স্টাফ রিপোর্টার : বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী থেকে গ্রেফতার আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন মেলেনি হাইকোর্টে।

মিন্নির পক্ষে করা জামিন আবেদনের ওপর শুনানি বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিকালে মিন্নির আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। আদালত এ সময় জামিন কেন দেয়া হবে না- সে বিষয়ে রুল জারি করতে চাইলে এর বিরোধিতা করেন মিন্নির আইনজীবীরা। পরে তারা জামিন আবেদন প্রত্যাহার করে নেন।

এর আগে মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) জামিন আবেদন শুনানি পিছিয়ে বৃহস্পতিবার দিন নির্ধারণ করেন হাইকোর্ট। ওইদিন আবেদনকারী আইনজীবীকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, মিন্নির জামিন আবেদন শুনতে বেশি সময় লাগবে; তাই সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার শুনানি করবেন।

আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তার সঙ্গে ছিলেন আইনুন নাহার সিদ্দিকা, মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম ও জামিউল হক ফয়সাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির।

গত সোমবার শুনানিতে মিন্নির পক্ষে আইনজীবী জেড আই খান পান্না আদালতকে বলেন, এটি খুবই দুঃখজনক একটি ঘটনা। এ মামলায় আমি চাক্ষুষ সাক্ষী অথচ মামলার ১২ নম্বর আসামির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে আসামি করা হয়েছে। অবশ্যই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা।

ওইদিন শুনানির একপর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতের কাছে সময় আবেদন করে বলেন, এ মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল বক্তব্য রাখবেন। এ জন্য সময় প্রয়োজন। পরে শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ঠিক করেন আদালত। মঙ্গলবার নির্ধারিত দিনে জামিন শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হলে বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করেন আদালত।

সোমবার সকালে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় মিন্নির জামিন চেয়ে বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের পক্ষে আবেদন করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না।

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও তাদের দমাতে পারেননি। গুরুতর আহত রিফাতকে ওইদিন বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও পাঁচ-ছয়জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

গত ১৬ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরসহ মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করতে বরগুনা পুলিশ লাইন্সে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টায় মিন্নিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এরপর ১৭ জুলাই বিকেল ৩টার দিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিন্নিকে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে মিন্নির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী।

গত ২২ জুলাই বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রথমবার মিন্নির জামিনের আবেদন করেন অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। পরে ওইদিনই শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এরপর ৩০ জুলাই ফের জামিন আবেদন করেন মিন্নি। এ আবেদনও নামঞ্জুর করেন আদালত।

আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৫ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে মিন্নিসহ ১৫ জন অভিযুক্তই রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এছাড়া এ মামলার এজাহারভুক্ত চার আসামি এখনও পলাতক।

(ওএস/এসপি/আগস্ট ০৮, ২০১৯)