স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী লীগের এমপি মন্ত্রীদের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (৯ আগস্ট) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশ উন্নত হচ্ছে বলেই ডেঙ্গু হচ্ছে, যে দেশ যতবেশি উন্নত হচ্ছে সে দেশে ততবেশি রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডেঙ্গু এলিট শ্রেণির মশা।’ তিনি আরও বলেছেন- ‘সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক ও কোলকাতায় ডেঙ্গু দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ যেহেতু এখন উন্নত হচ্ছে, তাই এখানেও ডেঙ্গু হচ্ছে।’

মন্ত্রীর এহেন বক্তব্য শুনে এগুলোকে ‘টক অব দি সেঞ্চুরি’ বলবো নাকি ‘শক অব দি সেঞ্চুরি’ বলবো, এ নিয়ে দ্বিধায় আছি। আসলে ডেঙ্গু নয় আওয়ামী লীগের এমপি মন্ত্রীদের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করা দরকার। তারা সকালে এক কথা বিকেলে আরেক কথা বলছেন।

শুক্রবার (৯ আগস্ট) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘মধ্যরাতের নির্বাচন করে আওয়ামী মন্ত্রীসভায় এডিস মশা বিস্তারের মতো গবুচন্দ্রের মন্ত্রীদেরও বিস্তার ঘটেছে। দেশব্যাপী যেমন এডিস মশার বিস্তারে কোনো বিরতি দেখা যাচ্ছে না, ঠিক তেমনি নবকলরবে গবুচন্দ্র মন্ত্রীদেরও হাসি-তামাশা উদ্রেককারী কথাবার্তারও কমতি দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী কোন ব্যুরো থেকে উল্লিখিত তথ্যসমূহ সংগ্রহ করেছেন তা জানালে দেশবাসীর উপকার হতো। দেশ উন্নত হলে যদি রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায় তাহলে লন্ডন, নিউইয়র্ক, প্যারিস, কোপেনহেগেন ইত্যাদি উন্নত শহরগুলোতে ডেঙ্গুতে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাতো। এহেন মন্ত্রীদের উদ্ভট বোলচালে জনজীবন ডেঙ্গুর মতোই বিপর্যস্ত।

তিনি বলেন, 'তবে মন্ত্রী বোধহয় আসল কথাটি বলতে চেয়েছেন একটু অন্যভাবে যে, উন্নয়নের নামে দুর্নীতির বিপুল পরিমাণ টাকা পকেটস্থ হলেই ডেঙ্গুর মতো প্রাণবিনাশী বালা মুসিবত দেশে বিস্তার লাভ করে। মশা নিধনের টাকা লুটেপুটে খেয়েছে মেয়ররা। সুতরাং আর্থিক উন্নতি হয়েছে মন্ত্রী-মেয়রদের, দেশের কোনো উন্নয়ন হয়নি। ডেঙ্গু নিয়ে স্ববিরোধী, বিপরীতধর্মী কথাবার্তা, রাতের কথার সঙ্গে সকালের কথার গরমিল, ইত্যাদি এ ধরনের কথা থেকে সিকি-আধুলি ও গোটা মন্ত্রী কেউই কম যাচ্ছেন না। ওবায়দুল কাদের সাহেব কয়েক দিন আগে বলেছেন যে, সবাই ঈদে বাড়ি যাবেন কোনো অসুবিধা নাই। গতকাল আবার বলেছেন-বাড়ি যাবার আগে রক্ত পরীক্ষা করে যাবেন।

বিবিসিকে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘বিবিসির সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন-এডিস নিয়ে মিডিয়ার বাড়াবাড়িতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। মূলত: মেয়র থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা এমনকি প্রধানমন্ত্রীও ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের দুঃখ-দুর্দশাসহ বিভিন্ন দুর্যোগে ঠাট্টা মশকরা করছেন। অথচ সারাদেশে হাসপাতালগুলোতে কোনো ঠাঁই নেই। ডেঙ্গু রোগীতে ছেয়ে গেছে সব হাসপাতাল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও রক্ত পরীক্ষা করতে পারছে না রোগীরা। কেউ কেউ অনেক কষ্ট করে রক্ত পরীক্ষা করেও রিপোর্ট পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যেদিন রিপোর্ট দেয়ার কথা বলা হয়, সেদিন রোগীরা রিপোর্ট পান না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও রিপোর্ট নিয়ে প্রচণ্ড দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ডেঙ্গু রোগী ও তাদের পরিবারকে। আবার হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেও সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে অসংখ্য শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ। হাসপাতালে বেড না পেয়ে মেঝেতে কাতরাচ্ছে শিশুরা। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার কোনো সক্ষমতা নেই এই সরকারের। উন্নয়নের নামে পকেট ভারি করার জন্যই আজকে ডেঙ্গুর মতো এ দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার অক্ষম।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনও গুরুতর অসুস্থ। বারবার ইনস্যুলিন পরিবর্তন এবং ইনস্যুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি করার পরেও কোনো অবস্থাতেই তার সুগার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কোনো কোনো সময় এটি ২৩ মিলিমোল পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে খাবারের পরিমাণ অনেক কমিয়ে দেয়াতে শরীরের ওজন অনেক হ্রাস পেয়েছে। যথাযথ চিকিৎসার বিষয়ে বারবার দাবি করা সত্ত্বেও দেশনেত্রীকে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি উন্নত দেশের কোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। ব্যাথার কারণে রাতে তার ঘুম হচ্ছে না এবং সারাক্ষণ তিনি অস্থির থাকছেন। দেশনেত্রীর সুস্থ জীবন প্রত্যাশা করছে দেশবাসী। কিন্তু সরকারের নির্মম আচরণে নিরাশ হয়ে পড়েছে তারা। কারাগারে নেয়ার সময় সুস্থ বেগম জিয়াকে এখন হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হয়। দেশবাসী দেশনেত্রীর জীবনের পরিণতি নিয়ে এখনও অজানা আতঙ্ক ও শঙ্কার মধ্যে রয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকার দেশনেত্রীর জীবন নিয়ে মাস্টারপ্ল্যানে ব্যস্ত। এ মাস্টারপ্ল্যান হচ্ছে-গণতন্ত্রের ধ্বংসস্তুপের ওপর জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নির্মূল করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অন্যের কাছে বিকিয়ে দেয়া। মধ্যরাতের এ সরকার নতুন কাশিমবাজার কুঠি সৃষ্টি করে দেশের মানুষকে পরাধীন করতে এক সর্বনাশা পথে হাঁটছে বলেই গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রোগে-শোকে, ব্যাথা-বেদনায় জর্জরিত রেখে কারাগারে আটকে রেখেছে। তার জামিনে বাধা দেয়া হচ্ছে। আদালতের কথাতেই মনে হচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া কিছু হবে না।

তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে দেশবাসী এবং বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরকে পবিত্র ঈদুল আজহার প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ঈদুল আজহার পূর্বেই মুক্তি দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এসপি/আগস্ট ০৯, ২০১৯)