উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : কুমিল্লা থেকে তিন মাইল উত্তর-পূর্ব দিকে ক্যাপ্টেন মাহবুবের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের কংসতলা অবস্থানের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করে। তুমুল সংঘর্ষে কিংকতব্যবিমুঢ় পাকসেনারা পর্যুদস্তু হয়ে তাদের ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এই সংঘর্ষে একজন অফিসারসহ ৩০ জন পাকসৈন্য হতাহত হয়। অভিযান শেষে মুক্তিযোদ্ধা দল নিরাপদে নিজ ঘাঁটিতে ফিরে আসে।

৩নং সেক্টরের কটিয়াদীতে হাবিলদার আকমল আলীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদল পাকসৈন্য বোঝাই কয়েকটি মোটর লঞ্চকে এ্যামবুশ করে। এই এ্যামবুশে পাকবাহিনীর কয়েকটি লঞ্চ বিধ্বস্ত হয়ে পানিতে ডুবে যায় এবং ১৪৩ জন পাক সৈন্য নিহত ও অনেকে আহত হয়।

বগুড়ায় সৈয়দ ফজলুল আহসান দিপুর নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী সারিয়াকান্দি থানার নিকটবর্তী রামচন্দ্রপুর গ্রামে পাকহানাদারদের একটি দলকে ধলাপাড়া ঘাটে আক্রমণ করে। এতে ৩০ জন পাকসেনা নিহত ও বহু আহত হয়। অপরদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম শহীদ হন এবং কাদের সিদ্দিকী আহত হন।

নিজামউদ্দিন লস্কর ময়নার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদল সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে জয়কলস সেতুর কাছে পাকহানাদারদের আক্রমণ করে। এতে পাসেনারা পাল্টা আক্রমণ চালায়। ১২ ঘন্টা ব্যাপী এ যুদ্ধে ৯ জন পাকসেনা নিহত ও ১০ জন আহত হয়। যুদ্ধে অধিনায়কসহ ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়।

ফেনীতে পাকবাহিনীর দু‘টি শক্তিশালী প্লাটুন নাগাইশের দিকে অগ্রসর হলে সুবেদার নজরুল ও সুবেদার মুনিবের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী তাদের ওপর আকস্মিক আক্রমণ চালায়। এতে ২৫ জন পাকসেনা নিহত হয়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নয়াদিল্লীতে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্কটজনিত পরিস্থিতি স্বাধীনতার পর ভারতের জন্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বিপুল শরণার্থীর চাপে ভারতের অর্থনীতি সঙ্কটের মুখে।

সামরিক শাসক ১৪ জন জাতীয় পরিষদ সদস্যকে ২২ আগস্ট সকাল ১০টার মধ্যে নাটোরে ২নং সেক্টরের উপ-সামরিক আইন প্রশাসকের আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দেয়। এঁরা হচ্ছেন: রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, মতিউর রহমান, মফিজ আলী মোহাম্মদ চৌধুরী, মোঃ আজিজুর রহমান, শাহ মাহতাব আহমেদ, মুজিবুর রহমান, মোতাহার হোসেন তালুকদার, আবদুল আউয়াল, আবদুল মোমিন তালুকদার, আবু সাঈদ, এ.বি.এম. মোকসেদ আলী ও অধ্যাপক মোঃ ইউসুফ আলী।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নিয়মিত কথিকা “বিশ্বজনমত”:

............পৃথিবীর দেশে দেশে শান্তিকামী মানুষ দেশবরেণ্য জননেতা, বুদ্ধিজীবী সমাজ, বেতার, টেলিভিশন ও সংবাদপত্র পাকিস্তানি নরঘাতী তস্করদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে।

...............
‘ওয়াশিংটন স্টার’ পত্রিকার এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়: শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার প্রহসন শুরু করে পাকিস্তানের মূঢ় সামরিক চক্র এক প্রচন্ড ভুল করে বসেছে। ইয়াহিয়া আর তার সাঙ্গপাঙ্গদের একথা বোঝা উচিত যে নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মর্যাদা প্রশ্নাতীত।
‘ক্রীশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর’ পত্রিকার এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়: শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা।...........পাকিস্তানের জঙ্গী সামরিক চক্র বিচার প্রহসনের দ্বারা যদি তাঁর কিছু করে, তাহলে পাকিস্তান বাংলাদেশ থেকে যে চিরতরে বিদায় হবে তা নয় বরং মূল পাকিস্তানটাই চ’র্ণ হয়ে যাবে।
যুগোশ্লাভ দৈনিক ‘বেলগ্রেড বোরবা’ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়: শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার প্রহসন করতে গিয়ে ইয়াহিয়া তার নিজের সমস্যার সমাধানের সকল পথই রুদ্ধ করেছে। এখন অন্ধকারে মাথা কুটে মরা ছাড়া তার আর দ্বিতীয় কোন পথ নেই।
‘জাকার্তা টাইমস’ এর প্রতিবেদনে বলা হয়: শেখ মুজিবুর রহমান হলেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় নেতা। তার বিচার প্রহসন চালাতে গিয়ে ইয়াহিয়া পাকিস্তানের সর্বস্ব খোয়ানোর ঝুঁকি নিয়েছে। ইয়াহিয়া আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা ভুল ঘোড়ায় বাজি ধরেছে।

তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
(ওএস/এএস/আগস্ট ১৬, ২০১৯)