রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : গত ২২ জুলাই সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাঁড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত দু’ আসামী বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার মুখ্য বিচাািরক হাকিম মোস্তফা পাভেল রায়হানের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

জবানবন্দি দাতারা হলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুচপুকুর গ্রামের খায়বার ইসলামের স্ত্রী সাবিনা খাতুন ও একই এলাকার শাহাজান আলীর ছেলে মুকুল।

সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক মহিদুল ইসলাম জানান, গত ২২ জুলাই সকাল ১১টার দিকে আগরদাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলামকে হাজামপাড়া মোড়ে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

এ ঘটনায় নিহতের ছেলে ইনামুল হক বাদি হয়ে ঘটনার দিনেই কারো নাম উল্লেখ না করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় কাশেমপুরের দোলোয়ার হোসেন, কুচপুকুরের সাবিনা খাতুৃন ও মুকুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহষ্পতিবার মুখ্য বিচারিক হাকিমের কাছে সাবিনা ও মুকুল নিজেদেরকে হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা ঘোষণা করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারেক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

জবানবন্দিতে সাবিনা ও মুকুল উল্লেখ করে যে, মুকুলের ভাই হাবিবুর রহমান ও বালিয়াডাঙার আনিছুর রহমান ২০১৩ সালে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়। তাদের পরিবারের সদস্যরা মনে করে যে এসব হত্যা কাণ্ডে নজরুলের হাত ছিল। এ ছাড়া নজরুল তাদের জমি দখল, গাছ কেটে ছয়লাব ও একের পর এক মামলা দেওয়াসহ তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করছিলেন। তার হয়রানি ও নির্যাতনের কারণে পুরুষ সদস্যরা দীর্ঘদিন বাড়ি ছাড়া। এ কারণে নজরুলকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২২ জুলঅই সকাল ১১টার দিকে নজরুলকে দু’জন মিলে গুলি করে হত্যা করেন। নজরুল কদমতলা থেকে মোটর সাইকেলে আসার সময় কুচপুকুর এলাকার দু’জন হত্যাকারিদের আগে থেকেই জানিয়ে দেয়।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সাবিনা ও মুকুলের পাশাপাশি কুচপুকুর গ্রামের আশরাফুন্নাহার নামের এক সাক্ষী মুখ্য বিচারিক হাকিমের কাছে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছে। নজরুলের বাবা নেছার আলীকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দুর্বৃত্তরা হত্যা করে। ২০০৫ সালের ৫ ডিসেম্বর নজরুলের বড় ভাই সিরাজুলকে বাড়িতে ঢুকে গুলি ও বোমা মেরে হত্যা করা হয়। ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল সিরাজুলের ছেলে যুবলীগ নেতা রাসেল কবীরকে শহরেররাজার বাগানের ভাড়া বাসার সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সব ঘটনা রাজনৈতিক বিরোধের চেয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টার ঘটনাই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়।

এদিকে স্থানীয় দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, নজরুল হত্যার ঘটনায় ঢাকার সাভার হতে আনছার সদস্য সাতক্ষীরা সদরের বল্লী গ্রামের সোহাগ হোসেনকে ঢাকার পুলিশের সহায়তায় গত ৩০ জুলাই আটক করে সদর থানায় আনা হয়। পরদিন সোহাগ হোসেনকে দিয়ে তার খালাত ভাই সিরাজুল হত্যা মামলার আসামী সিঙ্গাপুরে বহুতল ভবনে কাজ করতে যেয়ে পঙ্গু হয়ে যাওয়া মুকুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে চুপড়িয়া গ্রামের রেজাউল দালালের ছেলে ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালক শিমুলকে আটক করে দু’দিন জিজ্ঞাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়।

মুকুলের মোবাইল কললিষ্ট যাঁচাই করার পর গত ৬ আগষ্ট রাতে দেবহাটার বহেরা থেকে কুচপুকুরের খায়বারের স্ত্রী সাবিনা খাতুন, মেয়ে জবা খাতুন, সোহরাবের ছেলে জিয়াউর রহমান, মধুর ছেলে আবু সাঈদ ও ছোট খোকনের ছেলে জুয়েলকে জিজ্ঞাবাদের জন্য পুলিশ আটক করে। এদের মধ্যে জিয়াউর রহমান ও জবাকে পুলিশ মুক্তি দেয়। সাবিনাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায়। অন্যদের পরিণতি সম্পর্কে তারা জানতে পারেননি।

জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক মহিদুল হক শনিবার বিকেল সাড়ে চারটায় এ প্রতিনিধিকে বলেন, নজরুল হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। সোহাগ, জুয়েল ও সাঈদ তাদের জিম্মায় আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যেয়ে বলেন, সাক্ষী হিসেবে তাদেরকে নির্ধারণ করা হয়েছে।

(আরকে/এসপি/আগস্ট ১০, ২০১৯)