স্টাফ রিপোর্টার: ঈদের দিন সোমবার দুপুরের পর থেকে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে কাঁচা চামড়া ঢুকতে শুরু করেছে। ট্রাকে ট্রাকে ট্যানারিতে ঢুকছে বিপুল পরিমাণ কাঁচা চামড়া। তবে এতো চামড়া কোথায় থেকে আসছে তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।

এদিকে, কোরবানির পশুর চামড়ার দাম বেঁধে দিয়েই দায়িত্ব শেষ সরকারের। মাঠপর্যায়ে তা মানা হচ্ছে কিনা তার কোনো তদারকি ছিল না কর্তৃপক্ষের। এ অবস্থার সুযোগে স্মরণকালের সর্বনিম্ন দামে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশুর চামড়া। রাজধানীতে নির্ধারিত দামের অর্ধেকেও চামড়া বিক্রি করতে পারেননি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এজন্য ট্যানারি মালিকদের দোষ দিচ্ছেন তারা। যদিও তা অস্বীকার করে দরপতনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন।

জানা যায়, কোরবানিকে কেন্দ্র করে সারাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ পশুর চামড়া কেনেন কয়েক লাখ মৌসুমি ব্যবসায়ী। কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে ট্যানারিতে ঢুকে। কিন্তু এবার তা হয়নি। সারাদেশের অর্ধেক পশুর চামড়াও কেনেননি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেকেই পশুর চামড়া পুঁতে ফেলেছেন আবার কেউ কেউ নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি অনেকেই রাস্তায় পশুর চামড়া ফেলে প্রতিবাদও করেছেন।

এ অবস্থায় মঙ্গলবার সরেজমিনে সাভারের ট্যানারিতে গিয়ে দেখা যায়, ট্রাকে ট্রাকে ট্যানারিতে ঢুকছে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এসব চামড়া ট্যানারিতে নিয়ে আসছেন। কিন্তু কোথায় থেকে এসব চামড়া ট্রাকভর্তি করে আনা হচ্ছে তা জানায়নি সংশ্লিষ্টরা।

রাজধানীর মিরপুর থেকে চামড়া বিক্রি করতে আসা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সাভারের ভুলুয়া ট্যানারিতে চামড়া দিতে এসেছি। কিন্তু আসার পর ট্যানারির লোকজন অজুহাত দেখিয়েছে চামড়ার সাইজ ছোট, এগুলো রাখা যাবে না। রাখলেও কম দাম দেবে। মূলত ট্যানারি মালিকরা কম দাম দেয়ার জন্য এমন কৌশল অবলম্বন করেছেন।

চামড়া ব্যবসায়ী মো. আবুল বাশার বলেন, বিশ্ববাজারে চামড়ার ক্রেতা কম। এজন্য চামড়ার দাম কম এমন দোহাই দিচ্ছেন ট্যানারি মালিকরা। তবে কি কারণে বিদেশি ক্রেতা আগের চেয়ে কম এটা সরকার ও ট্যানারি মালিকরা বলতে পারবেন।

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জানান, আমাদের সব পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে বসেছে এবার। রাজধানীতে বেঁধে দেয়া দামের অর্ধেকে নেমেছে কাঁচা চামড়ার দাম। প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া যিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে। গড়ে প্রতিটি ছাগলের চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। ট্যানারি মালিকদের চামড়া কেনার অনীহার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সাভারের ভুলুয়া ট্যানারি লিমিটেডের সুপারভাইজার শাহ আলম বলেন, গত বছুরগুলোতে দুই থেকে আড়াই হাজার টাদা দর থাকলেও ট্যানারি স্থানান্তরের পর এখন ৫ থেকে ৬ শত টাকা চামড়া কিনতে কষ্ট হচ্ছে ট্যানারি মালিকদের। এছাড়া বিশ্ববাজারে বিশেষ করে চায়নাতে মালের চাহিদা কম থাকায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে।


বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, চামড়ার কম দামের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো হাত নেই। যারা আড়তদার তারাই বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন। সরকারের বেঁধে দেয়া দাম দিয়ে আড়তদারের কাছ থেকে চামড়া কিনছি আমরা।

তিনি আরও বলেন, গত কোরবানির ঈদের মৌসুমে প্রায় ৮০ লাখ পশুর চামড়া কেনা হয়েছিল। এবারও এমন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে সময়মতো ও সঠিক পদ্ধতিতে লবণ না দিলে চামড়া নষ্ট হওয়া আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে গত বছর প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে।