ওষুধ খাওয়া, ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণসহ পর্যাপ্ত বিশ্রাম। খাবার-দাবার স্বাভাবিক, তবে পেঁপের পাতার জোস, ভাতের সাথে করল্লার তরকারি খুবই উপকারি। এমনটি বলেছেন মালয়েশিয়া ফেরত এমসময়কার ডেঙ্গু আক্রান্ত এক রোগী। হাসপাতালে ভর্তি সবাই ডেঙ্গু রোগী এটা যেমন বিশ্বাস করতে পারছি না, তেমনি মৃত ব্যক্তিরা সবাই কি ডেঙ্গু রোগে মারা গেছেন তাও মনে করছি না।

কারণ একজন রোগাগ্রস্থ মানুষ যেমন তার আত্ম-বিশ্বাসের বলে ৮০% শতাংশ সুস্থ থাকেন, তেমনি একজন ভীরু, আতংকিত মানুষ দুর্বল চিত্তের ভয়ংকর রোষানলে পড়ে ৯৯% শতাংশ মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ে। যা হয়েছে, হচ্ছে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। কারণ বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা সাহসী মানব সম্পদ সৃষ্টিতে মূখ্য ভূমিকা রাখতে পারছে না। সভ্য পৃথিবীর এই অঞ্চলে এধরনের কু-সংস্কার, অন্ধত্ব, গুজব ছড়িয়ে পড়ার কারণ কি? নেদারল্যান্ডের পথচলা মন্ত্রীরা কেন রাস্তায় পড়ে থাকা মলমূত্র নিজ হাতে পরিষ্কার করেন? সুইজারল্যান্ডের জেলখানাগুলো কেনো আজ শিশু পার্কে পরিণত হয়েছে? এগুলো নিয়ে কি আমরা কোনো গবেষণা করেছি? তার কারণ খুঁজতে চেয়েছি? গুজব ছড়িয়ে পড়ার জন্য দায়ী এই অঞ্চলের গতানুগতিক শিক্ষা পদ্ধতি।

অপরদিকে নেদারল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ডসহ উন্নত বিশ্বের অর্থনৈতিক ও মানবিক উন্নয়নের মূল পথ প্রদর্শক তাদের গবেষণালব্ধ টেকসই শিক্ষা পদ্ধতি। বাংলাদেশে শিক্ষা নীতি রয়েছে। কিন্তু শিক্ষার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে শিক্ষা পদ্ধতি কি ধরনের হওয়া উচিত, তা গবেষণালব্ধ নয়। সময়ের ঘুর্ণায়নে, যখন যে সরকার এসেছে, সেই তার মত করে শিক্ষার মত জাতির প্রাণটাকে নিয়ে টানা-হেঁচড়া করেছেন। গুণগত মানের শিক্ষা অর্জনের টানা-হেঁচড়ায় পড়ে, জাতির শিক্ষা নামক ‘মেরুদ-’ বিকল হয়ে পড়েছে। অন্ধত্ব, কু-সংস্কার, কু-শিক্ষার ফলে সৃষ্ট গুজব, হুজুগে-সুযোগে আইন হাতে তুলে নেয়ার মত গর্হিত জঘন্য কাজকে কেন্দ্র করে দেশের মহান ব্যক্তিরা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ইলেট্রনিক্স মিডিয়ার টকশোতে স্পষ্টত্বই বলেছেন (১) মানুষ বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখতে পারছেন না (২) মানুষের মনে প্রচ- ক্ষোভ দানা বাঁধার কারনে আইন হাতে তুলে নিচ্ছে (৩) সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার কারনে এমনটি হচ্ছে (৪) নানাবিধ হতাশার কারনে মানুষ হিংস্র হয়ে উঠেছে।

তাঁদের এধরনের মন্তব্য, ধারণার যৌক্তিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া মুস্কিল। তবে লর্ড কার্জনের আমলে রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথদের সাহসীকতায় মানব কল্যাণে ‘সতীদাহ প্রথা’ বিলুপ্ত এবং বিধবা বিবাহের মত ধর্মীয় গোড়ামী খড়ক ঠেকানো গেছে। বর্তমানে আমাদের দেশের গ্রাম্য শালিসের নামে মোড়লদের জাহেলী যুগের মত অত্যাচার দমন সম্ভব হয়েছে। আইন হাতে তুলে নেয়ার মত গুজব, হুজুগ-সুযোগে যেমন অন্ধত্ব রয়েছে, তেমনি আইন না জানাও অন্ধত্বের নামান্তর।

প্রশ্ন, দেশের প্রতিটি বাড়িতে একজন করে শিক্ষিত ছেলে-মেয়ে থাকার পরও কেনো এমনটি হচ্ছে? গত ২৪ জুলাই জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকার এক উপ-সম্পাদকীয়তে ড. আতিউর রহমান বলেছেন, “দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সরকার ও সমাজের রয়েছে ব্যাপক অভিজ্ঞতা। সারা পৃথিবী আমাদের দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য সমাধানের প্রতীক হিসাবে গণ্য করে। কিছুদিন আগে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন এসেছিলেন বাংলাদেশে।

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার বিরল অভিজ্ঞতার সূত্র ধরে, তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ হতে পারে সারা বিশ্বের জন্য শিক্ষক।” তেমনি ২০৪১ সালের মধ্যে পৃথিবীর কেউ একজন বলবেন, ‘বাংলাদেশ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট মানব সম্পদের দেশ, যে দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি পৃথিবীর জন্য অনুকরণীয়।’ এজন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, পরস্পর বিরোধী বক্তব্য, মনগড়া কথাবার্তা বর্জন এবং মানবিক গুণাবলীর নৈতিক চরিত্রের অধিকারী, সাহসী এবং দেশ প্রেমিক মানব সম্পদ গঠন করে সমাজ থেকে কু-সংস্কার, গুজব, হুজুগ-সুযোগ সৃষ্টির মত মানসিক ভাইরাস দূর করতেই গবেষণালব্ধ সময় উপযোগী মৌলিক শিক্ষা চালু এখন সময়ের দাবী।

লেখক : সাংবাদিক, কলামনিস্ট, শিশু সংগঠক ও নাট্যকার।