আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বাংলাদেশি দালালদের দৌরাত্ম্যে বিপাকে পড়েছে ব্রুনাই। দেশটির বিভিন্ন কোম্পানি থেকে জাল ভিসা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিচ্ছে চক্রটি।

এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ঢাকায় ব্রুনাই দারুস সালামের হাইকমিশন বাংলাদেশি কর্মীদের চাকরি ভিসার আবেদন গ্রহণ বন্ধ রাখে। হাইকমিশন সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশি দালালদের সহযোগিতায় ব্রুনাইয়ের কিছু কোম্পানি জাল ভিসা দিচ্ছে। এ কারণে এ দেশের শ্রমিকদের চাকরির ভিসা আবেদন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছিল ব্রুনাই কর্তৃপক্ষ।

গত ৪ আগস্ট থেকে ব্রুনাইয়ের বাংলাদেশি শ্রমিকদের ভিসা আবেদন গ্রহণ বন্ধ করে দেশটির হাইকমিশন। এক সপ্তাহ বন্ধ রেখে গত সপ্তাহ থেকে ফের আবেদন গ্রহণ চালু করে তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাল ভিসা নিয়ে টাকা খরচ করে ব্রুনাইয়ে পৌঁছলেও বাংলাদেশি শ্রমিকরা সেখানে কোনো চাকরি পাচ্ছেন না। ফলে হতাশার মধ্যে পড়ছে তারা। কর্মহীন হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, ১৯৯২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৭৩ হাজারের বেশি বাংলাদেশি ব্রুনাইয়ে চাকরি নিয়েছেন। বর্তমানে দেশটিতে প্রায় ৩০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছে, যাদের বেশিরভাগ নির্মাণ খাতে।

ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৮ সালে প্রায় ৭৫ শতাংশ বাংলাদেশি কর্মীদের তথাকথিত ‘বডি কন্ট্রাক্টস’র মাধ্যমে বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের সহযোগিতায় দালালরা অবৈধভাবে ব্রুনাইয়ে পাঠিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে ব্রুনাই বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম উইং প্রবাসী কল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কেও বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে চিঠিও দেয়।

বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে দালালদের দৌরাত্ম্যের কারণে ব্রুনাইয়ের শ্রমবাজার হারাতে পারে বাংলাদেশ। দালালরা এতই শক্তিশালী যে, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে ছাড়পত্র ছাড়াই ব্রুনাইয়ে শ্রমিক পাঠায় তারা।

ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) জিলাল হোসেন এক চিঠিতে দালালদের দৌরাত্ম্যের বিষয়ে বলেন, ‘২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশি শ্রমশক্তি রফতানিতে ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা যায়। ২০১৬ সালের আগ পর্যন্ত ব্রুনাইয়ে কোনো বিদেশি নাগরিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারত না। ওই বছরের শেষ দিকে দেশটির সরকার স্থানীয়দের সাথে যৌথ মালিকানায় বিদেশিদের কোম্পানি খোলা ও ব্যবসা করার অনুমতি দেয়।

তিনি আরও বলেন, ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশিরা তিন হাজারের বেশি কোম্পানি চালু করে। বাংলাদেশি মালিকানাধীন কোম্পানির পাশাপাশি অসংখ্য অবাঙালি মালিকানাধীন কোম্পানি ব্রুনাইয়ের লেবার ডিপার্টমেন্ট ও ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের যোগসাজশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান না থাকা সত্ত্বেও প্রচুর ‘প্রবাসী শ্রমিক ভিসা’ বের করে এবং বাংলাদেশ থেকে এ দেশে শ্রমিক আমদানি করে। ফলে কর্মহীন উদ্বৃত্ত শ্রমিকের কারণে এ দেশের শ্রমবাজারে বেতন, শ্রমিক সুবিধা, ইন্স্যুরেন্স সুবিধা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক ধস নামে।

(ওএস/এএস/আগস্ট ২৪, ২০১৯)