স্টাফ রিপোর্টার: ডেঙ্গু আতঙ্ক নিয়ে হাসপাতালে ছুটে আসা রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমছে। গত দুই দিনে নতুন রোগী ভর্তি কমেছে ৫ শতাংশ। সারাদেশে ডেঙ্গু নিয়ে যেখানে হাসপাতালে ভর্তি ৬ হাজার ৭৩৩ জন, এরমধ্যে শুধু ঢাকাতেই ৩ হাজার ৪১৯ জন। তবে এ সংখ্যাও গত কয়েকদিনের তুলনায় ৭ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

রাজধানীর শ্যামলীর ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা কমেছে। তবে এখনও চাপ কমেনি প্যাথলজিতে। প্রায় আগের মতোই ভিড় লক্ষ্য করা গেছে হাসপাতাল দুটিতে। সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমুক আর না কমুক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক হারে কিছুটা কমেছে। কিন্তু প্যাথলজিতে ভিড় দেখে তা যেন বোঝার উপায় নেই। সুস্থ অনেকেই আতঙ্ক নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করছেন। নরমাল জ্বর হলেও ছুটে আসছেন হাসপাতালে এবং রক্তও পরীক্ষা করছেন।

সোমবার দুপুরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরে অসংখ্য রোগীর ভিড় দেখা যায়। অধিকাংশ রোগীরই জ্বর। যাদের দেখে ডেঙ্গুর আশঙ্কা জাগছে তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেয়া হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে ছিল দুটি সিভিসি পরীক্ষার মেশিন। ডেঙ্গুর কারণে আরও দুটি সংযোজন করে এখন চারটি মেশিনে চলছে সিভিসি পরীক্ষা। তবে ডেঙ্গুর চাপের কারণে একটি মেশিন রিজার্ভে রাখতে হচ্ছে। নইলে অধিকাংশ সময়ই আউট অব অর্ডার হয়ে যাচ্ছে মেশিন।

গত ১ আগস্টে ডেঙ্গু এনএস-১ পরীক্ষা করা হয় ৫২৪ জনের। এরমধ্যে রিপোর্টে পজিটিভ আসে ৯৮ জনের। যা মোট পরীক্ষার মাত্র ১৮ শতাংশ। তবে এর পরদিনই তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬.৬৮ শতাংশে। সর্বশেষ গতকাল রোববার ৩৭৭ জনের এনএস-১ পরীক্ষা করে মাত্র ৪৬ জনের রিপোর্টে পজিটিভ দেখা গেছে।

অন্যদিকে গত ১৮ দিনে ৩ হাজার ৩৯৫ জনের মধ্যে আইজিজি পরীক্ষায় ৮৮২ জন পজিটিভ, আর আইজিএম পরীক্ষায় ২৭২ জনের পজিটিভ আসছে। গত ১৫ আগস্ট ১৬৯ জনের আইজিজি পরীক্ষায় ৬৬ জন, ১৬ আগস্ট ১০৫ জনের মধ্যে ২৭ জন, ১৭ আগস্ট ২৪৯ জনের মধ্যে ৯৫ জন এবং গতকাল ১৮ আগস্ট ২৭৪ জনের মধ্যে ৮৫ জন পটিজিভ বলে রিপোর্ট ডেলিভারি দেয়া হয়েছে।

আইজিএম পরীক্ষায় ওই একই রোগীদের মধ্যে ১৫ আগস্ট ২ জন, ১৬ আগস্ট ৩ জন, ১৭ আগস্ট ৬ জন এবং ১৮ আগস্ট ৬ জনের আইজিএম রিপোর্টে পজিটিভ এসেছে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের এখানে ডেঙ্গু কমেছে কিছুটা। সে তুলনায় প্যাথলজির চাপ কিন্তু কমেনি। যে কারণে আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে আরও দুটি সিভিসি পরীক্ষার মেশিন চেয়ে আজ চিঠি পাঠিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে কিট দিয়ে ম্যানুয়ালিও পরীক্ষা করা হচ্ছে। ডেঙ্গুর কারণে প্লাটিলেট কমে যাওয়াসহ রক্তের সার্বিক অবস্থাটা জানতে সিভিসি একটি কমন পার্ট। ডেঙ্গুর কারণে সে চাপ আরও বেড়েছে। দুটি নতুন মেশিন সংযুক্ত করতে পারলে অতিরিক্ত চাপ সামলানো যাবে। আমাদের কোনো মেশিন নষ্ট হয়নি, চাপের কারণে আউট অব অর্ডার হওয়া মেশিনকে নষ্ট বলা যাবে না। রেস্ট দিলে ফের সচল হয়। '

অন্যদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুটি সিভিসি পরীক্ষার মেশিন রয়েছে ঢাকা শিশু হাসপাতালে। সেখানে মেশিনের বাইরে ডেঙ্গুজনিত পরীক্ষার এনএস-১, প্লাটিলেটও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে ম্যানুয়ালি।

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা শিশু হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম বলেন, ‘ভর্তি রোগীর সংখ্যা কমেছে। তবে প্রাথমিক চিকিৎসার রোগী কিন্তু তুলনামূলকভাবে বলার মতো কমেনি। প্যাথলজিতেও চাপ কমেনি।’

তিনি বলেন, ‘মেশিন সচল রয়েছে। তবে এখানে ম্যানুয়ালি পরীক্ষাকেও গুরুত্ব দেয়া হয়। কারণ মেশিনের চেয়ে ম্যানুয়াল পরীক্ষা বিশেষ কার্যকরী। ডেঙ্গু এনএস-১, প্লাটিলেটও পরীক্ষা করা হয় ম্যানুয়ালি।’

(ওএস/এএস/আগস্ট ১৯, ২০১৯)